
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি একদিকে বলছেন, যুদ্ধ চান না; আবার অন্যদিকে সরাসরি জানাচ্ছেন না যে, ইসরায়েলের পাশে থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না। আল জাজিরার এল বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
‘কেউ জানে না আমি কী করব’ — হোয়াইট হাউসের মন্তব্য
১৮ জুন সকালে হোয়াইট হাউসের লনে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আপনারা জানেন না আমি এটা করব কি না। আমি করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করব।”
তিনি আরও জানান, ইরান আলোচনায় বসতে চায় এবং তাদের “বড় সমস্যা” রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেননি, এবং যুদ্ধের মতো সংকটে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতেই তিনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
ইসরায়েলের হামলা ও ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যাতে ইরানি বিজ্ঞানী ও সামরিক নেতারা নিহত হন। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এ হামলাকে প্রথমে “একতরফা পদক্ষেপ” বলেছিল, প্রেসিডেন্ট পরে জানান তিনি আগে থেকেই এই হামলার কথা জানতেন এবং সমর্থনও করেছিলেন।
এই হামলার পর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করে।
‘আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে প্রস্তুত থাকতে হবে’
ট্রাম্প বলেন, “আমি যুদ্ধ খুঁজছি না। তবে যদি যুদ্ধ ও ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের মধ্যে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমরা যা প্রয়োজন, তা করব।”
প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত রয়েছে:
“প্রেসিডেন্ট যা বলেন, বিশ্ব তা গুরুত্ব দিয়ে নেয়। আর আমাদের দায়িত্ব হলো প্রস্তুত থাকা।”
কংগ্রেসে বিভক্ত মতামত ও সীমাবদ্ধতা আনার উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা সীমিত করতে একটি আইন প্রস্তাব করেছেন। একই সময়ে রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ টেড ক্রুজ এবং বিশ্লেষক টাকার কার্লসনের মধ্যে ইরানে ‘সরকার পতনের চেষ্টার’ বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক
ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরান মাত্র “কয়েক সপ্তাহের” মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র পেয়ে যেতে পারত। তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরেই তিনি বলে আসছেন যে, ইরানকে কোনোভাবেই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না।
তবে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড কংগ্রেসে বলেন, ইরান এমন কোনো অস্ত্র বানাচ্ছে না, যদিও পরে তিনি প্রেসিডেন্টের অবস্থানকে সমর্থন করেন।
ইরান বারবার বলেছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুধুই বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।
আলোচনার ভেঙে পড়া ও ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের হামলার পর ইরান আলোচনার টেবিল থেকে সরে যায়। ট্রাম্প বলেন, তিনি ৬০ দিনের মধ্যে চুক্তির আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু ইরান সাড়া দেয়নি। এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ইরানি কর্মকর্তারা যুদ্ধ শুরুর পর হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি ও ‘নির্বিচার আত্মসমর্পণ’ দাবি
১৭ জুন ট্রাম্প বলেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করতে পারেন এবং ইরানের “নির্বিচার আত্মসমর্পণ” ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
তার ভাষায়, “আমরা যুদ্ধবিরতির জন্য নয়, বিজয়ের জন্য এগোচ্ছি। বিজয় মানে — ইরানের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না।”
এই বক্তব্যের জবাবে ইরান জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়ালে, তারা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এই মুহূর্তে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সর্বোচ্চ উত্তেজনার পর্যায়ে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি যুদ্ধের পক্ষে না হলেও তার বক্তব্য, সিদ্ধান্তহীনতা, এবং “শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া”র কৌশল গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে।
আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, সামরিক ও কূটনৈতিক মহলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে, এবং ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ ঘিরে বিশ্বজুড়ে নজরদারি বাড়ছে।
মুমু ২