ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু আর খেজুর গাছে ঝুলতে শুরু করেছে রসের হাঁড়ি

উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় শীতের আগমনী বার্তা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ নভেম্বর ২০১৫

উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় শীতের আগমনী  বার্তা

শাহীন রহমান ॥ প্রকৃতির হিসাব অনুযায়ী শীত ঋতু আসতে এখনও এক মাস বাকি। পৌষ আসার আগেই হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীত নিকটেই। দিনের তাপমাত্রা এখন আর আগের মতো নেই। প্রতিদিনই তাপমাত্রার পারদ নিচে নেমে আসছে। বাতাসে কমছে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি। সেই সঙ্গে কমছে আর্দ্রতাও। ঘাসের ওপর শিশিরবিন্দু আর খেজুর গাছে রসের হাঁড়ি জানান দিচ্ছে উত্তুরে শীতের আগমনী বার্তা। দিনের বেলা গরম থাকলেও মাঝরাত ও ভোরে অনুভূত হয় হালকা শীত। ইতোমধ্যে শীত দুয়ারে কড়া নাড়ছে। দেশের কোথাও কোথাও এখন থেকেই শীতের শিরশিরে হাওয়া শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এসেছে। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ১৫ থেকে ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মধ্য নবেম্বরের পর থেকে দেশের বেশিরভাগ জায়গায় শীতের অনুভূতি স্পষ্ট হতে শুরু করবে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের আবহ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সকাল ও রাতে গ্রামবাংলায় শিশু ও বৃদ্ধরা ইতোমধ্যে গরম কাপড় গায়ে জড়াতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে উত্তরের জেলা দিনাজপুর ও রাজশাহীতে অক্টোবরের শেষ নাগাদই শীতের ভাব শুরু হয়েছে। বর্তমানে সেখানে সকাল সন্ধ্যায় বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় এসব এলাকায় আগেই শীতের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উত্তরের এই জনপদে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়াও বইছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবেম্বরেই এসব এলাকায় শীত জেঁকে বসতে পারে। রাজধানী ঢাকায় এখনও শীতের ছোঁয়া লাগেনি। তবে তাপমাত্রা আগের চেয়ে কমে আসায় গরমের অনুভূতি অনেক কমেছে। মূলত রাজধানীতে আবহাওয়া এখন অনেকটাই নাতিশীতোষ্ণ। রাতের শেষদিকে হালকা শীত ভাব জানান দিচ্ছে শীত আসছে। দিনের বেলায় রোদের তাপ থাকলেও শেষ রাতে শীতের শিরশিরে ভাব শুরু হয়েছে। ভোরের দিকে প্রয়োজন হচ্ছে না পাখা চালানোর। দিনের বেলা কিছুটা বাড়ছে রোদের তেজ। তবে সন্ধ্যার দিকেই সেই তেজ কমে সৃষ্টি হচ্ছে আরামদায়ক পরিস্থিতির। রাতের দিক থেকেই ঠা-ার আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের রেকর্ডে রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে। তবে ২০ নবেম্বরের পর তাপমাত্রা আরও কমে আসবে। নবেম্বরের শেষ নাগাদ রাজধানীতে শীত নামবে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতের হিমেল অনুভূতি গ্রামবাংলায় শুরু হলেও এখনই জেঁকে শীত পড়ছে না। লোকজন শীতের ঠা-া আমেজ উপভোগ করলেও জেঁকে ঠা-া পড়তে এখনও বেশ সময় লাগবে। যদিও ইতোমধ্যে ভোরের দিকে ঠা-া হাওয়া কাবু করতে শুরু করেছে শিশু ও বৃদ্ধদের। তাদের মতে, পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল হলেও মূলত গ্রামে-গঞ্জে শীতের আগমন ঘটে অনেক আগেই। এবারও সে নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হতে পারে। তাদের মতে, জানুয়ারিতে গড় তাপমাত্রা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চলে ২০ ডিগ্রী থেকে ২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকতে পারে। আবহাওয়া অফিসের খবরে বলা হয়েছে কয়েক দিন আগে সাগরে একটি নিম্নচাপ জন্ম নিলেও বর্তমানে তা দুর্বল হয়ে গুরুত্ব হারিয়েছে। স্বাভাবিক লঘুচাপটি সাগরে অবস্থান করছে। অধিদফতরের পরিচালক শাহআলম বলেন, নবেম্বরে শীতের অনুভূতি শুরু হলেও এ মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে তিনটি নিম্নচাপের শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে এক থেকে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। নবেম্বরে রাতের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। গত ১৭ অক্টোবর দেশ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা মৌসুম) বিদায় নিয়েছে। এরপর থেকেই গ্রামবাংলায় হেমন্তে শীতল হাওয়ার আমেজ শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে নবেম্বরে রাতের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। মাসের শেষ সপ্তাহে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে থাকবে। এ সময় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা থাকতে পারে। ডিসেম্বরের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মৃদু (বাতাসে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতু বৈচিত্র্যের ধরনও দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে শীত ঋতুতে। আগে অক্টোবরের শুরুতেই শীতের হালকা আমেজ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে আবহাওয়ার গতিবিধির। নবেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হয় শীতের আনাগোনা। আর জেঁকে শীত পড়তে ডিসেম্বর হয়েই যায়। অবশ্য হাড়কাঁপানো ঠা-া বলতে যা বোঝায় তা পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষা শেষ হতে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ঠা-া ও ভারি বাতাস আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরের দিকে ছুটে আসে। পরে তা উত্তর ভারত, নেপাল হয়ে বাংলাদেশেও প্রবেশ করে। এ কারণেই শরত শেষে হেমন্তের শুরুতেই শীতের আগমনী বার্তা জানান দেয়। কিন্তু এ সময়ে সাগরের দু-একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে আগাম শীতের বাধা সৃষ্টি করে। তবে কয়েক দিন আগে সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেও তা দুর্বল হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এ কারণে আকাশে মেঘ মেঘ ভাব কাটতে শুরু করেছে। আকাশে মেঘ না থাকায় দিনের বেলা চড়া রোদের কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাকটাও বেশি হচ্ছে। বইছে উত্তুরে হিমেল হাওয়াও। আর এই হিমেল হাওয়া শীতের পূর্বাভাস নিয়ে হাজির হচ্ছে প্রকৃতিতে।
×