ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গণগ্রন্থাগারে আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘মাটির কাছে কিশোর কবি’

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৩ আগস্ট ২০১৬

গণগ্রন্থাগারে আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘মাটির কাছে  কিশোর কবি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়ের বহমানতায় প্রতিষ্ঠার চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করল আবৃত্তি সংগঠন স্বর ব্যঞ্জন। সাফল্যের এ উদযাপনে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ‘উদ্ধত প্রাণের বেগে উন্মুখর আমার এ দেশ/আমার বিধ্বস্ত প্রাণে দৃঢ়তার এসেছে নির্দেশ’ সেøাগানে শুক্রবার সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। এদিন সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে পরিবেশিত হয় ‘মাটির কাছে কিশোর কবি’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা। বাংলার বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় সাজানো প্রযোজনাটির গ্রন্থনা করেছেন মনিরুল ইসলাম। নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রভা সেবতী। শ্রাবণ সন্ধ্যায় মিলনায়তনের বাইরের খোলা আঙ্গিনায় প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহ্কাম উল্লাহ্্সহ আয়োজক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শওকত ওসমান মিলনায়তনে শুরু হয় আবৃত্তিসন্ধ্যা। কবিতার দোলায়িত ছন্দে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে কবিতাপ্রেমীদের হৃদয়। প্রথমেই ছিল সম্মেলক কণ্ঠের আবৃত্তি। পাঠ করা হয় বোধন শিরোনামের কবিতাটি। এরপর ছিল একক কণ্ঠের আবৃত্তি। উদ্যোগ শিরোনামের কবিতা আবৃত্তি করেন বাণী হক। নাহিদ ফারজানা পঠিত কবিতার শিরোনাম ছিল মুহূর্ত। সাইফুল ইসলাম পড়ে শোনান ‘জাগবার দিন আজ’। হুমায়ুন সুলতান শাদাব পঠিত কবিতার শিরোনাম ছিল ‘ব্ল্যাক মার্কেট’। এছাড়া একক কণ্ঠে আবৃত্তি করেন দীপক ঘোষ, দেবব্রত সুবির, আরিফুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, অর্পণা চৌধুরী, রুদিত আনিস, নাহিদ ফারজানা, মাধবী মার্তা, সাবিহা সেতু, আনিসুর রহমান প্রমুখ। তাঁদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় অনুভব, রানার, প্রিয়তমুসে, কৃষকের গান, চরমপত্র, বিদ্রোহের গান, বিক্ষোভ, হে মহাজীবন, অবৈধ, বিবৃতি প্রভৃতি শিরোনামের কবিতা। আজ শনিবার একই সময়ে একই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী আয়োজন। এদিন পরিবেশিত হবে বাংলাদেশ ও ভারতের আবৃত্তিশিল্পীদের সমন্বিত প্রযোজনা ‘অন্তহীন প্রবাহ’। আবৃত্তিমঞ্চে পরিবেশনা নিয়ে হাজির হবেন ভারতের আবৃত্তিশিল্পী পিনাকপাণি দেব ও চন্দ্রিমা রায় এবং বাংলাদেশের বাচিকশিল্পী বেলায়েত হোসেন, মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্্ ও সুপ্রভা সেবতী। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ॥ সবগুলো ছবি সাদা-কালো। আলো-ছায়ার খেলায় ধরা দিয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রাম। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনের এক প্রচারণায় জনতার মাঝে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুকে। আরেক ছবিতে চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় নৌকায় চড়ে যাচ্ছেন জাতির জনক। তাঁর সঙ্গে সাথী হয়েছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আওয়ামী লীগকর্মী জয়নাল আবেদিন। আরেক ছবিতে একাত্তরের উত্তাল বঙ্গবন্ধুর ডাকে রাজপথে নেমেছে শিল্পীসমাজ। বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে আছে স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মত্যাগের নানা ছবি। গণহত্যার চিত্র কিংবা শরণার্থী শিবিরের পানে ছুটে চলা গৃহহীন মানুষের ছবিগুলো বলে দেয় মুক্তিযুদ্ধে কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছে বাঙালী। এমন অসংখ্য ছবি এখন শোভা পাচ্ছে বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনী কক্ষে। শুক্রবার থেকে এখানে শুরু হলো প্রণব সাহা অপু সংগৃহীত ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। বিকেলে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমরা যখন বাংলাদেশের কথা বলি তখন আমাদের বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে হয়, যখন বঙ্গবন্ধুর কথা বলি তখন বাংলাদেশের কথা বলা হয়ে যায়। এজন্যই ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বলেছিলেন, এ নেতার সঙ্গে তাঁর দেশের কোন বিভেদ নেই, তাঁর সত্তাই তাঁর জাতির সত্তা। অর্থমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সমাজের সাধারণ স্তর থেকে আবির্ভূত হয়ে একটি জাতির সৃষ্টি করেছেন। আজকের প্রদর্শিত আলোকচিত্র থেকে বাঙালী জাতির উত্থানপর্ব এবং স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক অবদান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা ছিল সোনার বাংলা গড়ে তোলা। সেটি তিনি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই অসমাপ্ত কাজটি শেষ করতে চলেছি। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এ প্রদর্শনীতে যে সাদা-কালো আলোকচিত্র দেখতে পাচ্ছি সেখানে একজন ব্যক্তির আলেখ্য ফুটে উঠেছে, যিনি বাংলাদেশ নামক ভূখ-ের জন্ম দিয়েছেন। এ মানুষটিই এ দেশের জনগণকে স্বায়ত্তশাসনের মূল্য বুঝিয়েছেন ও স্বাধীনতার পথে চলতে শিখেয়েছেন। তাঁর জীবনের ইতিহাস আত্মত্যাগের ইতিহাস। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল তা তাঁর জীবদ্দশায় বাস্তবায়িত হয়নি। সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই আগামী প্রজন্ম যদি সঠিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে উপলব্ধি করতে পারে তাহলেই সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে এবং তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাও নিবেদন করা হবে। স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, এ ধরনের আলোকচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিকতা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। বঙ্গবন্ধু এখনও আমাদের কাছে সম্পূর্ণ আবিষ্কৃত বা উন্মোচিত নন। আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র এবং এ ধরনের নানা অনুষঙ্গের মধ্য দিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুকে নুতন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করতে পারি। কাজী আকরামউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আজ এখানে বসে আছি, এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণেই। আমরা যারা পাকিস্তান দেখেছি তারা জানি, কোন্ অবস্থান থেকে আজকের অবস্থানে এসেছি। যতদিন তিনি বেঁচেছিলেন পরিবার নয়, নিজের নয়, কেবল দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক জীবন নিয়ে আরও অনেক আর্কাইভস্ সৃষ্টি হতে পারে এবং সেখান থেকে নতুন নতুন ইতিহাস বের হয়ে আসতে পারে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ ॥ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ ধারাবাহিকতায় চলছে চার দিনব্যাপী ফকির লালন সাঁইজির ভাবশিষ্যদের ভাবগীত ও পরিবেশনা। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় ১৫৫ জন বাউলশিল্পীর অংশগ্রহণে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে মরমী গানের আসর। শুক্রবার পরিবেশিত হয় ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ শীর্ষক বাউল সঙ্গীত পরিবেশনা। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেনÑ ফকির শরীফ সাধু, ফকির বাউল শুভা বিশ্বাস, ফকির শাহ আলম স্বপন, ফকির ইয়াকুব, ফকির নিজাম সাঁই, ফকির বাউল মোহিনী সরকার, ফকির বাউল গণেশ বসুসহ অনেকে। আজ শনিবার পরিবেশিত হবে ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ এবং সকাল ১০টায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে বাউল সঙ্গীত সংরক্ষণ বিষয়ক আলোচনা। কাল রবিবার সকাল ১০টায় মানবতার গান গেয়ে একাডেমি থেকে বের হবে শোভাযাত্রা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে শোভাযাত্রা। দুই যে ছিল এক চাকর নাটকের ৫০তম মঞ্চায়ন ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো নাট্যকেন্দ্রের নাটক ‘দুই যে ছিল এক চাকর’। এটি ছিল প্রযোজনাটির ৫০তম প্রদর্শনী। ইতালির নাট্যকার কার্লো গোল্ডনির বিখ্যাত নাটক ‘এ সার্ভেন্ট অব টু মাস্টার্স’ অবলম্বনে নাট্যকেন্দ্রের ১২তম প্রযোজনাটির বাংলা রূপান্তর করেছেন খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী তারিক আনাম খান। নাটকটির নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেনÑ সকিনা বেগম, সাদিকা ইয়াসমিন সান্তনা, লুসি তৃপ্তি গোমেজ, শরীফ হোসেন ইউসুফ হাসান অর্ক, সঙ্গীতা চৌধুরী প্রমুখ।
×