
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলা ১২ দিনের যুদ্ধ আপাতত শেষ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবে এই বিরতি কতদিন টিকবে, তা কেউ জানে না।
এই যুদ্ধ শুরু হয় যখন ইসরায়েলের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায়। ইরানের নাটানজ, ফোরদো ও ইসফাহান এলাকায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, তারা এসব স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে।
এরপর ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালায়। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সবাই ভাবছিল, বড় একটি যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।
কিন্তু এরপর ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও ইরান যুদ্ধ থামাতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ বহু বছর চলতে পারত এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস হয়ে যেত।”
তবে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েল আবার ইরানে হামলা চালায়। তারা বলে, ইরান থেকে দু’টি মিসাইল ছোড়া হয়েছিল। যদিও ইরান বলে, তারা ওই মিসাইল ছোড়ে নি। ইসরায়েলের হামলায় তেহরানের কাছে একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস হয়। এরপর ট্রাম্প বলেন, “আমি খুবই বিরক্ত যে ইসরায়েল আবার হামলা করেছে।”
এই ঘটনার পর আবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ট্রাম্প জানান, “আর কোনো হামলা হবে না। যুদ্ধবিরতি চলছে।”
ইসরায়েল এই যুদ্ধে কিছু অর্জন করেছে। তারা প্রথমবারের মতো ইরানের ভেতরে পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে পেরেছে। তারা দেখিয়েছে, অনেক দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও তারা সফলভাবে হামলা করতে পারে। নেতানিয়াহু বলেন, “বিশ্বনেতারা আমাদের সাহস ও সাফল্যে মুগ্ধ।”
আরও একটি বিষয় হলো, ইসরায়েল এবার যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি তাদের সঙ্গে যুদ্ধে টেনে আনতে পেরেছে। আগের যেকোনো যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শুধু সহযোগিতা করত, সরাসরি হামলা করত না।
ইরান বলছে, তারা তাদের পরমাণু প্রকল্প বন্ধ করবে না। ইরানের পারমাণবিক সংস্থার প্রধান জানান, তারা আগে থেকেই পুনর্গঠনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা ভূগর্ভে থাকা স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা এখনো সেটা যাচাই করতে পারেনি। এছাড়া, ইরানের ৪০০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় আছে, তাও জানা যায়নি।
যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলে যে দুইটি মিসাইল পড়ে, সেগুলো কে ছুড়েছে, এখনো তা পরিষ্কার না। ইরান বলছে, তারা ছোড়েনি। কেউ কেউ বলছেন, হয়তো ভুলবশত মিসাইল ছোড়া হয়েছে— যেমন ২০২১ সালে ইরান ভুল করে একটি ইউক্রেনীয় যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করেছিল।
এই যুদ্ধবিরতি কেবল একটি সাময়িক বিরতি। ইরান ও ইসরায়েল কেউই পুরোপুরি শান্তিতে যেতে রাজি নয়। ইরান তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায়। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কখনোই ইরানের পরমাণু প্রকল্প চালু হতে দেবেন না।
ইউরোপের কয়েকটি দেশ শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে। তারা ইরানকে বোঝাতে চাইছে, যেন তারা তাদের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করে। তবে ইসরায়েল আগেও এসব চুক্তি ভাঙার চেষ্টা করেছে। এবারও তারা নতুন চুক্তিকে সমর্থন করবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইরানের সংসদ একটি প্রস্তাব এনেছে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে দিতে পারে। অর্থাৎ ইরান আরও কঠোর পথে হাঁটতে পারে।
সব মিলিয়ে, এই যুদ্ধ থেমেছে ঠিকই, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। আবার যে কোনো সময় যুদ্ধ শুরু হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র আবার জড়িয়ে পড়তে পারে। শান্তি এখনো অনেক দূরে।
সূত্র: আল জাজিরা
এম.কে.