
ছবি: সংগৃহীত
১০ কোটি বছর আগে, বর্তমান আমেরিকার ইউটাহ অঙ্গরাজ্যে ছিল এক প্রাণবন্ত পরিবেশ। মৌসুমি বন্যা বয়ে যেত সমতল ভূমিতে, আর জঙ্গল ঘেরা জলপথগুলো কাঁদামাটিতে গড়ে তুলত নদীর পথ। সেই পরিবেশে ডাইনোসর, প্রাচীন স্তন্যপায়ী প্রাণী ও কুমির সদৃশ সরীসৃপেরা ভাগ করে নিত একেকটি জলাশয়।
মাসেন্টুচিট সদস্য নামের একটি ভূতাত্ত্বিক গঠন থেকে এতদিন একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডিমই পাওয়া যেত বলে ধারণা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় ২০টি স্থান থেকে প্রায় ৪,০০০টি ডিমের খোসার টুকরো সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করার পর বিজ্ঞানীরা অন্তত ছয়টি পৃথক ‘উওট্যাক্সা’ (fossil egg species) শনাক্ত করেছেন।
লেক ফরেস্ট কলেজের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জশ হেজ বলেন, “এই গবেষণায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো বিভিন্ন ধরনের elongatoolithid ডিম, যা একাধিক ধরনের ওভিরাপ্টোরোসর ডাইনোসরের প্রতিনিধিত্ব করে।”
তাঁর মতে, আগে ধারণা করা হতো যে একটি অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির ডাইনোসরই বসবাস করত, কিন্তু এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে অনেক ধরনের প্রজাতি একসাথে বাস করত।
Elongatoolithid প্রজাতির ডিমগুলো আধুনিক পাখির ডিমের মতো দেখতে এবং তারা সম্ভবত উষ্ণ বালিতে ডিম পুঁতে রাখত। এছাড়া উদ্ভিদভোজী Ornithopod ডাইনোসরের ডিমও পাওয়া গেছে, যেগুলো Spheroolithus প্রজাতির।
সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার ছিল Mycomorphoolithus kohringi নামের ডিম, যা আগে শুধুমাত্র ইউরোপে পাওয়া গিয়েছিল এবং এটি কুমির সদৃশ এক প্রাণীর—crocodylomorph—ডিম বলে ধারণা করা হয়।
ওভিরাপ্টোরোসররা ছিল মাঝারি আকারের, পালকযুক্ত, শক্ত ঠোঁট এবং ছোট লেজবিশিষ্ট সর্বভোজী প্রাণী। এদের পাশাপাশি Ornithopod ছিল তৃণভোজী ডাইনোসর যাদের ডিম ছিল মোটা খোসাবিশিষ্ট, যা আজকের কিছু পাখির মতো পাতার স্তরে পুঁতে রাখা হতো।
এই ডিমগুলো দেখায় যে প্রাচীন আমেরিকায় এশিয়া থেকে অভিবাসী প্রাণীরা এসেছিল Beringia ভূমিসেতুর মাধ্যমে। এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় একই ধরনের ডিম পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা অনেক আগে থেকেই একত্রে বাস করছিল।
ডিমের অবস্থান, খোসার পুরুত্ব, ছিদ্রের ধরন—সবকিছুই জানায় সেই সময়কার জলবায়ু, মাটির আর্দ্রতা, উদ্ভিদ এবং এমনকি পিতামাতার যত্ন নেওয়ার ধরণ সম্পর্কে।
এই গবেষণায় ব্যবহৃত মাইক্রোস্কোপিক ও স্ক্যানিং ইলেকট্রন বিশ্লেষণে ডিমের খোসার স্তর এমন সূক্ষ্মভাবে দেখা গেছে যা মানুষের চুলের থেকেও পাতলা।
এই গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কয়েকটি ডিমের খোসার টুকরো দিয়েই একটি বিশাল জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ছবি আঁকা যায়।
একটি ডিমের খোসা যেন সময়ের একখানা পোস্টকার্ড—যা জানায় কিভাবে প্রাচীন প্রাণীরা বাস করত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলাত এবং সন্তান লালন করত।
সিডার মাউন্টেন অঞ্চলের হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত শিলাস্তরে লুকিয়ে আছে আরও অনেক গল্প। প্রতিটি ভাঙা ডিম নতুন করে উন্মোচন করে অতীতের রহস্য।
ফারুক