ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মুক্তচিন্তার প্রতিবন্ধকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ জুন ২০১৬

মুক্তচিন্তার প্রতিবন্ধকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লেখক তার চিন্তার স্বাধীনতাকে প্রকাশ করেন লেখনির মাধ্যমে। সেই ভাবনাকে প্রকাশকরা ছড়িয়ে দেন পাঠকের মাঝে। তাই প্রকাশনা হচ্ছে মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তা প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম। তবে উগ্রবাদ ও সঙ্কীর্ণতায় প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে প্রকাশনাশিল্প। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে বর্তমানে মুক্তচিন্তা প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে স্বার্থান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী। আর এ প্রতিবন্ধকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়ে শুরু হলো দুই দিনের মুক্তবিশ্বে প্রকাশনা শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার। সকল বাধা পেরিয়ে মুক্তচিন্তা চর্চা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে সেমিনারে বক্তারা বলেন, লেখক, ব্লগার কিংবা প্রকাশদের হত্যকা-কে উগ্রপন্থীরা একমাত্র সমাধান হিসেবে ধরে নিয়েছে। তবে তাদের জেনে রাখা উচিত বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এ সকল সঙ্কীর্ণতার উর্ধে। বক্তারা আরও বলেন, মুক্তচিন্তার শক্তিকে উগ্রপন্থা দিয়ে কখনই থামানো যায় না। রাষ্ট্রও কখনও কখনও লেখক, প্রকাশকদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কিন্তু প্রকাশের স্বাধীনতাকে কখনও থামানো যায় না। শুক্রবার থেকে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে শুরু হলো ‘মুক্তবিশে^ প্রকাশনা’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার। দেশ-বিদেশের প্রকাশক, লেখকসহ কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে বিকেলে এ সেমিনারের উদ্বোধন হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি এ সেমিনারের আয়োজন করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স এ্যাসোসিয়েশনের (আইপিএ) সভাপতি রিচার্ড চার্কিন ও আইপিএর পরিচালক বেন স্টুয়ার্ট। স্বাগত বক্তব্য দেন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আখতারুজ্জামান এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি। সঞ্চালনা করেন সমিতির সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম। এদেশের প্রকাশনাশিল্প ও মুক্তচিন্তা উগ্রবাদ দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে উল্লেখ করে বেন স্টুয়ার্ট বলেন, বাংলাদেশের প্রকাশনার বিষয়ে কথা বলতে গেলে এখানে মুক্তচিন্তার লেখকদের চিন্তার ওপর আঘাত, তাদের হত্যার বিষয়ে অবশ্যই কথা বলতে হয়। মৌলবাদীদের হাতে এরই মধ্যে মুক্তচিন্তার কয়েকজন লেখক হত্যার কথা আমরা জানি। তিনি তার বক্তব্যে মৌলবাদীদের হাতে আহত প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলের একটি খুদে বার্তা পড়ে শোনান। যেখানে টুটুল লিখেছেনÑ আজকের সেমিনারে না থেকেও উপস্থিত রয়েছেন জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সাল আরেফিন দীপন। যে মুক্তচিন্তার বই প্রকাশ করে মৌলবাদীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। সে সঙ্গে আরেকজন প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিক বই প্রকাশের জন্য কারাগারে বন্দী রয়েছেন। আইপিএর কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স এ্যাসোসিয়েশন বিশে^র ৫০টির বেশি দেশে প্রকাশনা নিয়ে কাজ করছে। এ সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশনার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা, কপিরাইট অধিকার, চিন্তার প্রকাশ এবং ভাবের আদান-প্রদান, সৃজনশীলতাসহ নানা ভূমিকা রাখা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এইচটি ইমাম বলেন, আমাদের দেশে শত সমস্যার পরেও প্রকাশনাশিল্প এগিয়ে চলছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও পাঠকসংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি সেখানেও প্রকাশনাশিল্প গড়ে উঠছে। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা না। কোনকিছুর বৈধতা দেয়া মানে কোনকিছুর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা দেয়া না। আপনি এমন কিছু বলতে পারেন না, যা অন্যের স্বাধীনতায় আঘাত করে। আপনার কোন অধিকার নেই অন্যের ধর্মবিশ^াসকে গালাগাল করার। বাংলাদেশের প্রকাশকদের শুধু বাংলা ভাষাকে ধারণ করলেই হবে না, বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্য ভাষাকে ধারণ করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশে ১২টি ভাষা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, প্রকাশনা শিল্পের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশিপের সঙ্গে প্রকাশনার স্বাধীনতার দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তিনি আরও বলেন, কয়েক বছরে ব্লগার, প্রকাশক ও লেখকদের হত্যা করা হয়েছে। উগ্রপন্থীরা ঠিক করেছে হত্যাই একমাত্র সমাধান। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এসব সঙ্কীর্ণতার উর্ধে। রিচার্ড চার্কিন বলেন, ক্রমশ পৃথিবী খুব জটিল হয়ে উঠছে। মুক্তচিন্তা, বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবনার সুরক্ষা দেয়াও খুব জটিল হয়ে উঠছে। এসব বাধার মুখেও পুস্তক শিল্পের দায়িত্ব হবে এ সকল কবি-সাহিত্যিকদের জন্য সেরকম পরিবেশ তৈরি করা, যাতে তারা নির্বিঘেœ লিখতে পারেন। আক্তারী মমতাজ বলেন, নানা সমস্যা রয়েছে, কিন্তু সরকার এসব ব্যাপারে সচেতন রয়েছে। বেআইনী প্রকাশনাকে কোনভাবেই অনুমোদন দেব না আমরা। সুফিয়া কামাল ও জাহানারা ইমাম স্মরণ ॥ দুই মহীয়সী নারী কবি সুফিয়া কামাল ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তাদের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে স্মরণসভার আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সেগুনবাগিচার জাদুঘর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আয়োজনে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি রবিউল হুসাইন। সুফিয়া কামাল ও জাহানারা ইমামের রচনা থেকে পাঠ ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী তামান্না সারোয়ার নীপা, মাহমুদা সিদ্দিকা সুমি ও মৈত্রী শিশুদল। সঙ্গীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। রবিউল হুসাইন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, তখন মহীয়সী দুই নারী আমাদের পথ দেখিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন। মানুষের মনে বিচারের দাবিটি প্রোথিত করেছেন তারাই।
×