
মাটির ২৬২ ফুট নিচে ইরানের পরমাণু স্থাপনা
জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সাবেক পরিদর্শক ডেভিড অলব্রাইট বলেছেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনা ফোর্ড মাটির অন্তত ৮০ মিটার বা ২৬২ ফুট গভীরে, যা ধ্বংস করা কঠিন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি রেডিও ফাইভের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ পরমাণু বিজ্ঞানী জানান, ইসরাইল হয়তো হামলা চালিয়ে ফোর্ড পরমাণু কেন্দ্রটি দীর্ঘ সময়ের জন্য অকেজো করে রাখতে পারে।
তবে তারা এটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না। তাদের সেই সক্ষমতা নেই। এই কেন্দ্রটি ধ্বংস করতে লাগবে শক্তিশালী বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা। যেটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে। খবর বিবিসির।
তিনি বলেন, এখন যেখানে ইসরাইল হামলা করছে আমি বিশ্বাস করি ইসরাইল ওই স্থাপনা দীর্ঘসময়ের জন্য বন্ধ করাতে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্র এটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারে। ইরানের এই স্থাপনাটি ধ্বংস এখন দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগ দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরান তাদের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনাটি তৈরি করেছে দেশটি পরমাণু কর্মসূচির অংশ হিসেবে।
যেখানে বেসামরিক কাজে পারমাণবিক কার্যক্রম চালাত তারা। পরমাণু বিজ্ঞানী ডেভিড অলব্রাইট বিবিসি ফাইভকে আরও জানিয়েছেন, ইরাকে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার আন্তর্জাতিক পরিদর্শন কার্যক্রমের জন্য সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে গোপন কর্মসূচিগুলো পরিদর্শনের উপায় বের করার ক্ষেত্রে এটি সহায়তা করেছে। ইরানের ফোর্ড জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক একটি স্যাটেলাইট ছবিতে এমনই দেখা গেছে পাহাড় কেটে ঢুকে পড়েছে পাঁচটি সুড়ঙ্গ, পাশে দাঁড়িয়ে বিশাল এক কাঠামো, আর চারপাশে সুপ্রসারিত নিরাপত্তা প্রাচীর।
ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছাকাছি স্থানে এ গোপন ও কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত পারমাণবিক স্থাপনাটি অবস্থিত। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আসার পর থেকে এর আসল প্রকৃতি ও পরিসর নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার শুরু হয়। স্থাপনাটি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যত তথ্য পাওয়া গেছে, তার বেশিরভাগই মিলেছে কয়েক বছর আগে ইসরাইলি গোয়েন্দাদের চুরি করে আনা ইরানের গোপন নথি থেকে। এত গভীরে এর অবস্থান হওয়ায় ইসরাইলের যেকোনো বিমান থেকে সেখানে বোমা দিয়ে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব।
ইসরাইলের হামলায় ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, ফোর্ডোতে ইরান তাড়াহুড়া করে মজুতকৃত ইউরেনিয়াম থেকে পারমাণবিক বোমা বানানোর চেষ্টা করতে পারে। ইসরাইল এ কেন্দ্র লক্ষ্য করে সম্প্রতি হামলা চালালেও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মতে, তারা এখন পর্যন্ত এ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি, নয়তো এমন ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। তেহরান বহুদিন ধরে দাবি করে আসছে, শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে তারা পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে আসছে।
কিন্তু তারপরও ফরদো নিয়ে ইরানের প্রকৃত অভিপ্রায় সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন রয়েছে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন এক যৌথ ঘোষণায় প্রথমবারের মতো ফরদোর অস্তিত্বের কথা প্রকাশ করেন। তখন ওবামা বলেছিলেন, এই কেন্দ্রের আকার ও গঠন এটির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সঙ্গে মেলে না। রয়টার্স ২০১৫ সালে ইরান পারমাণবিক চুক্তি নামে পরিচিত জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) করা হয়।
এ চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে ফোর্ডোর ভেতর থেকে দুই-তৃতীয়াংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের যন্ত্র বা সেন্ট্রিফিউজ সরাতে হয় এবং সব ধরনের পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে নিতে হয়। ফলে ফোর্ড থেকে বিপদের আশঙ্কা অনেকটা প্রশমিত হয়। এরপর এ স্থাপনায় এমন কর্মকা- পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর পরিস্থিতি আবার পাল্টে যেতে শুরু করে।