ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ডিজিটাল কার্যক্রম ॥ মুখ থুবড়ে পড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যশোরে ডিজিটাল কার্যক্রম ॥ মুখ থুবড়ে পড়েছে

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ মুথ থুবড়ে পড়েছে ‘ডিজিটাল যশোরে’র ‘নন্দিত ডিজিটাল কার্যক্রম’। হাতের মুঠোয় নাগরিক সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এসব প্রকল্প চালু করা হয়। তবে সেই প্রকল্প এখন আর জনগণের সেবায় কাজে আসছে না। টেলিমেডিসিন সেন্টার বন্ধ ও অধিকাংশ ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্রে অনলাইন বিদ্যুত বিল পরিশোধ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। জেলা তথ্য বাতায়নে সরকারী- বেসরকারী জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য হালনাগাদ নেই। অনলাইনে পড়চা সংগ্রহে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সরকারী দফতরগুলোতে ন্যাশনাল ই সার্ভিস সিস্টেম (নেস) কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। অধিকাংশ অফিসে এনালগ পদ্ধতিতে দাফতরিক কার্যক্রম সম্পাদন করা হচ্ছে। অর্থাৎ ডিজিটাল যশোরের স্বীকৃতি অর্জনে যেসব নন্দিত প্রকল্প ভূমিকা পালন করেছিল সেগুলো বর্তমানে ঝিমিয়ে পড়েছে। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর যশোর সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা, যশোরকে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল জেলা’ হিসেবে ঘোষণা করেন। ডিজিটাল যশোরের বাস্তবায়িত অনেক প্রকল্প সারাদেশের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে যশোরের সেই নন্দিত প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভোগান্তি ছাড়াই বিদ্যুত বিল পরিশোধ কার্যক্রম চালু হলেও তৃণমূলের মানুষ সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সূত্রমতে, জেলা প্রশাসন ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে যশোর সদর, শার্শা, ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ৫২টি ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে এবং মণিরামপুর কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার ২২টি কেন্দ্রে ৫টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে বিদ্যুত বিল পরিশোধ কার্যক্রম শুরু করা হয়। শুরুতে ব্যাপক সাড়া পড়লেও বছর তিনেকের মাথায় নানা সমস্যায় মুখ থুবড়ে পড়ে এই কার্যক্রম। জেলা প্রশাসনের মনিটরিংয়ের অভাব ও বিদ্যুত বিভাগের উদাসীনতা এবং উদ্যোক্তাদের ফাঁকিবাজির কারণে এ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। কয়েকটি উপজেলার একাধিক ইউডিডিস উদ্যোক্তা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুত বিভাগের সহযোগিতার অভাবে অনলাইনে বিদ্যুত বিল পরিশোধ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে বিল পরিশোধের শেষ দিনে ভোগান্তি পোহাতে হয়। গ্রাহকের দেয়া বিল আমরা অনলাইনে সাবমিট করতে গেলে জমা দিতে পারি না। পরে আমাদের জরিমানা করা হয়। পকেটের টাকা দিয়ে জরিমানা পরিশোধ করতে হয়। গ্রাহকদের সঙ্গেও অবিশ্বাস তৈরি হয়। এজন্য বন্ধ করে দিয়েছি। কার্যক্রম বন্ধ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার আবদুল মান্নান বলেন, গ্রাহকরা ৫ টাকার বিনিময়ে বিদ্যুত বিল পরিশোধ করে থাকেন। গ্রাহকরা বিল পরিশোধ করলেও অনেক সময় টাকা জমা হয় না। একই সঙ্গে আশপাশে ব্যাংক থাকায় গ্রাহকরা অনলাইনে বিল জমা দিতে নিরুৎসাহিত হন। তবে খুব তাড়াতাড়ি এ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার সালাউদ্দিন আল বিথার বলেন, সমিতির আওতায় ২২টি ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে অনলাইনে বিদ্যুত বিল পরিশোধ কার্যক্রম চালু ছিল। সফটওয়্যার পরিবর্তনের কারণে ওই সেন্টারগুলোর কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ আছে। পুনরায় চালু হবে এ কার্যক্রম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (আইসিটি) সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, কয়টি ইউডিসিতে এই কার্যক্রম চালু ছিল। আর কয়টি বন্ধ ছিল সেটি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব। এজন্য একটু সময় লাগবে। যশোর জেলা তথ্য বাতায়নে দেখা গেছে, যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নামের তালিকায় ফয়েজ আহমেদ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি), সহকারী পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন ও মিলু মিয়া বিশ্বাসের নাম রয়েছে। অথচ ওই তিন কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন কয়েক বছর আগে। তাদের স্থানে যোগ দিয়েছেন শহীদ আবু সরোয়ার, ভাস্কর সাহা। আর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বণিক। তিনি বদলি হয়েছেন কয়েক মাস হলো। তার স্থানে যোগ দিয়েছেন আহমেদ কবীর। গত শুক্রবার পর্যন্ত ওই দফতরের তথ্য আপডেট ছিল না। একই অবস্থা ছিল যশোর পৌরসভার মেয়রের ছবি ও তথ্যে। সেখানে পুরাতন মেয়র মারুফল ইসলামের ছবি থাকলেও বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদারের তথ্য রয়েছে জেলা তথ্য বাতায়নে বিভিন্ন দফতরের তথ্য হালনাগাদ না থাকায় বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলেও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমার জানা মতে অনলাইন বিদ্যুত বিল পরিশোধ কার্যক্রমের ২/৩টি সেন্টার বন্ধ রয়েছে। বাকিগুলো চালু আছে। আর অনেকগুলো সেন্টার বন্ধের বিষয়টি আমার জানা নেই। টেলিমেডিসিন সেন্টার বন্ধ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, আমি আসার পর টেলিমেডিসন সেন্টার বন্ধ পেয়েছি। সেটি চালুর সম্ভাবনা নেই। জেলা তথ্য বাতায়ন প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা তথ্য বাতায়নে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর প্রতি মাসে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের তথ্য হালনাগাদ করার কথা।
×