ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে নিকটাত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সৌদিতে নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে নিকটাত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ বন্ধ

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগ সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটির শ্রম ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সৌদিতে নারী কর্মীদের ওপর নানা নির্যাতনের খবরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্মী নিয়োগের নতুন প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগের কথা বলা হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ নতুন প্রস্তাবে নারী কর্মীর সঙ্গে পুরুষ কর্মী নিতেও রাজি হয়। তারা কিছুসংখ্যক কর্মী নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী নিয়োগও দেয়। হঠাৎ করে নারী গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সঙ্গে আর পুরুষ কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে না দেশটি। এখন তারা নারী কর্মী নিয়োগও বন্ধ করে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সৌদি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের গোড়ার দিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামীকেও কর্মী হিসেবে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে সৌদি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রাজি হয়ে বেশকিছু নারী কর্মীকে তারা নতুন নিয়মে নিয়োগও দিয়েছে। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নারী কর্মীদের সঙ্গে তার স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছে। পুরুষ কর্মী সঙ্গে থাকলে নারী কর্মীরা অনেক ক্ষেত্রে বিপদমুক্ত থাকতে পারেন। কিন্তু গত মাসে হঠাৎ করে সৌদি কর্তৃপক্ষ ওই পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা শুধু নারী কর্মী নিয়োগ করবে। নারী কর্মীর সঙ্গে স্বামী বা নিকটাত্মীয় পুরুষ কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে নারী কর্মীদের সঙ্গে তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরুষ কর্মী নিয়োগ করেছে। ড্রাইভার, গৃহস্থালির কাজ ও নার্স পদে নিয়োগের সুযোগ পেতেন। এখন এসব পদে পুরুষ কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। সৌদিতে নারী কর্মী নিয়োগ নিয়ে ‘ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স ফর মাইগ্রেশনস রাইটস বাংলাদেশ’ মনে করে, সৌদিতে নারী নির্যাতন ব্যাপকহারে বেড়েছে। সেখানে একজন নারী কর্মীকে শুধু গৃহস্থালির কাজই করতে হয় না, তাকে গৃহকর্তাসহ ওই বাড়ির যত পুরুষ আছে তাদের যৌনদাসী হিসেবেও কাজ করতে হয়। যদি এ কাজে তারা রাজি না হন তাহলে তাদের ওপর চলে শারীরিক নির্যাতন। দীর্ঘদিন ধরে সৌদিতে এমন অবস্থা চলে আসছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে কোন নারী কর্মী যাতে নির্যাতনের শিকার না হন সে উদ্যোগ নেয়। জানা গেছে, বিশ্বের বেশ কযেকটি দেশে গৃহকর্মী হিসেবে নারী কর্মীদের নিয়োগ দেয়ার চুক্তি হয়েছে। সৌদি আরব প্রতি বছর এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী নিযোগ করবে। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যাই বেশি থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে নারী কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অনেক নজির রয়েছে। যদি স্বামী সঙ্গে থাকেন তাহলে মহিলা কর্মীরা অনেকাংশে নিরাপদ হবেন। তাদের সন্তান থাকলেও সেখানে নিয়ে যেতে পারবেন। এমন একটি প্রস্তাব এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দিয়েছিল। জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলো এ প্রস্তাব মেনেও নেয়। কিছু কর্মী নতুন নিয়মে সৌদিসহ কয়েকটি দেশে গেছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নারী কর্মীদের নিরাপত্তার বিধান করেছিল। নিরাপত্তার অভাবে ২০১৫ সালের শেষদিকে সৌদি আরবে একজন নারী কর্মীও যাননি। পরে সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের প্রস্তাবে রাজি হয়ে নতুন নিয়মে কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশটির শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিদ আবা আল খাইল বলেছেন, অন্য দেশের কর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য বাংলাদেশী নারী কর্মীদের সঙ্গে পুরুষদের নিয়োগ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। তবে নারী কর্মী নিয়োগে কোন বাধা নেই। বাধা না থাকার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সৌদিতে নারী কর্মীও নিয়োগ হচ্ছে না।
×