ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক আলী হোসেন খুনের রহস্য উন্মোচন

টাকার জন্য ড্রাইভারের পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

টাকার জন্য ড্রাইভারের পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিপুল অঙ্কের টাকা নেয়ার জন্য গাড়ি চালকের পরিকল্পনায় হত্যা করা হয় ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যাপক আলী হোসেন মালিককে। দীর্ঘদিন ধরেই আলী হোসেনের গাড়ির চালক মাসুদ মল্লিক (৩৮) এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করছিল। শেষ পর্যন্ত বাড়ির দারোয়ানকে কোকের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে নির্মাণাধীন ভবনের চার তলায় আলী হোসেনের অফিস কক্ষে গিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ধারাল অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। তারপর অফিসে রাখা সিন্দুকের তালা খুলে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে ভোরে তিনজন বাসা থেকে পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার র‌্যাবের-৪ এর কার্যালয়ে এ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) খন্দকার লুৎফুল কবির। র‌্যাব জানায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের মূল হোতা আলী হোসেনের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মাসুদ মল্লিকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটক অন্যরা হলেন ভাষানটেক থানার ডিওএইচএসের নির্মাণাধীন ওই ভবন কর্মচারী সায়েদ ফরিক ওরফে সাইফুল (২২) ও তার চাচাত ভাই সুজন (১৮)। ১৭ অক্টোবর র‌্যাব-৪ এর একটি টিম বরিশালের গৌরনদী থানাধীন মাগুরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে থেকে সাইফুল ও সুজনকে আটক করেন। তাদের কাছ থেকে চুরি করা অর্থের এক লাখ ২৭ হাজার ৮৩২ টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন। একই দিনে রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার ইসিবি চত্বর এলাকা থেকে এ হত্যাকা-ের মূল হোতা মাসুদকে আটক করা হয়। মাসুদ প্রায় এক বছর ধরে নিহত আলী হোসেন মালিকের গাড়ি চালাত। হোসেন মালিক সৈয়দ গ্রুপ অব কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাই বিভিন্ন সময় কনস্ট্রাকশনের কাজের জন্য ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে অফিসে রাখতে। এসব খবর শুধু তার গাড়ি চালকই জানতেন। হত্যার কিছুদিন আগে তিনি এক সঙ্গে ১৯ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন। আর তখন থেকেই মাসুদের নজর পড়ে ওই টাকার ওপর। কিভাবে ওই টাকা আাত্মসাত বা চুরি করা যায় সে পরিকল্পনা করত মাসুদ। মাসুদ এসব বিষয়ে ভবনের কর্মচারী সাইফুলের সঙ্গে আলোচনা করতে। হত্যার কিছুদিন আগে সাইফুলের চাচাত ভাই সুজনও আসে। পরে তিনজন মিলে এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনা করেন। এ হত্যাকা-ের নেতৃত্ব দেয় মাসুদ মল্লিক। উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর বনানী ডিওএইচএস-এর ২ নম্বর সড়কের ৫৩/এ অফিস কক্ষে ইডেনের সাবেক এই শিক্ষক খুন হন। এ ঘটনায় ভাষানটেক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্বজনরা। পরে র‌্যাব ও পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের অধিনায়ক খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, শিক্ষকতা থেকে অবসরে যাওয়ার পর আলী হোসেন সৈয়দ গ্রুপ অব কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হিসেবে কাজ করতেন। কাজের চাপ বেশি থাকলে তিনি মাঝে মাঝে অফিসেই থাকতেন। এই কোম্পানির মালিক ও তার ছেলে মালয়েশিয়াতে থাকেন। ১১ অক্টোবর ঘটনার দিনও তারা দেশের বাইরে ছিলেন। ঘটনার পর আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। তদন্ত করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই। তিনি বলেন, ৯ অক্টোবর আলী হোসেন একটি ব্যাংক থেকে ১৯ লাখ টাকা তোলেন। গাড়িচালক মাসুদ তা দেখতে পায়। যখনই তিনি টাকা তুলতেন-তা গাড়িচালক জানত। সে দীর্ঘদিন ধরে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি খেয়াল করত। সে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে। সেদিন ৯ অক্টোবরও টাকা তোলার পর নিজের গাড়িতে করেই বনানীর অফিসে যান আলী হোসেন। এরপর গাড়িচালক ওই ভবনটির কেয়ারটেকার মোঃ সায়েদ ফকির সাইফুল ও তার চাচাত ভাই সুজন টাকা হাতিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করে। ওইদিন বিকেলে বাড়িতে থাকা অন্যান্য কর্মচারী বাবুর্চি আলমগীর হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড মোঃ জুয়েল, বাসার কুকুর পালনকারী আশিকুল ও সেলিমকে কোকের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। যাতে তারা রাতে ঘুমিয়ে থাকে। ৯ অক্টোবর রাতে আলী হোসেন অফিসে থাকেননি। তিনি বাসায় চলে যান। এরপর ১১ অক্টোবর আবারও অন্যান্য স্টাফদের কোকের সঙ্গে তারা ফের ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাইফুল ও সুজন আলী হোসেনের দরজা নক করে। দরজা খোলার পরই তারা ভেতরে প্রবেশ করে দুজন মিলে হাত-পা বেঁধে মুখে কসটেপ লাগিয়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এরপর ওই কক্ষ থেকে নিচতলার অফিস কক্ষের ও সিন্দুকের চাবি নিয়ে আসে। এ সময় গাড়িচালক মাসুদ নিচেই ছিল। সিন্দুক থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয়। তারা ফের চার তলায় গিয়ে আলী হোসেনের মানিব্যাগ থেকে ২৫০০ টাকা নেয়। তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ার করার পর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চাবি দিয়ে গেটখুলে সাইফুল ও তার চাচাত ভাই সুজন বাসা থেকে বের হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে তারা হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। হত্যার বর্ণনা দিয়েছে। আমরা তাদের বক্তব্য যাচাই বাছাই করছি। সায়েদ ফকির সাইফুল ও তার চাচাত ভাই সুজন ঘটনার পর তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী চলে যায়। সেখান থেকেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। অপরদিকে গাড়ি চালক মাসুদ মল্লিককে ক্যান্টনমেন্ট থানার ইসিবি চত্বর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
×