সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বুধবার ইয়েমেনের প্রধান বন্দর নগরী হোদেইদায় সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করেছে। সৈন্যদের সমর্থনে এ হামলাটি চালান হয়। আরব রাষ্ট্রগুলোর জোট ও ইরান সমর্থিত হুতিদের মধ্যে চলা তিন বছরের যুদ্ধে এটিই সবচেয়ে বড় ধরনের হামলা।- খবর ইয়াহু নিউজের।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেনের সরকার তার মিডিয়া অফিসে জারি করা এক বিবৃতিতে বলেছে, জোটবাহিনী যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের মাধ্যমে পদাতিক সেনাদের সহায়তায় হুতিদের দুর্গে হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনের সামরিক বাহিনী রেড সি পোর্টের দক্ষিণে অবস্থান নেয়। হুতিদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হওয়ার পর হামলাটি শুরু হয়। হুতিরা রাজধানী সানা দখল করে রেখেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা একমাত্র বন্দর হোদেইদা হস্তান্তরের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
হোদেইদা হচ্ছে ইয়েমেনের সবচেয়ে বড় বন্দর। এটি ইয়েমেনের অধিকাংশ মানুষের কাছে বৈশ্বিক যোগাযোগের একমাত্র বন্দর। হুতি অঞ্চলে এটি অবস্থিত। ইয়েমেনের নির্বাসিত সরকার কর্তৃক পৃথক বিবৃতিতে ইয়েমেনি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, হোদেইদা বন্দরের মুক্তি আমাদের লড়াইয়ের একটি টার্নিং পয়েন্ট। যা মিলিশিয়াদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে ইয়েমেন। বিদেশীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই এটি অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। বন্দরের মুক্তি মিলিশিয়াদের পতনের শুরু ও বাব আল-মানদেব প্রণালীর সামুদ্রিক জাহাজগুলোতে নিরাপদ করতে এবং ইরানের কর্তৃত্ব বিচ্ছিন্ন করতে হামলাটি করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা ইয়েমেনের লড়াইয়ের জন্য বহু মানুষের রক্ত ঝরেছে। এর মধ্য দিয়ে অস্ত্রের মহড়া চলছে।
এই হামলায় প্রথমবারের মতো পশ্চিমা সমর্থিত জোটগুলো অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই উপসাগরীয় দেশ রয়েছে। জোটটি ২০১৫সালে গঠন করা হয়। তারা এ ধরনের বৃহৎ শহর পুনরুদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। হামলার লক্ষ্য হচ্ছে, সানায় হুতিদের লড়াইকে দমন করা। যাতে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে আলোচনার টেবিলে জোর করে বসানো সম্ভব হয়। জোট চেষ্টা করছে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মনসুর হাদির সরকারকে পুনরায় ক্ষমতাসীন করা। পাশাপাশি রিয়াদ ও আবুধাবি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ইরান সমর্থিত শিয়া বাহিনীর বিস্তার রোধ করার। যদিও হুতিরা ইরানের সমর্থনকে অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, তাদের বিদ্রোহের লক্ষ্য হচ্ছে, দুর্নীতি ও আক্রমণকারীদের হাত থেকে ইয়েমেনকে রক্ষা করা।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জাতিসংঘ চেষ্টা করেছিল সব পক্ষকে নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর। যাতে হামলা প্রতিরোধ করতে পারে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইয়েমেনে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ পাঠানো কঠিন হয়ে যাবে। এতে জরুরী মানবিক সঙ্কটে পড়বে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র আরব রাষ্ট্রটি। সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, জোটের সেনারা বন্দরে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। যাতে হুতিদের সতর্ক করে দিয়ে তাদের সব অবকাঠামো ভেঙ্গে দিতে, ভূমি ও সমুদ্রের খনিগুলো থেকে তাদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতামন্ত্রী রিম আল-হাশেমি বলেন, যদি হুতিদের কাছ থেকে বন্দরটি ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হয় তাহলে জোট সেখানকার নিয়ন্ত্রণ নেবে। তারা গোষ্ঠীটিকে নিরস্ত্র করবে। বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার লক্ষ্য হচ্ছে, ইয়েমেনে পণ্য ও ত্রাণ তৎপরতা সহজ করা। যাতে লাখ লাখ লোককে দুর্ভিক্ষ ও রোগের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। রিয়াদ জানিয়েছে, হুতিরা বন্দরটিকে ইরানের তৈরি অস্ত্র পাচার করার কাজে ব্যবহার করছে। যার মধ্যে মিসাইল রয়েছে। যেগুলো সৌদি শহরকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কাজে লাগায়। অভিযোগ অস্বীকার করেছে হুতি ও ইরান।