ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভের দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্স থেকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৬ আগস্ট ২০১৬

রিজার্ভের দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্স থেকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু

বিডিনিউজ ॥ নিউ ইয়র্কের এ্যাকাউন্ট থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্স থেকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সফররত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল। দেশটির বিচার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই পরিমাণ অর্থের মালিকানা দাবি করে শুক্রবার আদালতে মামলার সঙ্গে জমা দেয়ার জন্য একটি হলফনামা তারা তৈরি করেছেন বলে প্রতিনিধি দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে। রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা দেবপ্রসাদ দেবনাথ ও আব্দুর রব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসাইন ম্যানিলায় যান। প্রতিনিধি দলটির চারদিনের সফর শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে এক কোটি ৮০ লাখ ডলারের হদিস পাওয়া গেছে, যার দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের কাছে রয়েছে। আর বাকিটা ফিলিপিন্সের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে। রয়টার্স বলছে, দেশটির বিচার বিভাগ দেড় কোটি ডলারের মালিকানা দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি দলকে মামলা করতে বলেছে। তবে ক্যাসিনোর ওই অর্থ উদ্ধারের জন্য ভিন্ন প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের তৈরি করা হলফনামায় ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লেখা নিউইয়র্ক ফেডের একটি চিঠির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট থেকেই ওই অর্থ পাচার হয়েছে বলে রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে। আদালতে মামলা করার জন্য ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের কাছে ওই হলফনামা দেয়া হবে। ম্যানিলায় প্রতিনিধি দলকে সহায়তাকারী ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ দেড় কোটি ডলার এক মাসের মধ্যেই ফেরত পাওয়া যাবে বলে রয়টাসের কাছে আশার কথা বলেন। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয়। এর মধ্যে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) সরিয়ে নেয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। আর একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। রিজল ব্যাংকে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিক যে দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্স সরকারের হাতে ফেরত দিয়েছেন তা পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল ম্যানিলায় রয়েছেন। রাষ্ট্রদূত গোমেজ বলেন, ‘আমরা দেড় কোটি ডলার উদ্ধারের শেষ ধাপে রয়েছি। তবে বাকিটার বিষয়ে ফিলিপিন্সের সিনেটে আবার শুনানি শুরু হবে বলে আমাদের আশা, যাতে ঘটনার বিষয়ে আমরা আরও বিস্তারিত জানতে পারি।’ বাংলাদেশের এই অর্থ চুরির বিষয়ে ফিলিপিন্সের সিনেটে যে শুনানি চলছিল দেশটিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে তা মে মাসে বন্ধ হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুয়ের্তে ক্ষমতায় আসার পর শুনানি শুরুর তারিখ এখনও ঘোষণা হয়নি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, চুরি করে নেয়া ওই অর্থ ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যাওয়ার পেছনে শুধু কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ত্রুটিই নয়, আরসিবিসির পদ্ধতিগত ব্যর্থতাও দায়ী। গত মার্চে সিনেটে শুনানিতে ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তান বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
×