ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাথর উত্তোলনে হুমকিতে পরিবেশ

বোমা মেশিন ॥ ক্ষতবিক্ষত পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২২ জুন ২০১৬

বোমা মেশিন ॥ ক্ষতবিক্ষত পঞ্চগড়

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ জেলা প্রশাসনের সহায়তায় পুলিশী অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি অবৈধ ড্রিল ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন। ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী দিয়ে অভিযান চালানোর পর ফলাফল শূন্য। যেন বজ্র আটুনি ফসকা গিরোর মতো অবস্থা। পুলিশী এই অভিযানে কোন ড্রিল ড্রেজার মেশিন জব্দ তো হয়নি উল্টো অভিযানের রাত থেকেই আবার শুরু হয়েছে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার চরম অবমাননা করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ড্রিল ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করে আসছে। ভুগর্ভস্থ অনেক গভীর থেকে পাথর উত্তোলনে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ের পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলী জমি। মাটির নিচে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ভূমিকম্পেও যে কোন সময় তলিয়ে যেতে পারে এই এলাকার আবাদি জমি, বসতবাড়িসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, একশ্রেণীর প্রভাবশালী অসাধু ব্যবসায়ী রাতের অন্ধকারে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে। অল্প খরচ এবং রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার উচ্চাভিলাসে এলাকার শিক্ষক, শ্রমিক, কতিপয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা জড়িয়ে পড়েছে প্রকৃতি বিধ্বংসী এই অপকর্মে। জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন শতাধিক বোমা মেশিন চলছে। পুলিশ এবং প্রশাসন বিষয়টি জানলেও কিছু করতে পারছে না। জানা গেছে, বোমা মেশিনকে ঘিরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ঘুষবাণিজ্য হচ্ছে। এই ঘুষ চলে যাচ্ছে কতিপয় সরকারী সংস্থা ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের পকেটে। অবৈধ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মাটির গভীর হতে পাথর উত্তোলনের ওপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গত এক বছর ধরে এই ড্রেজার মেশিন তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে আসছে কিছু সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে ড্রেজার মেশিনের বিরুদ্ধে অভিযান চললেও খুব একটা তোয়াক্কা করছে না ব্যবসায়ীরা। মাঝে মাঝে জড়িতদের নামে মামলা দেয়া হলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার শুরু করছে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এই উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের শিবচ-ি, জয়গোনজোত, কালিয়ামনি গ্রামের করতোয়া নদী সংলগ্ন ও পার্শ¦বর্তী এলাকায়, ঝালেঙ্গিগছ, ধানশুকা গ্রামের করতোয়া নদী সংলগ্ন এলাকা, পাথরঘাটা, আঠারখারী, সুরিগছ, শেকগছ, ময়নাগুড়ী গ্রামের বিভিন্ন সমতলভূমির পাথরের গর্তে, ভজনপুর ইউনিয়নের বোগলাহাগী, চোয়ামতি, ফকিরহাট, ভাংঙ্গিপাড়া, বাসবারী, ভদ্রেশর, কুকুরমুহা, গনাগছ গ্রামের করতোয়া নদী সংলগ্ন খাস জমি ও পার্শ্ববর্তী সমতল এলাকায়, একই ইউনিয়নের খনিয়াগছ, গিতালগছ, ডাক্তারপাড়া, ডিমাগছ, বৈরাগিগছ, ঘগারখাল, কাউরগছ, ডাংঙ্গি গ্রামের বিভিন্ন সমতল ভূমির পাথরের গর্তে, বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের হারাদিঘি, বালাবাড়ী, শিলাইগুড়ি, কালদাসপাড়া বালাবাড়ী, কাটাপাড়া গ্রামের ডাহুক নদী সংলগ্ন এলাকায়, শালবাহান হাট ইউনিয়নের পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া মহাসড়ক সংলগ্ন মাঝিপাড়া গুচ্ছগ্রাম হতে ৪ কিলোমিটার উত্তরে লোহাকাচি গ্রাম পর্যন্ত ডাহুক নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় রাতভর মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানায়, একটি মেশিন ১২ ঘণ্টা চালাতে পারলে ৩ হাজার সিএফটি পাথর উত্তোলন করা যায়, যার বাজার মূল্য দেড় লক্ষাধিক টাকা। আর এতে খরচ হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। তারা আরও জানান, বর্তমান সময় ভাল না তাই ১২ ঘণ্টা চালাতে হচ্ছে। এর জন্য প্রতি মেশিন থেকে প্রভাবশালীদের প্রতি রাতে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। ভজনপুর এলাকার কয়েক নেতা এই চাঁদা তুলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্থানীয়রা অভিযোগে জানায়। ড্রেজার মেশিনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কলবাহিনী নামে একটি চক্রকে। এই কলবাহিনী বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোবাইল ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রশাসনের অভিযানের খবর পেলেই তারা মেশিন মালিকদের খবর দেয়। খবর পেয়েই মালিকরা মেশিন লুকিয়ে রাখে। কলবাহিনীর প্রতি সদস্যকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে দেয়া হয়। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ বেলায়েত হোসেন জানান, আমরা ড্রেজার মেশিন মালিকদের তালিকা তৈরি করছি। খুব শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
×