
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর। ইসরায়েল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইরানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। হামলায় ইরানের সেনাপ্রধানসহ একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে চালানো এ অভিযানে ২০০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এবং ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। মূলত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে প্রতিহত করতেই এই হামলা, যা আগামীতেও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
তেহরান, নাতাঞ্জ ও ফোর্ডোর পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নাতাঞ্জে একটি ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট আংশিক ধ্বংস হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তার কোনো অতিরিক্ত মাত্রা শনাক্ত হয়নি।
এ হামলায় ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও বিপ্লবী গার্ড কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিতে যুক্ত কমপক্ষে ছয়জন বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
ইরান এই হামলার পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তেল আভিভ ও জেরুজালেমে বিমান হামলা সতর্কতা বাজানো হয়, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যায়। এসব হামলায় অন্তত তিনজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ হামলাকে “সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ অভিযানে অংশ নেয়নি।
এদিকে, সৌদি আরব, তুরস্ক ও কাতারসহ একাধিক দেশ ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয়পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে “সম্পূর্ণ সংঘর্ষের দিকে না যাওয়ার জন্য” আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক যুদ্ধের দ্বার খুলে দিতে পারে, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো বিশ্বে। তেলের দাম ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে ৭ শতাংশ বেড়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, আল-জাজিরা
সানজানা