ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

বাঙালী নারীর ঈদ আনন্দ

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১৬ জুন ২০১৭

বাঙালী নারীর ঈদ আনন্দ

ঈদ মানে খুশি আর আনন্দ। আবার কখনও কখনও ঈদ মানে অপেক্ষার অবসান। দীর্ঘ ১টি বছর অপেক্ষার পর বাঙালীর জীবনে চরম আনন্দের শিহরণ নিয়ে ঈদ আসে প্রাণের স্পন্দন ও সুখের আগমনী বার্তা নিয়ে। আর বাঙালী নারীদের জীবনে ঈদ আসে শত ব্যস্ততার চাদর গায়ে দিয়ে। পরিবার, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীসহ অন্যদের দায়িত্ব মাথায় পেতে নিতে হয় নারীদের অবলীলায়। আমাদের সমাজ সংস্কৃতিতে নারীদের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও স্বীকৃতি সে তুলনায় খুবই নগণ্য। গ্রামীণ পটভূমিতে নারীদের প্রাপ্য সম্মান দিতে এখনও সমাজে স্থবিরতা দেখা যায়। এ জায়গাটায় আমরা সেকেলে-ই রয়ে গেছি। কিন্তু শহুরে সমাজে এর সামান্য ব্যতিক্রম দেখা যায় বিভিন্ন ফ্যাক্টরের প্রভাবে। নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের প্রচেষ্টা, শিক্ষা গ্রহণে নারীদের আগ্রহ, কর্মসংস্থানে পুরুষের ন্যায় নারীদের অংশগ্রহণ ইত্যাদি কারণে পূর্বের তুলনায় কিয়দংশ হলেও নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বের ক্ষেত্রেও শাখা-প্রশাখা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বাঙালী নারীদের। নারীকে আরও বেশি প্রাণবন্ত, আধুনিক ও যুগোপযোগী হতে হচ্ছে দায়িত্ব পালন বিবেচনায় সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ঈদকে সামনে রেখে আলোচিত নিবন্ধে বাঙালী নারীর পছন্দের নমুনায়নকে তুলে ধরা হয়েছে। ছোট্ট নিবন্ধের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হবে না তদুপরি সারা বাংলার চিত্রকে তুলে ধরার প্রয়াসের মাত্রা জরিপের কার্যাক্রমের মাধ্যমে ঈদ আনন্দে পছন্দের চিত্রকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ঈদকে সার্বজনীন রূপ দিতে বাংলার রমণীদের সীমাহীন প্রচেষ্টার অন্ত থাকে না। নিজের জন্য কিছু না হলেও পরিবারের সকলের জন্য নতুন জামা-কাপড় সরবরাহে চেষ্টার কোন ঘাটতি থাকে না। বেছে বেছে মার্কেট নির্ধারণ করে রমজানের মধ্যে প্রচ- ভিড় উপেক্ষা করে জামা-কাপড় ক্রয় করে থাকেন। অনেক সময় পছন্দের জিনিস সংগ্রহে রাখার জন্য বেশি দাম গুনতে হয়। পছন্দের জিনিস বিভিন্ন মার্কেটে রকমফের হয়ে থাকে দামের ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে, পেশাগত বৈচিত্র্য এবং অবস্থানগত বিন্যাসের কারণে বিবাহিত ও অবিবাহিত মেয়েদের মধ্যে পছন্দের রকমফের পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। আমরা এ নিবন্ধটি সাজানোর জন্য বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর মহিলাদের কাছ থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে ফলাফল বিন্যস্ত করেছি। সংগৃহীত উপাত্তের ক্যাটাগরিসমূহ হচ্ছেÑ ছাত্রী, চাকরি প্রত্যাশী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহিলা, পুলিশের শীর্ষপদে কর্মরত মহিলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গৃহিণী সকলের পছন্দের বিন্যাস ঘটিয়ে নিবন্ধটি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখতেই তিনি বলেনÑ ঈদের পছন্দ খুবই সিম্পল, একদম সিম্পল, সালোয়ার কামিজ তার সঙ্গে মিলিয়ে স্যান্ডেল। এখন তো আর আমরা ছোট না, সামান্য পোশাকেই ঈদের আনন্দে পরিপূর্ণতা আসে। তথ্য কমিশনে চাকরিরত কর্মজীবী নারীর উত্তর এমন- ঈদে আর কি- এখন বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চার যাবতীয় পোশাক-আশাক, শ্বশুরবাড়ির লোকজন, বাবা-মা, ভাইবোন তাদের জন্য কেনাকাটা করতে হয়। নিজের জন্য তেমন কিছু কেনা হয় না এখন। স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া উপহার ঈদ আনন্দের মাত্রাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। স্বামীর কাছ থেকে সাধারণত জামদানি অথবা কাতান শাড়ি পাওয়া যায়। সালোয়ার কামিজ, গয়না, এ্যামিটেশনের চুড়ি, কানের দুল, কাপড়ের বালা এবং সুতির শাড়ি কিনতে পছন্দ করেন চাকরি প্রার্থী একজন শিক্ষার্থী। সুতরাং সকলেই সাধারণের মানে থাকতে পছন্দ করেন। তবে বিশ্বায়নের বিবর্তন এবং পরিবর্তনের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন ডিজাইন ও নতুন নামে বিদেশ হতে আসা নজরকাড়া ডিজাইনের পোশাকের দিকে নতুন প্রজন্মের মেয়েদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মায়ের কাছে প্রাপ্ত বকশিশ দিয়ে থ্রি-পিস, বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে শাড়ি (কাতান) ক্রয় করবেন। কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মার্কেটে ঘোরাঘুরি করেও পছন্দের শাড়ি মেলাতে পারছেন না। রোজা অব্দি অন্যান্য মার্কেট ঘুরে ঈদের আগেই যুতসই শাড়ি কিনার প্রত্যাশা ওনার। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মহিলার সঙ্গে ঈদ আনন্দ নিয়ে কথা বলে জানা যায়, গহনা ওনার খুব পছন্দ। যে কোন উৎসবকে সামনে রেখে গহনার সঙ্গে ম্যাচ করে কাতান শাড়ি কিনতে পছন্দ করেন তিনি। এখনও কাজের চাপে মার্কেটে যাওয়ার সুযোগ হয়নি, তবে সবকিছুর খোঁজখবর রাখছেন নিয়মিতই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গেই তিনি বলেনÑ এখন অন্যদের উপহার দিতেই ভাললাগে। বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনকে ঈদের আনন্দে রাঙিয়ে দিতে মন নেচে উঠে। নিজের জন্য থ্রি-পিস আর সুদৃশ্য ডিজাইনের জুতা কিনতেই পছন্দ। আমাদের জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মেয়েদের পছন্দের উৎকর্ষতা ফুটে উঠেছে। কেউ শাড়ি-ব্লাউজ, কেউ সালোয়ার-কামিজ, কেউ থ্রি-পিস, কেউ বা নতুনত্বের স্বাদ নিতে নতুন ডিজাইন কিংবা দামী অথবা বিখ্যাত ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাকের অপেক্ষায় থাকেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়েদের কিংবা নারীদের পছন্দের জামা-কাপড় যোগান দেয়ার ক্ষেত্রে কিংবা অতিরিক্ত চাহিদার যোগান মেটাতে স্বল্পসময়ের জন্য মার্কেট চালু করা হয় ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে। এছাড়া ঢাকার স্বনামধন্য কয়েকটি মার্কেটে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুন আসা কাপড়ের মধ্যে সারারা ও গাওন নতুন প্রজন্মের কাছে ভালই সাড়া ফেলেছে। প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজের সুতির কাপড় সকল শ্রেণী পেশার মানুষের নিকট আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এই ছিল আমাদের কাছে সর্বশেষ ঈদ আনন্দের নিউজ। তবে ঈদ আনন্দের মাঝে বিদেশীরাও শামিল হচ্ছেন, বড় মার্কেটগুলোতে বিদেশীদের উপস্থিতি বিক্রেতাদের আশাবাদী করে তুলেছে।
×