
ছবি: সংগৃহীত।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে অনেক দেশই ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানালেও, তেহরানের সঙ্গে কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারত ইরানের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো নিন্দা জ্ঞাপন থেকেও নিজেকে দূরে রেখেছে।—খবর আল জাজিরার।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর হয়েছে। বর্তমানে ইসরায়েল ভারতের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। ড্রোন, রাডার সিস্টেম ও বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির মতো আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ভারত ইসরায়েল থেকেই পায়।
তবে শুধু অস্ত্র কেনাবেচাই নয়, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, যৌথ সামরিক মহড়া এবং প্রতিরক্ষা খাতে গবেষণাতেও দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করে থাকে। ফলে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলগত কাঠামোতে ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তায় ইরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চাবাহার বন্দর, যা ভারতের বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য একটি বিকল্প করিডোর হিসেবে কাজ করে—যা পাকিস্তানকে এড়িয়ে চলার সুযোগ দেয় ভারতকে।
যদিও সামরিক পর্যায়ে সহযোগিতা তুলনামূলকভাবে সীমিত, তবুও ভারত ও ইরান আঞ্চলিক সমুদ্র নিরাপত্তা ও জলদস্যুবিরোধী অভিযানে যৌথভাবে অংশ নিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ইরান ও ইসরায়েল—উভয় দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে অবস্থান নেয়। দিল্লির মতে, উত্তেজনা না বাড়িয়ে কূটনৈতিক উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা উচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে ইসরায়েলের বড় অস্ত্র ক্রেতা এবং অন্যদিকে ইরানের চাবাহার বন্দরে প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে ভারত একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখতে বাধ্য। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থও তার এই কৌশলগত নিরপেক্ষতাকে প্রভাবিত করছে।
এসসিও-র (Shanghai Cooperation Organisation) মতো ফোরামে ভারতের অবস্থান অনেক সময় অন্য সদস্যদের তুলনায় আলাদা লক্ষ্য করা যায়, যা তার স্বতন্ত্র কূটনৈতিক ব্যালান্স নীতিরই প্রতিফলন।
নুসরাত