ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত দলের কুমিল্লা ত্যাগ

রহস্য উদ্ঘাটনে সিআইডি আশাবাদী হলেও তনুর পরিবারে হতাশা

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১২ এপ্রিল ২০১৬

রহস্য উদ্ঘাটনে সিআইডি আশাবাদী হলেও তনুর পরিবারে হতাশা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১১ এপ্রিল ॥ দেশব্যাপী বহুল আলোচিত-সমালোচিত ও সাড়া জাগানো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের ইতিহাস বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে তৃতীয় দফায় চার দিন পর্যবেক্ষণ শেষে রবিবার রাতে কুমিল্লা ছেড়েছেন সিআইডির ডিআইজিসহ ঢাকার তদন্ত সহায়ক দল। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তকারী সংস্থা আশাবাদী হলেও তিন সপ্তাহেও ঘাতকদের কেউ চিহ্নিত বা গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশ তনুর পরিবার। সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানান তনুর বাবা ইয়ার হোসেন। এদিকে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তনুর লাশ উত্তোলনের ১২ দিনেও প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। জানা যায়, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে একটি কালভার্ট সংলগ্ন জঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি ২৫ মার্চ থানা পুলিশের হাত থেকে জেলা ডিবিতে এবং ৩১ মার্চ অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন সিআইডি-কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম। এদিকে দেশব্যাপী আলোচিত ও স্পর্শকাতর এলাকায় এ হত্যা ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা এ মামলার ছায়া তদন্ত করে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সিআইডি-ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে তদন্ত সহায়ক দল তৃতীয়বারের মতো কুমিল্লায় আসে। এরপর রবিবার আসেন সিআইডির ডিআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) মাহবুব মোহসিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। রবিবার রাত পর্যন্ত তারা কুমিল্লায় অবস্থান করেন। ওই সময়ের মধ্যে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, দুই ভাই নাজমুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন রুবেল, চাচাত বোন লাইজু জাহান, তনুর বান্ধবী মনিষাসহ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও কর্মচারী ইসমাইল, তনু হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই সাইফুল ইসলাম, সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের আহ্বায়ক ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কামাদা প্রাসাদ সাহা, প্রথম ময়নাতদন্তকারী কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের জুনিয়র প্রভাষক ডাঃ শারমীন সুলতানা, ঘটনার দিন সেনানিবাসের ওই এলাকায় যারা যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরসহ সামরিক-বেসামরিক প্রয়োজনীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া গত রবিবার সিআইডির ডিআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) মাহবুব মোহসিন, অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল্লাহ আল আজাদসহ (ক্রাইম) উচ্চপর্যায়ের দলটি তনুর লাশ যেখানে পড়েছিল ওই স্থানসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন। পরে সিআইডি কুমিল্লার কার্যালয়ে এসে বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহহার আকন্দ, সিআইডি কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে বৈঠক করে মামলার অগ্রগতি পর্যালোচনা ও কর্মপন্থা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু হত্যাকা-ের পর ২২ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘাতকদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গত ৩০ মার্চ জেলার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম বাঙ্গরা ইউনিয়নের মীর্জাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে তনুর লাশ উত্তোলন করে সুরতহাল প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের ১২ দিন অতিবাহিত হলেও প্রতিবেদন হয়নি। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তারা হয়ত রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘাতকদের শনাক্তে সক্ষম হবেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন ঘাতক ধরা পড়েনি, এতে আমাদের মাঝে হতাশা দেখা দিচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকট তনু হত্যারহস্য উদ্ঘাটনসহ আসামি শনাক্ত ও গ্রেফতার করে শাস্তি দাবি জানিয়েছেন। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আশাবাদ ব্যক্ত করে জানায়, আমরা এ মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এরই মধ্যে অনেকদূর এগিয়েছি। এজন্য সকলের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে চাই। সহসাই দেশবাসীকে ভাল খবর জানাতে পারব বলে আশা করছি।
×