
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ‘সিলভার পিক’ লিথিয়াম খনি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আধুনিক অবকাঠামো ও অনন্য ভূপ্রকৃতির এই খনি সম্প্রসারণের অনুমতি পেলে বছরে ১০,০০,০০০ কেজি লিথিয়াম প্রক্রিয়াকরণ করতে পারবে—যা যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক লিথিয়াম বাজারে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে এবং চীনের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হবে।
৬০-এর দশক থেকেই লিথিয়াম উৎপাদন, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একমাত্র খনি
নেভাদার সিলভার পিক এলাকায় ১৯৬০-এর দশক থেকে লিথিয়াম উৎপাদন চলছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র সক্রিয় লিথিয়াম খনি, এবং এর মাধ্যমে দেশটি বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২% লিথিয়াম সরবরাহ করে থাকে। এই খনিটির মালিকানায় থাকা মার্কিন কোম্পানি Albemarle সম্প্রতি খনির উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল।
বাজার অস্থিরতায় স্থগিত ১.৩ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প
Albemarle কোম্পানি এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, লিথিয়াম বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ ও দামের ব্যাপক পতনের কারণে তারা আপাতত এই উন্নয়ন পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। উল্লেখ্য, খনি সম্প্রসারণ ও যুক্তরাষ্ট্রে সর্ববৃহৎ লিথিয়াম রিফাইনারি স্থাপনের এই পরিকল্পনার সম্ভাব্য ব্যয় ছিল ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চীনের অতিরিক্ত উৎপাদন ও বাজারে ‘নীরব যুদ্ধ’
বিশ্ববাজারে চীনের প্রভাব এবং সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করলে চীন সাতটি রেয়ার আর্থ উপাদান রপ্তানি বন্ধ করে ‘নীরব বাণিজ্যযুদ্ধ’ ঘোষণা করে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প খনিজ উৎস থাকা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
“গণনা মেলেনা”—বলেন Albemarle-এর CEO
Albemarle-এর প্রধান নির্বাহী কেন্ট মাস্টার্স বলেন, আজকের বাজার পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক হিসাবটা কাজ করছে না। আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সাপ্লাই চেইন গড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু এই মুহূর্তে সেই অর্থনীতি দাঁড় করানো কঠিন।
তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একা এটা করতে পারবে না। সরকারি সহায়তা ছাড়া এই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
৭৪% দাম কমেছে, তবু আশার আলো
গত দুই বছরে লিথিয়ামের দাম প্রায় ৭৪% হ্রাস পেয়েছে, যা এই খাতকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। তবুও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দাম স্থিতিশীল হলে অথবা সরকারি প্রণোদনা পেলে সিলভার পিক খনি চীনের সমকক্ষ উৎপাদনকারী হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।
মার্কিন লিথিয়াম ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে স্থিতিশীল নীতি ও সরকারি সহায়তার উপর
বিশ্বব্যাপী ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির চাহিদা বেড়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে লিথিয়ামকে বলা হচ্ছে ‘সাদা তেল’। যুক্তরাষ্ট্র যদি নিজের মাটিতে উৎপাদন বাড়াতে পারে, তবে বিদেশি নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে। কিন্তু তার জন্য দরকার স্থিতিশীল নীতি, সরকারি বিনিয়োগ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।