ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে, দাবি ইসরায়েলের

প্রকাশিত: ২১:১১, ১৬ জুন ২০২৫

ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে, দাবি ইসরায়েলের

ছবিঃ সংগৃহীত

ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির নকশা পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছিল—এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েল ইরানে সাম্প্রতিক প্রতিরোধমূলক হামলা চালায় বলে দাবি করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলি সামরিক রেডিও ‘আর্মি রেডিও’র বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, ইরানি বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত পরীক্ষা সফলভাবে শেষ করেন। এতে ধারণা করা হয়, ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হতো। এ তথ্য পাওয়ার পরই ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে হামলার সিদ্ধান্ত নেন।

তবে কর্মকর্তারা এটাও স্বীকার করেছেন যে, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া এখনো কঠিন। ধারণা করা হচ্ছে, বাস্তবে তারা যা ভাবা হচ্ছে তার চেয়েও অনেক বেশি অগ্রসর অবস্থায় রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষদিক থেকে বা ২০২৪ সালের শুরুতে ইরানি বিজ্ঞানীরা কয়েকটি গোপন দলে বিভক্ত হয়ে এমন এক প্রকল্পে কাজ শুরু করেন, যার মাধ্যমে পারমাণবিক উপাদানকে কার্যকর বিস্ফোরক যন্ত্রে রূপান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পরপরই এই কার্যক্রম জোরদার হয়।

এদিকে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইরান যদি তার ইউরেনিয়াম মজুতকে আরও সমৃদ্ধ করে, তাহলে তা দিয়ে অন্তত নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, তারা ইরানের এই গোপন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছিল এবং নিশ্চিত হয়েছে যে, ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ৯ জন শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং তারা নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পারমাণবিক প্রকৌশলী ফেরেদুন আব্বাসি, পদার্থবিদ মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি, রাসায়নিক প্রকৌশলী আকবর মোতালেবি জাদেহ, ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ার সাঈদ বার্জি, পদার্থবিদ আমির ফাকাখি এবং আরও অনেকে।

আইডিএফ জানিয়েছে, এরা প্রত্যেকেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মস্তিষ্ক ছিলেন এবং তাদের অনেকেই মোহসেন ফাখরিজাদেহের উত্তরসূরি ছিলেন, যিনি ২০২০ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন এবং যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়।

ইসরায়েলি বাহিনীর ভাষ্য, “আমাদের সামনে কোনো বিকল্প ছিল না। ইরান এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যেখান থেকে তারা যে কোনো মুহূর্তে পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারত।”

এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও সামরিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে পুরো বিশ্বজুড়ে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে এখনো এই হামলা ও অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

আলীম

×