
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের কোম প্রদেশের পাহাড়ের গা ঘেঁষে অবস্থিত একটি সাধারণ গ্রাম ‘ফোরদো’—যেখানে লুকিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে আলোচিত এবং সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর একটি। সাম্প্রতিক উত্তেজনায় এই ফোরদো পরিণত হয়েছে ইসরাইলের অন্যতম জটিল সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে।
পাহাড়ের গভীরে গড়া, বোমা-প্রতিরোধী স্থাপনা
ফোরদোর পারমাণবিক স্থাপনাটি প্রায় ৫০০ মিটার গভীরে পর্বতের নিচে নির্মিত। পুরো এলাকা ঘিরে রয়েছে বিশেষ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সর্বক্ষণ পাহারা। এর মূল ভবনটি শক্ত কংক্রিট কাঠামোর মধ্যে, যা ইসরাইলের প্রচলিত অস্ত্রেও ধ্বংস করা অসম্ভব বলে মনে করা হয়।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই ফোরদো?
এখানে রয়েছে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও উন্নত সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি, যা দিয়ে ইরান নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম—এমন আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সির (IAEA) হিসাব মতে, ফোরদোতে প্রায় ৪০৮ কেজি উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম রয়েছে। আর এ কারণেই এটি ইসরাইলের জন্য একটি উদ্বেগজনক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০৯ সালে ফাঁস ফোরদোর গোপন অস্তিত্ব
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স একত্রে গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করে জানায়, ইরান পাহাড়ের নিচে একটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে, যা শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক।
এ তথ্য জানাজানির পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাজ্য ইরানকে সতর্ক করে এবং তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ইরানের কার্যক্রমকে প্রতারণা বলেও অভিহিত করেন।
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি ও ফোরদো
২০১৫ সালে বিশ্বের ছয় পরাশক্তি (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি) ইরানের সঙ্গে জেসিপিওএ (JCPOA) চুক্তিতে পৌঁছায়।
এই চুক্তির আওতায় ইরান:
ফোরদোকে একটি গবেষণা কেন্দ্রে রূপান্তর করতে রাজি হয়
সেন্ট্রিফিউজ সংখ্যা সীমিত রাখতে সম্মত হয়
১৫ বছরের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ রাখে
🇺🇸 ট্রাম্প প্রশাসনে ভাঙে সমঝোতা
২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান আবার উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে এবং ফোরদোকে আবার সক্রিয় করে তোলে।
ইসরাইলের হামলা এবং তার সীমাবদ্ধতা
১৪ জুন ইসরাইল ফোরদোতে হামলা চালায়, তবে বেশি ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, ফোরদো এতটাই সুরক্ষিত ও গভীর যে সেখানে আকাশপথে প্রচলিত বোমা ফেলেও কার্যকর ক্ষতি করা অসম্ভব।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক INSS-এর গবেষক ড্যানি বলেন:
“ফোরদো ইসরাইলের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং সম্ভবত চূড়ান্ত টার্গেট। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এই লক্ষ্য পূরণ কঠিন।”
⚠️ যদি ফোরদো টিকে যায়...
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ইসরাইল এই সাইট ধ্বংসে ব্যর্থ হয়, তবে ফোরদো ইরানের পারমাণবিক ব্রেকআউট প্রচেষ্টার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
এমনকি ইরান:
- পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার বিরোধী চুক্তি থেকে সরে আসতে পারে
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বন্ধ করে দিতে পারে
- দ্রুত পারমাণবিক বোমা তৈরির পথ বেছে নিতে পারে
আঁখি