ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার তেলআবিব ও হাইফা, ইসরায়েলের কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:১১, ১৬ জুন ২০২৫

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার তেলআবিব ও হাইফা, ইসরায়েলের  কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি

ছবিঃ সংগৃহীত

সোমবার ভোররাতে ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের তেলআবিব ও হাইফা শহরে আঘাত হানে। এতে অন্তত আটজন নিহত এবং বহু বাসস্থান ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন— “তেহরানের মানুষকে এর মূল্য দিতে হবে, এবং সেটা খুব শিগগিরই।”

যদিও পরবর্তী বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য সাধারণ মানুষ নয়।

 “ঘরও আর নিরাপদ নয়”— এক তরুণ শেফের অভিজ্ঞতা
৩১ বছর বয়সী তেলআবিবের বাসিন্দা গাইডো টেটেলবাউম বলেন, “ভোর ৪টায় সাইরেন বাজতেই পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাই। মিনিট কয়েকের মধ্যেই দরজাটা বিস্ফোরণে উড়ে যায়। ভয়টা সবচেয়ে বেশি এই অনিশ্চয়তার—এই যুদ্ধ কবে থামবে, আদৌ থামবে কি না!”

প্রাণহানি ও ধ্বংস
ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ইরানি হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৪—সবাই সাধারণ নাগরিক। আহত শতাধিক।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সেখানে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২২৪ জনের, যার ৯০ শতাংশই সাধারণ মানুষ।

হামলা হয়েছে বাজার, হোটেল, এমনকি মার্কিন দূতাবাসের পাশেও
তেলআবিবের জনবহুল শুক হাকারমেল বাজারের পাশেও ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে। এ এলাকায় ভোরবেলা থেকেই মানুষের ভিড় থাকে, বিশেষ করে সবজি ও ফল কেনাকাটার জন্য। এখন সেখানে ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই নেই।

মার্কিন দূতাবাসের আশেপাশের হোটেল ও ভবনের জানালা ভেঙে পড়েছে। দূতাবাস জানিয়েছে, তাদের কোনো কর্মী আহত হননি, তবে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুদ্ধের কৌশল ও পাল্টা দাবি
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের ওপর আকাশপথে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ইরানের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে। এছাড়া, ইরানের বিপ্লবী গার্ডের চারজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে।

ইরান পাল্টা দাবি করেছে, তারা এমন এক নতুন কৌশল ব্যবহার করেছে যার ফলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পেরেছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব
ইরানের মুদ্রা রিয়ালের মান এরই মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। বাজারে অস্থিরতা বেড়েছে, মানুষের মধ্যে খাবার ও জরুরি পণ্য মজুদের প্রবণতা বাড়ছে।

তেলের দাম শুক্রবার ৭ শতাংশ বাড়লেও সোমবার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে, কারণ সরাসরি কোনো তেল রপ্তানি কেন্দ্র হামলার শিকার হয়নি।

বিশ্বনেতারা উদ্বিগ্ন, শান্তির আহ্বান
কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে এই যুদ্ধ ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমি চাই একটি চুক্তি হোক। সময় এসেছে। তবে মাঝে মাঝে যুদ্ধ করেই সেই চুক্তির পথ তৈরি হয়।”

তিনি ইরানকে সতর্ক করেন যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রকে এ যুদ্ধে না টানে।

“এই যুদ্ধ কবে থামবে?” — মানুষের মুখে এখন একটাই প্রশ্ন
ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধ আরও বাড়বে।
ইরান বলছে, তারা আত্মরক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়বে।
কিন্তু সাধারণ মানুষ—তারা কেবল চায়, বোমার শব্দ থামুক, প্রাণহানি বন্ধ হোক।

মধ্যপ্রাচ্যে একেকটা ক্ষেপণাস্ত্র শুধু ভবন ধ্বংস করছে না—ভেঙে দিচ্ছে মানুষের ঘুম, ভয়হীন থাকার সাহস, শান্তিতে বাঁচার স্বপ্ন। এই আগুন আর কতদূর ছড়াবে, তা আজ কেউ জানে না।

তথ্যসূত্রঃ রয়টর্স

মারিয়া

×