ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

"আজ রাতে কোনো রকেট, কোনো বোমার শব্দ ছাড়াই ঘুমাতে পারব"

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে জর্ডানে পৌঁছেছে অপুষ্ট শিশু সিওয়ারের পরিবার

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ১২ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৮:০৮, ১২ জুন ২০২৫

ছবিঃ সংগৃহীত

মাত্র ছয় মাস বয়সী শিশু সিওয়ার আশুর অবশেষে গাজার বিভীষিকা পেরিয়ে চিকিৎসার জন্য জর্ডানে পৌঁছেছে। সিওয়ারকে নিয়ে তার মা, বাবা ও দাদী জর্ডানে প্রবেশ করার সময় চোখে-মুখে ছিল স্বস্তি ও বিজয়ের আবেগ।

২৩ বছর বয়সী মা নাজওয়া বলেন, “এখানে এসে মনে হলো যেন একটা যুদ্ধবিরতি চলছে। আজ রাতে কোনো রকেট, কোনো বোমার শব্দ ছাড়াই ঘুমাতে পারব ইনশাআল্লাহ।”

সিওয়ারের ওজন মাত্র ৩ কেজি, যা তার বয়স অনুযায়ী অর্ধেক। তার মা নাজওয়া ও চিকিৎসকরা জানান, গাজায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর দুধ না পাওয়ার কারণে সে মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছিল। এমনকি নাজওয়াও দুধ খাওয়াতে অক্ষম ছিলেন, কারণ তিনিও অপুষ্টিতে আক্রান্ত।

পরে জর্ডানের ফিল্ড হাসপাতাল ও বেসরকারি উদ্যোগে কিছু দুধের টিন সরবরাহ করা হলেও, ইসরায়েলি অবরোধ ও চিকিৎসা সংকটের কারণে সিওয়ারের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছিল না।

ফেব্রুয়ারিতে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি সমঝোতার মাধ্যমে গাজা থেকে ২,০০০ গুরুতর অসুস্থ শিশুকে জর্ডানে চিকিৎসার জন্য আনার ঘোষণা আসে। সেই অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৭ জন শিশু ও ১১৩ জন পরিবার সদস্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বুধবার সিওয়ারসহ ১৬ শিশু জর্ডানে পৌঁছায়।

সিওয়ারের দাদী রীম যখন তাকে কোলে করে বাস থেকে নামেন, তখন তিনি আঙুলে 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে বিজয়ের প্রতীক তুলে ধরেন। “আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি জর্ডানে পৌঁছেছি,” আবেগঘন কণ্ঠে বলেন রীম, “বাদশাহ আবদুল্লাহর ছবি দেখে এতটাই খুশি হয়েছিলাম যে, বিজয়ের চিহ্ন দেখিয়েছি সিওয়ারের জন্য।”

সিওয়ারের বাবা সালেহ, যিনি দৃষ্টিশক্তিহীন, বলেন, “এই যাত্রার একমাত্র লক্ষ্য হলো সিওয়ারকে নিরাপদ ও সুস্থ করা। সে আমার রক্ত-মাংসের সন্তান। আমি খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম।”

সিওয়ারের পরিবার সহ গাজার অনেক পরিবারই ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে বারবার স্থানান্তরে বাধ্য হয়েছে। খাবার বা চিকিৎসা পাওয়ার আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে। অনেকে আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছে, আর কেউ কেউ বেঁচে থাকলেও মানসিক আঘাতে জর্জরিত।

আম্মানে পৌঁছে সিওয়ারকে এক নার্সের হাতে তুলে দেওয়া হয়, এবং পরে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর করা হয়। আগামী কয়েকদিনে সে সেই চিকিৎসা পাবে, যা গাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে অসম্ভব।

সবচেয়ে বড় কথা, এখন তার মা, বাবা ও দাদী ভয়ের বাইরে, কিছুটা হলেও নিরাপত্তার স্বস্তিতে ঘুমোতে পারবেন।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

আরো পড়ুন  

×