ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে পিঠে পুলি নিয়ে আনন্দমেলা বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সত্যিই যেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

গণভবনে পিঠে পুলি নিয়ে আনন্দমেলা বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সত্যিই যেন

এক অপূর্ব আনন্দমেলা। গণভবনে বসেছিল পেশাজীবী বিশিষ্টজনদের এই মিলনমেলা। শত ব্যস্ততার মাঝে একটি অন্যরকম দিন পার করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেই অন্যরকম দিনটি হচ্ছে- বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রাণখোলা জম্পেশ আড্ডা, গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলানো, নিরাপত্তার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়। মাঘ মাসের হাড়কাঁপানো শীত নেই, বরং সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত গণভবনের সবুজ চত্বর। গণভবনের সবুজ বিশাল খোলা চত্বরের একদিকে প্যান্ডেল, অন্যদিকে ছোট্ট মঞ্চ দিয়ে সাজানো। সেখানে চলছে নানা পরিবেশনা। কেউ গাইছেন, কেউ নাচ করছেন, কেউবা করছেন কবিতা আবৃত্তি। কেউবা মেতেছেন জম্পেশ আড্ডায়। প্যান্ডেলে বসেছেন বিশিষ্টজনরা। সামনে সবুজ ঘাসের ওপর পাতানো শতরঞ্জি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে নির্দিষ্ট আসনে নয়, সোজা গিয়ে বসলেন ঘাসের ওপর পাতানো শতরঞ্জিতেই। তাঁর পাশে এসে বসেন ছোট বোন শেখ রেহানাও। সবার সঙ্গে আড্ডা জমিয়ে পুরো অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার বিকেলে গণভবনে এ আয়োজন করা হয়। গণভবন চত্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী বাড়িতে পিঠা-পুলির দাওয়াত খেতে এসেছিলেন অনেক মানুষ। তাঁদের কেউ শিক্ষক, কেউ সাংবাদিক, কেউ সাহিত্যিক, কেউ সাংস্কৃতিক কর্মী, অভিনেতা আবার কেউবা আইনজ্ঞ। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতিও কম ছিল না। এমন কয়েকশ’ বিশিষ্ট ব্যক্তি গণভবনের উন্মুক্ত সবুজ চত্বরে জমজমাট পিঠা উৎসব ও মেলায় অংশ নেন। খোলা মাঠে ভাগে ভাগে নানা ধরনের পিঠা-পুলির সঙ্গে কাবাব, পরোটা, নানা, ফুচকা ও বিভিন্ন ধরনের খাবার রাখা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার কিছু সময় পর গণভবনের সবুজ লনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ও শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকীকে সঙ্গী করে। অনুষ্ঠানে এসেই আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। কুশল বিনিময় শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানস্থলের সামনের মাটিতে বিছানো শতরঞ্জিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তখন আমন্ত্রিত অতিথিদের অনেকেই আশাপাশে বসে ও দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন। মাগরিবের নামাজের বিরতিতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে বসেন। দেড় ঘণ্টা ধরে এ বৈঠক যখন চলছিল, তখনও সবুজ লনে চলছিল পেশাজীবীদের জম্পেশ আড্ডার পাশাপাশি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গল্প, গান আর কবিতার আড্ডায় সময় কাটান অতিথিরা। শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আবারও আমন্ত্রিত অতিথিদের মিলনমেলায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। রাতের নৈশভোজ শেষে ইতি ঘটে প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী এই ব্যতিক্রমী আনন্দ মেলার। ‘ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া’ গানটির মধ্য দিয়ে ছোটদের নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। নৃত্যের পরিচালনা করেন মুনমুন আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের মেয়ে রাইসা আহমেদ সেরা। এরপর তিনি ‘আঁখি জল’ গানটি গেয়েছেন। অপূর্ব দত্তের লেখা কবিতা ‘বাংলা-টাংলা’ আবৃত্তি করেন ডালিয়া রহমান। লাইসা আহমেদ লিসা পরিবেশন করেন ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। এরপর অভিনেতা মীর সাব্বির বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। সাজেদ আকবর ও সালমা আকবর যৌথভাবে দুটি গান পরিবেশন করেন। তাঁরা গান- ‘মায়াবন বিহারিণী হরিণী’, ‘ফুলে ফুলে দুলে দুলে’। পিয়াংকা গোপ ‘এই বাংলার মাটিতে মাগো জন্ম আমারে দিও’ গান পরিবেশন করেন। এরপরই শুরু হয় রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাদের দলীয় নৃত্য পরিবেশনা। শেষে বিশিষ্ট নাট্যজন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। এরপর দেশের বরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। অপূর্ব এ আনন্দ মেলায় উপস্থিত ছিলেন জনকণ্ঠ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, সহধর্মিণী শামীমা এ খান নিনা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, একুশে টিভির মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল, একাত্তরের মোজাম্মেল বাবু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নঈম নিজাম, সিনিয়র সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, ওমর ফারুক, জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ এম আর খান, অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম, আবদুল বাসেত মজুমদার, সৈয়দ রেজাউর রহমান, শ ম রেজাউল করিম, আবদুল মতিন খসরু, কবি অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে অভিনেতা আলী যাকের, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, চঞ্চল চৌধুরী, নায়ক ফারুকসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা।
×