ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে দশ মেগা প্রকল্প-দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩ জুন ২০১৬

বাজেটে দশ মেগা প্রকল্প-দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ১০ মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ‘কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প ঃ প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা’ শীর্ষক একটি পৃথক বাজেট বইও প্রকাশ করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের অধীনে এডিপি’র আওতায় অবকাঠামো খাতের ফাস্ট ট্র্যাক হিসেবে চিহ্নিত ১০ প্রকল্পের মধ্যে আটটি প্রকল্পের (এলএনজি ও সোনাদিয়া ব্যতীত) মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটেই এই দশ প্রকল্পের জন্য এডিপি’তে মোট ১৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট এডিপি’র প্রায় ১৭ শতাংশ। এদিকে, বিদায়ী অর্থবছরে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও নতুন যুক্ত হয়েছে-পদ্মা সেতু রেল যোগাযোগ এবং দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্প। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে ফাস্ট ট্র্যাক বা বড় প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে দশটি। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছেন, সামনে আরও প্রকল্প যুক্ত করা হবে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-মাতারবাড়ি কয়লা বন্দর, ভোলা গ্যাস পাইপলাইন ও উপকূলীয় অঞ্চলে একটি পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা স্থাপন প্রকল্প। তিনি বলেন, ‘কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প ঃ প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে প্রকল্পগুলোর সামাজিক ও অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে এদের প্রভাব পড়ে। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিদায়ী বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, এমআরটি-৬ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্প ও পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে সরকারের চলতি মেয়াদে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর দশমিক ৫৬ শতাংশ বাড়বে এবং অনগ্রসর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকা- ত্বরান্বিত হবে। এদিকে মেগা প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চললেও রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর ও পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ চলছে ধীর গতিতে। যদিও পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ও মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতি ভাল। ফাস্ট ট্র্যাক হিসেবে এ সব প্রকল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রথম পর্যায় মেগা ছয়টি প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তী সময়ে যুক্ত করা হয় মাতারবাড়ি বিদ্যুতকেন্দ্রও পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং কমিটিও গঠন করা হয়। এর সভাপতি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর মধ্যে সম্প্রতি পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজ এবং নদী শাসন কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ১৭ জেলার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হবে। মেগা প্রকল্পগুলো প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। কাক্সিক্ষত এ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারী খাতের বিনিয়োগের সুফল কাম্য পর্যায়ে নিয়ে আসা, বেসরকারী খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের সুফল ভোগসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এজন্য দেশের ভৌত অবকাঠামোর স্থায়ী ও মজবুত ভিত্তি স্থাপন জরুরী হয়ে পড়ছে।
×