ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ, বিএনপি কেউই পাচ্ছে না সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

আওয়ামী লীগ, বিএনপি কেউই পাচ্ছে না সোহরাওয়ার্দী  উদ্যান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অধরাই থেকে গেল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে। আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয়বর্ষ পূর্তি দিবসে উভয় দলই সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি চাইলেও নিরাপত্তার স্বার্থেই কাউকেই অনুমতি দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বিকল্প হিসেবে ওইদিন আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং বিএনপি পুরানা পল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ দুটি জায়গাতেও শেষ পর্যন্ত ওই দুটি দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দেবে কি না, তা রবিবার রাত পর্যন্ত খোলাসা করে বলেনি ডিএমপি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও মহানগরীর ১৮টি স্পটে ব্যাপক শো-ডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি শো-ডাউনের প্রস্তুতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রাজনীতির মাঠে। দুটি দলের পক্ষ থেকেই ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য ডিএমপিতে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু দু’পক্ষের সমাবেশের কর্মসূচীকে ঘিরে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির ঝুঁকি দেখলে কোন দলকেই অনুমতি দেয়া হবে না বলে রবিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছে মহানগর পুলিশ। ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া মিন্টো রোডে পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জননিরাপত্তা। যদি আমাদের কাছে অনুভূত হয় যে পরস্পরবিরোধী জনসমাবেশে সাংঘর্ষিক কর্মসূচীর কারণে জননিরাপত্তা তথা মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেক্ষেত্রে আমরা কাউকে কর্মসূচী করার অনুমতি দিতে পারি না। নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে গতবছর এই ৫ জানুয়ারিকে ঘিরেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল সহিংসতা, নাশকতা ও চরম অনিশ্চয়তা। টানা ৯৩ দিন ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধের নামে দেশব্যাপী ভয়াল ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগে শুধুমাত্র অগ্নিদগ্ধ হয়েই মৃত্যুবরণ করেছে দেশের দেড় শতাধিক নিরীহ মানুষ। দেশের কোনকিছুই ওই ভয়াল ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি। এর এক বছরের মাথায় শনিবার আবারও দুই দল একই দিনে সমাবেশ ঘোষণা দেয়। এতে করে জনমনে নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতের এ অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখেই এবার ঢাকাসহ দেশের কোথাও কোন ধরনের সহিংস বা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দেবে না, তা স্পষ্টই প্রকাশ পেয়েছে। দেশজুড়ে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলে ৫ জানুয়ারির সকল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে। প্রয়োজনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়ে যে কোন ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা দমনের জন্য সর্বত্র ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে অবস্থান করবে বলে জানা গেছে। ৫ জানুয়ারি সারাদেশে বড় শো-ডাউনের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের ॥ শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা সদরে ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ উপলক্ষে বড় ধরনের শো-ডাউন করার প্রস্তুতি চলছে শাসক দল আওয়ামী লীগে। বিএনপিও অনুমতি চাওয়ায় দলটি ধরেই নিয়েছে ডিএমপি তাদেরও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেবে না। এটি ধরে নিয়েই বিকল্প হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি দুপুর দুইটা থেকেই পুরো ঢাকা মহানগরীর রাজপথ দখলে নেবে আওয়ামী লীগ। দুপুর আড়াইটায় মহানগরীর ১৮টি স্পট থেকে একযোগে আনন্দ শোভযাত্রা বের করার মাধ্যমে পুরো ঢাকাকেই মিছিলের নগরীতে পরিণত করতে চায় তারা। ঢাকার ১৫টি নির্বাচনী এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও থানা-ওয়ার্ড নেতাদের নেতৃত্বে বিশাল বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে এই ১৮টি স্পটে একযোগে সমাবেশ শেষে আনন্দ মিছিল বের করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। কর্মসূচী সফল করতে রবিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দলটির সকল সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার জন্য ডিএমপির কাছে আবেদন জানান হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আমরা কোন চিঠি পাইনি। আমরা যদি শেষ পর্যন্ত সেখানে অনুমতি না পাই তাহলে বিকল্প হিসেবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জনসভা করবো। পাশাপাশি ঢাকার ২৮টি স্পটে আমাদের টিমগুলো জনসভা ও আনন্দ র‌্যালি বের করবে। বিএনপির ৫ জানুয়ারির কর্মসূচী প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া যে ভুল রাজনীতি করেছিল, তার জন্য ওই দিবসটা ভুল রাজনীতির ‘ভুল দিবস’ কিংবা ‘অনুতপ্ত’ দিবস হিসেবে বিএনপি পালন করতে পারে। তাহলে জাতি হয়তো তাদের সহায়তা করতে পারে। ৫ জানুয়ারি বিএনপি মাঠে নামলে প্রতিহত করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, কাদের প্রতিহত করবো? তারা (বিএনপি) কোথায়? তারা মাঠে নামবে কি নামবে না, সেটা তাদের বিষয়। এর আগে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছিলেন, ‘লাফালাফি কইরেন না পরে হ্যারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের এই নেতা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট ৯৩ দিনব্যাপী সন্ত্রাস-নাশকতা কর্মকা- করেছিল। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছিল। এরপরও খালেদা জিয়া যদি ভাবেন গত বছরের মতো এবারও সন্ত্রাস-নাশকতা চালাবেন, তবে দেশের জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবার তার চেয়েও কঠোর সমুচিত জবাব দেবে। এ ব্যাপারে আমাদের দলীয় পরিকল্পনার দরকার নেই। আমরা শুধু দেখব দর্শক হিসেবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ কখন গোলাযোগ সৃষ্টি করে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায় না। কারণ আওয়ামী লীগই তো ক্ষমতায়। তাহলে আমরা কেন গোলযোগ সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করব? তিনি বলেন, এ কাজ তো বিএনপি করে আসছে। সেটা তো জনগণ দেখেছে। বিএনপি কোন মুখে ৫ জানুয়ারি কর্মসূচী দেয় এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বিএনপির তো সন্ত্রাস-নাশকতামূলক কর্মকা-ের জন্য লজ্জা হওয়া উচিত। এ ধরনের কর্মসূচী দেয়ার আগে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, ড. আবদুর রাজ্জাক, ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, হাবিবুর রহমান সিরাজ, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামীম, আমিনুল ইসলাম আমিন, এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, আসলামুল হক এমপি, যুবলীগের মজিবুর রহমান চৌধুরী, শ্রমিক লীগের সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। বিকল্প হিসেবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি ॥ ৫ জানুয়ারি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না এমনটি ধরে নিয়ে বিএনপি এখন নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। এজন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে দলটি। রবিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে ৫ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হলেও কোন আপত্তি নেই। তিনি বলেন, নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়েও ডিএমপিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। জানা যায়, ৫ জানুয়ারি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি না পেলেও বিএনপি গতবছরের মতো আর সংঘাত ও সহিংসতার পথে যাবে না। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি না পেলে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চাইবে। সেখানেও অনুমতি না দেয়া হলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বা অন্য কোন বড় হল রুমে সমাবেশ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু হল রুমেও সমাবেশ করার অনুমতি না পেলে দেশব্যাপী এক দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করা হতে পারে। তবে কোন অবস্থাতেই এবার আর হরতাল বা অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচী দেবে না বিএনপি। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান এবং নয়াপল্টন এ দুই জায়গার কোথাও সমাবেশের অনুমতি না পেলে বিকল্প হিসেবে বিএনপি কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, সেটি ৫ জানুয়ারিতেই সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানান হবে। তাঁরা এখন অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছেন এবং সমাবেশের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ হঠাৎ করে ৫ জানুয়ারি কর্মসূচী ঘোষণা করে সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য বিএনপির কর্মসূচী বানচাল করা। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দেউলিয়াত্ব ফুটে উঠেছে। রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার ঘোষণা দেয়ার পরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। তারা সংঘাত ও উত্তাপ ছড়ানো উদ্দেশেই এ সমাবেশ ডেকেছে। যাতে সংঘাতের সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সোহ্রাওয়ার্দীতে না হোক, অন্তত নয়াপল্টনে আমাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হোক। তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশ করা রাজনৈতিক অধিকার। রাজনীতি করার অধিকার কোন অন্যায় আবদার নয়।
×