ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল সিলেট, ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট ॥ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও মেঘনা-দাউদকান্দিতে ভোগান্তি

পথে পথে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পথে পথে দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পথে পথে যানজটের ভোগান্তি নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ঢাকার মানুষ। সকাল থেকেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবক’টি মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। কোথাও কোথাও পরিবহন চলাচলে ধীরগতি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের প্রায় পুরো অংশেই দিনভর যানজট ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৬০ কিলোমিটারের বেশি যানজটে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। ঢাকা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানবাহন চলাচলে ধীরগতি থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের যাত্রীদের। সিলেট মহাসড়কেও যানজটের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, সড়ক দুর্ঘটনাও দুই লেনের ব্রিজ যানজটের মূল কারণ। মহাসড়কে যানজটের কারণে বাস আাসতে বিলম্ব হওয়ায় অগ্রিম টিকেট কাটা বাস যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্রবল স্রোতে ফেরিঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ মেঘনা-দাউদকান্দি ঘাটের দু’পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে শত শত পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী পরিবহন পারাপারের আশায় দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢল নেমেছে ঘরমুখো মানুষের। অগ্রিম টিকেট নেয়া যাত্রীরা কাল থেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। সকালে দুই ঘণ্টা পরে ছেড়ে গেছে রংপুর এক্সপ্রেস। স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ট্রেনটি দুই ঘণ্টা বিলম্বে আসায় ছাড়তেও দেরি হয়েছে। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে প্রথম দিনেই বিলম্বে ছেড়েছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস শেষে রাজধানীর অফিস পাড়ায় ছুটির আমেজ দেখা যায়। সবার মধ্যেই বাড়ি যাবার তাড়া ছিল। কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ॥ আনুষ্ঠানিকভাবে ছুটি শুরু না হলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে রাজধানীবাসী। ঈদের আগে রেলযাত্রা শুরু হয়েছে বুধবার বিকেল থেকেই। যারা অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন ঠিক তারাই যাত্রাপথের সঙ্গী। শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সকালেও কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে অন্যদিনের তুলনায় বেশি ভিড়। সকালে স্টেশনে গিয়ে হাজার হাজার যাত্রীকে প্লাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। দীর্ঘযাত্রা পেরিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আশায় সেই ভিড় খুব একটা গ্রাহ্য করছেন না তারা। প্ল্যাটফর্মে আসার অপেক্ষায় ছিল রাজশাহী এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহগামী ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস, সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস। কেবল রংপুর এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে আসেনি। সকাল ৯টায় ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও সোয়া ১০টা পর্যন্ত কমলাপুরে দেখা যায়নি ট্রেনটিকে। সর্বশেষ দুই ঘণ্টা বিলম্বেও ট্রেনটি প্ল্যাট ফরমে আসে। দুই ঘণ্টা পর আবার ছেড়ে যায়। কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার বলেন, রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়া বাকি সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে। এই ট্রেনটি আসতে বিলম্ব হওয়ায় ছাড়তেও দেরি হয়েছে। বাকি ট্রেনগুলোও নির্ধারিত সময়েই ছেড়েছে বলে জানান তিনি। প্রতিদিন ৬৯টি ট্রেন কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। বেলা ১২টা পর্যন্ত ২০টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। ঈদযাত্রায় প্রতিবছর ট্রেনের শিডিউল নিয়ে ভোগান্তি হলেও এবার পরিস্থিতি অন্যরকম বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা। সবগুলো ট্রেনই যাত্রীবোঝাই করে রওনা হয়েছে। বেশি ভিড় হচ্ছে উত্তরবঙ্গের ট্রেনে। খুলনাগামী ট্রেনেও যাত্রীর চাপ আছে। শুক্র ও শনিবার আরও ভিড় বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি। সপ্তাহব্যাপী নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করছে সড়ক বিভাগ ॥ আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে সড়কপথে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে। আজ ৯ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত দিন নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম চলবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএর এলেনবাড়ির (তেজগাঁও) সদর দফতরে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষের টেলিফোন নম্বর : ০২-৯১৩০৬৬২, মোবাইল নম্বর : ০১৯৬৬৬২২০১৯ এবং ০১৭৩০৭৮২৯৪৬। সড়ক-মহাসড়কে যানজট, রাস্তার সমস্যাসহ ঘরমুখো মানুষের যে কোন সমস্যা উল্লেখিত নম্বরে কন্ট্রোল রুমে জানানো যাবে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ॥ জনস্বার্থ বিবেচনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে যানজট নিরসন ও যাত্রীসাধারণের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে ঈদের আগে তিনদিন এবং ঈদের পরের ৩ দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টস সামগ্রী, ওষুধ, কাঁচা চামড়া এবং জ্বালানি বহনকারী যানবাহনসমূহ এর আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহনে কোরবানির পশু পরিবহন উৎসমুখে নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদানসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে অনুরোধ করা হয়েছে। দৌলতদিয়ায় ছয় কিলোমিটারজুড়ে যানজট ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী থেকে জানান, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় ৪টি ফেরিঘাটের মধ্যে ২টি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করায় এ ঘাটে নদী পাড়ের অপেক্ষায়-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ বাজার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কে যাত্রীবাহী পারিবহন, কোরবানির পশু বোঝাই ট্রাক, কার, মাইক্রোসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন রয়েছে। সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে এই যানবাহনের ভিড় ততই বাড়ছে। পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত আর ঢেউ এর কারণে ২ এবং ৩ নম্বর ফেরিঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় বেশ কয়েকদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকা ৩ নম্বর ফেরিঘাটটির জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের কাজ করে গতকাল রাত ১টার দিকে এ ঘাট দিয়ে ফেরিতে যানবাহন পারাপার শুরু করার ২ ঘণ্টা পরই তীব্র স্রোত আর ভাঙ্গনের কারণে ঘাটের পল্টুন ধসে গেলে এ ঘাটটি দিয়ে যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ। ১ এবং ৪ নম্বর ফেরিঘাট চালু থাকলেও এ দুটি ঘাটে স্রোতের কারণে বড় ফেরিগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক-এ্যাম্বুলেন্স-কার-মাইক্রোসহ ছোট গাড়িগুলো ফেরিতে পাড় করায় এ পথের যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে দীর্ঘ সময় নদী পাড়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি থেকে জানান, মেঘনা সেতুতে গাড়ি বিকল আর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গত তিনদিনের যানজটের রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর থেকে মেঘনা-গোমতী সেতু পাড় হয়ে সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ যানজটে ঈদে ঘরমুখো মানুষ, পণ্যবাহী যানবাহন ও কোরবানি পশুর গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে পড়ে আছে। দাউদকান্দি ও গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের গাড়িগুলো মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় দুই লেনে পরিণত হয়। যার ফলে গাড়িগুলো ধীরগতিতে সেতু দুটি পার হতে হয়। এ ধীরগতিতে পার হওয়ার সময় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। গত তিন দিনের যানজটের রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার রাতে মেঘনা সেতুর ওপর অতিরিক্ত মালবোঝাই একটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়লে এ দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ গাড়িটি সরিয়ে নিলে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু ঈদে অতিরিক্ত মালবোঝাই লক্কর-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানগুলো সেতু ওপর দিয়ে ধীরগতিতে চলাচলের ফলে যানজট আরও দীর্ঘ আকার ধারণ করে। যার ফলে সারা দিন থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে গৌরীপুর থেকে ঢাকামুখী চার লেনে এ যানজট তীব্র। গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট শাহ জামান রাজ বলেন, একদিকে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ অন্যদিকে লক্কর-ঝক্কর গাড়ির মালিকগণ লাভের আশায় পুরনো গাড়িগুলো অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সেতু ওপর দিয়ে খুব ধীরগতিতে ওঠে। আবার লক্কর-ঝক্কর গাড়িগুলো কোন মতে সেতু ওঠার মাঝ পথে বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, চার লেনের গাড়িগুলো দুই লেন সেতুর ওপর দিয়ে ধীরগতিতে যাওয়ার সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকল্পভাবে নির্মাণধীন মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলেই আর যানজট থাকবে না। তাছাড়া মহাসড়কে ওজননিয়ন্ত্রক (স্কেল) মিশিন না থাকায় চালকরা অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়িগুলো সেতুর ওপর উঠেই বিকল হয়ে পড়ে। যার কারণেই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল আউয়াল বলেন, যানজট স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দাউদকান্দি ও গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ রিপোর্ট প্রেরণ পর্যন্ত যানজট অব্যাহত রয়েছে। বাসের জন্য টার্মিনালে দীর্ঘ অপেক্ষা ॥ আগের রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস কুমিল্লায় জটের কারণে রাজধানীতে ফিরতে দেরি হওয়ায় ঈদযাত্রার শুরুতেই বাস টার্মিনালে দীর্ঘ প্রতীক্ষায় কাটাতে হচ্ছে চট্টগ্রামের পথের যাত্রীদের। চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও কক্সবাজারের বিভিন্ন পরিবহনের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দাউদকান্দি ও মেঘনাঘাট এলাকায় যানজটের কারণে তাদের অনেক বাস দুপুর পর্যন্ত ঢাকায় ফিরতে পারেনি। ফলে সকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও আশপাশের বিভিন্ন কাউন্টারে এসে নির্ধারিত বাস না পেয়ে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের। স্টার লাইনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান জানান, তাদের গাড়ি যানজটে আটকে থাকায় আসতে দেরি হচ্ছে। তাই যাত্রীদের তারা কোন ‘আশার কথা’ শোনাতে পারছেন না। একই চিত্র দেখা গেছে এনা পরিবহনের মানিকনগর কাউন্টারে। সকাল ৭টায় যে বাস ছাড়ার কথা, বেলা পৌনে ১২টার সময়ও তার দেখা মেলেনি। উত্তরের পথে মহাদুর্ভোগ ॥ টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) এশরাজুল হক জানান, করোটিয়ায় একটি লরি বিকল হলে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে যানজটের সূত্রপাত হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশ থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত সড়কে সকাল ৭টা পর্যন্ত তীব্র যানজট হয়। ফলে ঢাকা এবং উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের চেষ্টায় সকাল ৭টার পর থেকে জট খানিকটা কমে আসে। কিন্তু দুপুরেও ওই সড়কে যানবাহন চলছিল ধীরগতিতে। পরিদর্শক এশরাজুল বলেন, লরি বিকল হওয়ার পাশাপাশি গাড়ির বাড়তি চাপও যানজটের একটি কারণ। অনেক গাড়ি পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে পার না হতে পেরে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আসছে। ফলে ঢাকামুখী রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাছাড়া কোরবানির পশু নিয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার দিকে আসছে ট্রাক। ফিটনেসবিহীন গরুবাহী গাড়িগুলোর ধীরগতি সড়কে জট বাড়াচ্ছে। গোড়াই হাইওয়ে থানার এলেঙ্গা ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যানজটের তীব্রতা কমেছে। কিন্তু গাড়ির চাপ বেশি, দ্রুত এগোতে পারছে না। গাজীপুরের নাওজোর থেকে চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পর্যন্ত সড়কে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সালনা মহাসড়ক থানার ওসি মোঃ হোসেন সরকার। সড়কে যানবাহনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বলেন, বুধবার সারা দিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে ১৯ হাজার ৫০০ গাড়ি গেছে। আর বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকেই গাড়ির সংখ্যা ২৯ হাজার ৭০০ ছড়িয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জ অংশে যানজট ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ১৫ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে তীব্র যানজন সৃষ্টি হয়েছে। সোনারগাঁয়ের মেঘনা ব্রিজ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে। যানজটের কারণে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন রাস্তায় আটকা পড়ে। এতে ঈদ ঘরমুখো যাত্রীদের চরম বিড়ম্বনায় পড়তে বাধ্য হয়। ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, মেঘনা ও কাঁচপুর ব্রিজের ওপর কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে পড়লে যানজটের সূত্রপাত হয়। শিমরাইলে কর্মরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মোল্লা তাসলিম জানান, বৃহস্পতিবার শেষ রাত থেকে মেঘনা ব্রিজের ওপর ৫-৬টি গাড়ি ও কাঁচপুর ব্রিজের ওপর ৩ গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। বেলা ১১টা পর্যন্ত যানজট অব্যাহত ছিল। মুন্সীগঞ্জের যানজট ॥ স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট থকলেও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানজট তেমন ছিল না। গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট মোঃ কামারুজ্জামান রাজ জানান, যানজট নিরসনে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় বিলম্ব হচ্ছে। মহাসড়কের দাউদকান্দি অংশেও যানজট থাকায় নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তবে যানজট নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে পুলিশ। বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শাহ খালেদ নেওয়াজ জানিয়েছে, ড্রেজিংয়ের কারণে চ্যানেলের গভীরতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার চ্যানেলটি খুলে দেয়া হয়েছে। এতে এক সঙ্গে ফেরি আসা যাওয়া করতে পারছে।
×