ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওদের আগমন থেমে নেই ॥ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র

মিয়ানমার কথা রাখছে না ঝুলে গেছে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মিয়ানমার কথা রাখছে না ঝুলে গেছে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমার সরকার কথা দিয়েও সে দেশের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না। ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সরকারী উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধি দলের বৈঠকে দু’মাসের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বৈঠকে সে দেশের পক্ষে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান খিয়াউ এ ঘোষণা দেন। এ সময় তার নেতৃত্বাধীন সে দেশের প্রতিনিধি দলও ছিল। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহিদুল হক প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। দীর্ঘ ২ বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও মিয়ানমারের পক্ষে তাদের সে ঘোষণা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার সরকার ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ নিয়ে যে কোন ধরনের আলোচনা বা সমঝোতা বা প্রত্যাবাসনে এখন চূড়ান্তভাবে অনাগ্রহী। এর কারণ অজ্ঞাত। অপরদিকে, স্থল ও সমুদ্রপথে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলেও সম্পূর্ণভাবে তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। স্থানীয় কিছু দালাল মিয়ানমারের দরিদ্র রোহিঙ্গাদের পরিবারগুলো থেকে মাথাপিছু অর্থ নিয়ে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশকারী যারা ধরা পড়ছে বিজিবির পক্ষ থেকে তাদের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান শেষে সে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় ফাঁক-ফোকরে কেউ কেউ বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে জনবসতি এলাকায় মিশে যাচ্ছে। বিজিবি সূত্রে স্বীকার করা হয়েছে, একেবারে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে একথা বলা যাবে না। কারণ রোহিঙ্গাদের শারীরিক কাঠামো চেহারা ভাষা সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশীদের অনুরূপ হওয়ায় এদের সহজে চিহ্নিত করা কঠিন। আর যখন এ অনুপ্রবেশকারীরা টেকনাফ, উখিয়া, হ্নীলা, রামু ও কক্সবাজার শহর এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে পৌঁছে যায় তখন খুব বেশি কিছু করার থাকে না। এ ছাড়া এসব রোহিঙ্গাদের আত্মীয়স্বজন এদেশে যেমন রয়েছে, সীমান্তের ওপারেও অনুরূপ রয়েছে। সঙ্গতকারণে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক কড়াকড়ি ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও শতভাগ সফলতা আসছে না। তবে একথা সত্য যে, ইতোপূর্বেকার তুলনায় বহুগুণে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ হয়েছে। বিজিবি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের এসব রোহিঙ্গা নাগরিকদের, মাদক ও ইয়াবা চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির সকল সদস্য ২৪ ঘণ্টা টহল দিয়ে থাকে। এছাড়া মিয়ানমার সরকার তাদের সীমান্ত অঞ্চলজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। কিন্তু প্রায় ৬০ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত পয়েন্ট রয়েছে অরক্ষিত। যে কারণে এসব খোলা পথের গোপন স্থান দিয়ে এরা অনুপ্রবেশ করছে। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক জানিয়েছেন, বালুখালী ঘুনধুম এলাকার সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। এ সড়ক বাস্তবায়ন হলে সেখানে দেয়া হবে কাঁটাতারের বেড়া। এতে তারা আশা করছেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান কার্যক্রম রোধ হবে। এদিকে, টেকনাফ ও উখিয়ায় দুটি শরণার্থী আশ্রয় ক্যাম্পে তাদের সেবায় নিয়োজিত কয়েকটি এনজিও সংস্থা এবং রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন আরএসও ক্যাডারদের ইন্ধনে বিনাশ্রমে খেয়ে দেয়ে বেঁচে থাকা উপার্জনের পথ সৃষ্টির কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত অতিক্রমে আগ্রহী করে যাচ্ছে।
×