ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৃজনশীলতায় নতুন নারী মুখ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ মার্চ ২০১৭

সৃজনশীলতায় নতুন নারী মুখ

বইমেলা নামটা শুনলেই শুধু বইয়ের কথা মনে আসে না। মনে পড়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বইমেলার পরিধি, মেলার সৌন্দর্য, বেড়েছে পাঠক ও লেখকের সংখ্যাও। শুধু কেনাবেচার মেলা নয়, তার থেকে অনেক বেশি জানার সুযোগ। বই না কিনেও তা একনজর চোখ বুলিয়ে অনেক শেখার সুযোগ চলে আসে। যেন জ্ঞানের উৎসব। অমর একুশে গ্রন্থমেলা যেমন নতুন নতুন পাঠক তৈরি করছে তেমনি সৃষ্টি করছে নতুন লেখক-লেখিকারও। নবীন লেখক- লেখিকাদের কাছে বইমেলা যেন তাদের পরিচিতিদানের বড় মাধ্যম। প্রতিনিয়ত তরুণ লেখক-লেখিকাদের পদচারণায় মুখরিত মেলাপ্রাঙ্গণ। অনেক ক্ষেত্রে এসব তরুণ লেখকদের কাছেও পাঠকদের অটোগ্রাফসহ বই কেনার আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বাঙালী চিরকালই কবিতাপ্রিয়। তাই এবারের মেলাতেও কবিতার বই বেশি দেখা গেছে। তরুণ নারী লেখকদের বেশিরভাগ বই কবিতার। এবারের বইমেলায় কুঁড়েঘর প্রকাশনী থেকে ‘যৌথডানা’ নামে একটি কবিতার বই যৌথভাবে বের হয়েছে। এখানে কাউছার জাহান বিউটি ও কাজী ইকরাম রবিন নামে দুই তরুণ কবির লেখা কবিতাগুলো পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে। চট্টগ্রামের সমুদ্র পাড়ে বেড়ে ওঠা তরুণী কবি কাউছার জাহান বিউটির লেখা কবিতাগুলোতে প্রেম, প্রকৃতি, বিজ্ঞান, বিরহ, শূন্যতা সবকিছু ফুটে উঠেছে। স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত তার কবিতাগুলো পাঠকের মনকে ছুঁয়েছে। তার প্রত্যেকটা কবিতার মধ্যে ভাষা ও ভাবের গভীরতা রয়েছে। নিজের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশের অদম্য ইচ্ছে থেকেই তার কবিতা লেখার শুরু। একজন সৃজনশীল লেখিকা বলতে যা বোঝায় বিউটি ঠিক তাই। তার প্রথম কবিতা ‘ঘুমের ভেতর’ এর প্রথম দুটি লাইন এ রকম- আমি একটু চোখ বুজলেই আজকাল যাবতীয় মাদকতা আমায় আঁকড়ে ধরে/আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে অসংখ্য অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা/বঞ্চিত হওয়ার ব্যথাগুলো, নাক ডোবায় শরীরে../ আবার ‘নিশ্চল মুঠোফোন’ কবিতার প্রথম দুটি লাইন এ রকম-স্পর্শকাতর মুঠোফোনের কল্যাণে আজ হয়ত অনেক কিছুই স্পর্শের নাগালে/কিন্তু তুমি রয়ে গেলে আজও স্পর্শের বাইরে../বইটিতে তার প্রত্যেকটি কবিতার মাঝে সৃজনশীলতার ছাপ রয়েছে। চারজন তরুণ নারী কবি মিলে বের করেছেন একটি কবিতার বই ‘নাকফুল’ নামে। এই বইটিও পাঠকদের দৃষ্টি কেড়েছে। এবারের মেলাই ভাল বিক্রিও হয়েছে। কবি নুসরাত জাহান আজমী পেশায় একজন শিক্ষিকা। তার লেখা ‘আলাপন’ কবিতাটি পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রথম ক’লাইন এ রকম- মনে আছে? তুমি বললে রোদ হব/আমি বললাম, তাতে যে আমি কষ্ট পাব../তার ‘ইচ্ছের সমীকরণে’ ও ’অবশেষে’.. কবিতা দুটিও পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। কবি অফুজা আখতারের কবিতাগুলোও সময়োপযোগী, এখানে ভাষা ও ভাবধারাগুলোর চমৎকার বিন্যাস ঘটিয়েছেন তিনি। ৮ ফাল্গুন কবিতাটি ও আমার আপন আধার কবিতাটি বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। কবি জাকিয়া জেসমিন জুথীর ভালবাসার খোঁজে কবিতাটি তরুণ পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কুহেলি প্রভাতের এক ঝলক হিমেল হাওয়া/মুখাবয়বে ছুঁয়ে দিয়ে মিষ্টি পরশ/হৃদয় শাখায় বসে বসন্ত কোকিল কণ্ঠে/বলে যায়, তোমায় যে বড় ভালবাসি../কবি ইশরাত ইরার কবিতাগুলোর মাঝেও প্রেম ও প্রকৃতি একটা বড় জায়গাজুড়ে আছে। যেমন ‘আকাশের মেঘ’ ‘বৃষ্টি কাব্য’, জীবন তরী ও আঁধার আমি অন্যতম। এই চার কবির ‘নাকফুল’ নামের বইটি পাঠকের মাঝে স্থায়ী জায়গা করে নেবে বলে অনেকের মতো আমিও আশাবাদী। এবার বই মেলতে স্বপ্না রেজার গল্পের বই ‘স্নেহা ঘরে ফেরেনি’ পাঠকদের আকৃষ্ট করে। তার বাবা ছিলেন দেশ বরেণ্য সাংবাদিক মরহুম আসফ উদদৌলা রেজা। সেজন্য লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই । তিনি গল্প ও উপন্যাস লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সমকালীন নানা বিষয় নিয়ে তিনি লেখালেখি করেন। অন্যদিকে রাত্রি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তরুণ লেখিকা সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টির বিজ্ঞান বিষয়ক বই ‘মজার প্রজেক্ট মজার বিজ্ঞান’ স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। বইটির নাম দেখেই অনেকে কিনে ফেলে বলে জানান সেই প্রকাশনীর এক বিক্রেতা। বিজ্ঞান বিষয়ক যে কয়েকটি বই এবার মেলায় ভাল চলেছে তার মধ্যে এটিও অন্যতম। তবে নতুন প্রজন্মের মাঝে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী পড়ার আগ্রহ এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। এটি একটি ভাল লক্ষণ। জয়তী প্রকাশনী থেকে শায়লা সুলতানার কবিতার বই ‘প্ররোহ’ পাঠকদের মাঝে ভাল সাড়া ফেলেছে। বইটিতে ৩২টি কবিতা স্থান পেয়েছে। খুব সহজ সরল ভাষায় লেখা কবিতাগুলোতে রূপ, রস, ছন্দ ও অলঙ্কারের চমৎকার সমন্নয় ঘটিয়েছেন তরুণী এই কবি। তাছাড়া তিনি নিজেও ইংরেজী সাহিত্যে নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। যা তাকে লেখালেখিতে সাহায্য করেছে। শায়লা সুলতানার স্বপ্ন লেখালেখি দিয়ে পাঠকের মাঝে একটি জায়গা করে নেয়া। এদের সবার মধ্যে থেকে নতুন নতুন সাহিত্য সৃষ্টি হোক এমন প্রত্যাশা আমাদের সবার। এরাই আগামীতে সমৃদ্ধ করবে আমাদের বাংলা সাহিত্যকে। শুভ ও সুন্দর হোক এদের সাহিত্য জীবনের পথচলা।
×