ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, “আমরা বিশেষভাবে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করতে চাই যে, এই পরিস্থিতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ হবে অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি পদক্ষেপ, যার ভয়াবহ পরিণতির কোনো সীমা নেই।”
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশনের প্রধান হুঁশিয়ারি দেন, ইসরায়েল যদি ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালায়, তাহলে "চেরনোবিল ধরনের বিপর্যয়" ঘটতে পারে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেছিলেন, বুশেহর স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে। যদিও পরে এক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এটিকে “ভুল বক্তব্য” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, তিনি এই হামলার বিষয়ে নিশ্চিতও নন, অস্বীকারও করতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, বুশেহর হলো ইরানের একমাত্র সক্রিয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত।
এর একদিন আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
“আমি হয়ত যুক্ত হব, হয়ত হব না,” বলেন ট্রাম্প।
এর পরদিন, রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সামরিক সহায়তা না দেওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ার করেন। তিনি বলেন,
“আমরা ওয়াশিংটনকে এমনকি অনুমাননির্ভর বা কাল্পনিক হস্তক্ষেপ থেকেও বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।”
এদিকে মারিয়া জাখারোভা বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপর ইসরায়েলি হামলা বিশ্বকে **"মাত্র মিলিমিটারের দূরত্বে"** নিয়ে গেছে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে।
“পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানা হচ্ছে,”** বলেন তিনি। জাতিসংঘের পারমাণবিক নিরাপত্তা সংস্থাও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তিনি আরও বলেন,
“বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ কোথায়? পরিবেশবাদীরা কোথায়? তারা কি ভাবে যে এ তরঙ্গ তাদের ছুঁবে না? তারা যেন অন্তত ফুকুশিমার ঘটনার ইতিহাসটা পড়ে নেয়,” উল্লেখ করে ২০১১ সালের জাপানের পরমাণু দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি।
এর আগে বুধবার, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যৌথভাবে ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ বন্ধে তৎক্ষণাৎ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যে ফোনালাপে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার কথা আলোচিত হয়েছে।
এর আগে পুতিন আলাদাভাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে কথা বলে সংঘর্ষ নিরসনে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন।
তবে এই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,
“তিনি (পুতিন) মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি বলেছি, একটা উপকার করো, আগে নিজের দেশের মধ্যস্থতা করো।”
তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন,
“আমি বলেছি, ভ্লাদিমির, আগে রাশিয়া নিয়ে কাজ করো, তারপর অন্যদিকে মন দিও।”
মুমু
