ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

“পরবর্তী হামলা হবে আরও নির্ভুল, ধ্বংসাত্মক ও শক্তিশালী”— ইরান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৪১, ১৬ জুন ২০২৫

“পরবর্তী হামলা হবে আরও নির্ভুল, ধ্বংসাত্মক ও শক্তিশালী”— ইরান

ছবি: সংগৃহীত

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাত চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে রক্তক্ষয়ী রূপে। সোমবার(১৬ জুন) ভোরে ইরান একযোগে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েলের দিকে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত আটজন। পাল্টা আক্রমণে ইসরায়েল তেহরানের আকাশে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে, এমনকি শহরের বাসিন্দাদের সতর্ক করে এলাকা ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন জানান, “আমরা এখন তেহরানের আকাশে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতিরোধ ছাড়াই আমাদের যুদ্ধবিমান সেখানকার আকাশে উড়তে পারছে।”

তেহরানে কুদস ফোর্সের ১০টি ঘাঁটিতে হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের ১২০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করেছে বলে দাবি করা হয়েছে, যা ইরানের মোট ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ।

অন্যদিকে, ইরান জানায়, তারা ইসরায়েলের ওপর প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং প্রতিশোধ আরও কঠিন ও ধ্বংসাত্মক হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। শুক্রবার থেকে চলমান হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২২৪ জন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি—কমপক্ষে ৪০০ জন।

ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবে মার্কিন কনসুলেটের কাছে বিস্ফোরিত হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি নিশ্চিত করেন, এতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো মার্কিন নাগরিক হতাহত হননি।

ইসরায়েলের হিসাবে, ইরান এখন পর্যন্ত ৩৭০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও শত শত ড্রোন ছুড়েছে। এতে ইসরায়েলে মারা গেছেন অন্তত ২৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৫০০-এর বেশি মানুষ।


তেল আবিব ও পেতাহ টিকভায় ভয়াবহ দৃশ্য

সোমবার ভোরে ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে যখন ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দে কেঁপে উঠছে আকাশ, তখনই পেতাহ টিকভায় একটি আবাসিক ভবনে সরাসরি আঘাত হানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র। দেয়াল চূর্ণ, জানালা গুঁড়িয়ে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়।

ইসরায়েলের জরুরি চিকিৎসা সংস্থা মাগেন ডেভিড আদম (MDA) জানায়, ঘটনাস্থলে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন—দুইজন নারী, দুইজন পুরুষ এবং আরও একজন। পাশাপাশি ৮৭ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধারে চলছে তল্লাশি।

একজন বাসিন্দা ইয়োরাম সুচি বলেন, “সাইরেন বাজতেই আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। ফিরে এসে দেখি ঘরটাই আর নেই। তবে আমি বলব, এই লড়াইটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।”

MDA-এর এক প্যারামেডিক ডা. গাল রোজেন জানান, “একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে মাত্র চারদিন বয়সী এক শিশুকে উদ্ধার করেছি। চারদিকে তখনো আগুন জ্বলছিল।”


যুদ্ধ থামার ইঙ্গিত নেই

রবিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে আমরাও থামব।”
কিন্তু এরপরই ইসরায়েল আরও জোরালোভাবে আক্রমণ চালায়, এবার লক্ষ্য ছিল শুধু সামরিক ঘাঁটি নয়, তেল শোধনাগার ও সরকারি ভবনও।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড জানায়,“পরবর্তী হামলা হবে আরও নির্ভুল, ধ্বংসাত্মক ও শক্তিশালী।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি , হামলায় এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন ১,২৭৭ জন। তবে ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা Human Rights Activists দাবি করছে, নিহত হয়েছেন অন্তত ৪০০ জনেরও বেশি, যাদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনই সাধারণ নাগরিক।

এদিকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যে আগেই ইরানে বিস্ফোরক ড্রোন ও নির্ভুল অস্ত্র স্থাপন করেছিল, সেটিও প্রকাশ্যে এসেছে। ইরানে একাধিক ব্যক্তিকে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি জানায়, “মোসাদকে গোপন তথ্য সরবরাহের দায়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ইসমাইল ফেকরিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে তিনি কারাবন্দি ছিলেন।”


মধ্যপ্রাচ্য আরও অস্থিরতার পথে

ইরান ও ইসরায়েলের এই মুখোমুখি অবস্থান ইতোমধ্যেই গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়িয়েছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণ না করলে তা দ্রুতই পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে—যার প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্র, লেবানন, সৌদি আরব এমনকি ইউরোপেও।


তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম

Mily

×