ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্প-ক্যালিফোর্নিয়া উত্তেজনা তুঙ্গে, লস অ্যাঞ্জেলেসে পেন্টাগনের ৭০০ মেরিন মোতায়েন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ১০ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫০, ১০ জুন ২০২৫

ট্রাম্প-ক্যালিফোর্নিয়া উত্তেজনা তুঙ্গে, লস অ্যাঞ্জেলেসে পেন্টাগনের ৭০০ মেরিন মোতায়েন

ছবিঃ হিন্দুস্তান টাইমস

লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান বিক্ষোভ ঘিরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর গ্যাভিন নিউসোমের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পেন্টাগনের নির্দেশে লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় ৭০০ মেরিন মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করবে। এদিকে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া।

মার্কিন উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ড জানিয়েছে, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার টুয়েন্টিনাইন পামস ঘাঁটি থেকে আসা এই মেরিন সদস্যদের মূল দায়িত্ব হবে—ফেডারেল ভবন, কর্মকর্তা এবং অভিবাসন এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এই মোতায়েনের পেছনে কারণ, শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ৪০ জনের বেশি মানুষকে আটক করে, যার জেরে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম সংঘর্ষ ঘটে একটি ফেডারেল আটক কেন্দ্রে, যেখানে বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের ব্যাপক নির্বাসন অভিযানের প্রতিবাদে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানায়।

যদিও পস কমিটেটাস অ্যাক্ট অনুযায়ী সেনাবাহিনী আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে না এবং প্রেসিডেন্ট এখন পর্যন্ত ইনসারেকশন অ্যাক্ট কার্যকর করেননি, তবে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে তিনি ভবিষ্যতে এমন কিছু করবেন কিনা।

প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সোমবার ৭০০ সক্রিয় ডিউটির মেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এটা স্পষ্টতই প্রশাসনের কড়া প্রতিক্রিয়া এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি বড় পদক্ষেপ।

গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “হেগসেথের মন্তব্য বিকৃত মানসিকতার পরিচায়ক।” তিনি জানান, রাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসন নিজেরাই পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম।

লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের প্রধান জিম ম্যাকডোনেল বলেন, “আমার বাহিনীর উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।” তবে তিনি জানান, পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়াই মেরিন মোতায়েন করায় তা ‘যথেষ্ট লজিস্টিক ও অপারেশনাল জটিলতা’ তৈরি করেছে।

এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্তা জানিয়েছেন, রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই সেনা মোতায়েন করে ট্রাম্প প্রশাসন ক্যালিফোর্নিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। তিনি জানান, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা মামলা দায়ের করছেন।

ট্রাম্প তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, “বিক্ষোভের মাধ্যমে ফেডারেল আইন প্রয়োগ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, এটি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মতো।” তিনি আরও দাবি করেন, জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী না পাঠালে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর "পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতো।"

এরইমধ্যে, ফেডারেল বাহিনী মোতায়েনের বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়া আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে—এই পদক্ষেপ মার্কিন সংবিধানের ১০ম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে, কারণ এটি বিদ্রোহ, আক্রমণ বা আইনপ্রয়োগের বাধার মতো কোন পরিস্থিতির আওতায় পড়ে না।

সোমবার দুপুর নাগাদ প্রায় ১,০০০ জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন ছিলেন, এবং সন্ধ্যার মধ্যে সেই সংখ্যা ২,০০০-এ পৌঁছাতে পারে বলে জানানো হয়।

এদিকে, হুইটিয়ার এবং হান্টিংটন পার্ক এলাকায় ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের উপস্থিতির খবরে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি হলের সামনে কয়েক হাজার মানুষ শ্রমিক নেতা ডেভিড হুয়ের্তার সমর্থনে জড়ো হন। অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় হুয়ের্তা গ্রেফতার হন এবং পরে ৫০,০০০ ডলারের জামিনে মুক্তি পান।

সপ্তাহজুড়ে বিক্ষোভে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, এমনকি কেউ কেউ পুলিশের দিকে মলোটোভ ককটেল ছুঁড়েছে এবং একজন মোটরসাইকেল চালক পুলিশের সারির মধ্যে ঢুকে পড়ে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মুমু

আরো পড়ুন  

×