ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নৌ শ্রমিক ধর্মঘট পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা কাটেনি

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৮ আগস্ট ২০১৬

নৌ শ্রমিক ধর্মঘট পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা কাটেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৌ ধর্মঘটের ৫ম দিনেও একই অবস্থা বিরাজ করেছে শনিবার। যাত্রী পরিবহন অনেকাংশে স্বাভাবিক থাকলেও পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা কাটেনি। শনিবার সন্ধ্যায় শ্রম পরিদফতরে ধর্মঘট প্রত্যাহারে মালিক শ্রমিকদের বৈঠক চলছিল। এদিকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারে নৌপরিবহনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন এতে অন্তত ১৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘট চলছে। এ ধর্মঘটের ৫ম দিনে শনিবার সদরঘাট অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে আগের দিনের মতোই যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৩৭টি লঞ্চ শনিবার সকালে সদরঘাটের বিভিন্ন জেটিতে ভিড়েছে। আর টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে পাঁচটি লঞ্চ। তবে সন্ধ্যায় ৪০টির উপরে লঞ্চ বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে। মাসিক ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা মজুরি, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পুনর্নির্ধারণ, নৌপথে সন্ত্রাসী-ডাকাতি-চাঁদাবাজি বন্ধ ও নদীর নাব্য রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে সব নদীবন্দরে ধর্মঘটের ডাক দেয় নৌযান শ্রমিকরা। ধর্মঘটের মধ্যেও সারাদেশের লঞ্চ যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। শনিবার সকালে বরিশাল, সুরেশ্বর, মুলাদী ও চাঁদপুরের উদ্দেশে দুটিসহ মোট পাঁচটি লঞ্চ ছেড়েছে এবং আরও কয়েকটি ছাড়ার অপেক্ষায় থাকার কথা জানান তিনি। এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় মালিক এবং শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসে শ্রম পরিদফতর। রাত আটটার দিকে টেলিফোনে একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বৈঠক চলছে বলে জানান তিনি। তখনও মালিক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে এ নিয়ে মতবিরোধ চলছিল বলে জানা গেছে। স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা নৌ ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকরা গত সোমবার রাত বারোটার পর থেকে এ ধর্মঘট শুরু করেছে। সরকার পক্ষে এটিকে কর্মবিরতি বললেও মূলত এটি ধর্মঘট। কিন্তু নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেছেন, এ পথে ধর্মঘট অবৈধ। তবে শ্রমিকদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। শনিবার এ ধর্মঘটের ৫ম দিন অতিবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশ নৌপরিবহন সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ বশির ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে, চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারে নৌমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ধর্মঘটের ফলে বহির্নোঙ্গরে মাদার ট্যাংকার থেকে কোন পণ্য খালাস হচ্ছে না। লাইটার জাহাজগুলো অচলাবস্থায় রয়েছে। এর ফলে দেশব্যাপী শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া বহির্নোঙ্গরে জাহাজ জট সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম। আমদানিকারকরা পণ্য খালাস করতে না পারায় ডেমারেজ গুনছেন। পাশাপাশি জাহাজ মালিকরাও এর মাশুল দিচ্ছেন। বর্তমানে বহির্নোঙ্গরে পণ্য বোঝাই ৬৯টি মাদার ভেসেল নোঙ্গর করে রয়েছে। এগুলোতে রয়েছে গম, চিনি, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, ক্লিংকার, কয়লা ও ইউরিয়া সার। মাদার ভেসেলগুলোর মধ্যে ১২টিতে কাজ চললেও পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরসহ বেসরকারী বিভিন্ন জেটিতে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এদিকে, ওয়ার্টার ট্রান্সপোর্ট কো অডিনেশন সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ খান নৌযান ধর্মঘটের ফলে সব মিলিয়ে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকারও বেশি। এদিকে, খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসন্ন ঈদ-উল-আযহার পূর্বে এ ধরনের পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকলে বাজার অস্থিতিশীল হতে বাধ্য। বাংলাদেশে মসলা জাতীয় যে সব পণ্যের চাহিদা রয়েছে তার বিরাট একটি অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা মংলা থেকে জানান, নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পঞ্চম দিনে শনিবারও মংলাবন্দরে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। নৌযান ধর্মঘটের কারণে বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ হতে পণ্য খালাস করতে না পারায় ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বন্দরের শিল্প-কলকারখানাগুলোতে। ধর্মঘটের ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে আমদানি-রফতানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ৪ দফা দাবিতে মংলাবন্দরসহ সারাদেশে এ ধর্মঘট পালন করছে নৌযান শ্রমিকরা। তবে তেলবাহী নৌযানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করায় তারা এ ধর্মঘটের আওতামুক্ত রয়েছেন।
×