অনলাইন ডেস্ক॥ তিউনিসিয়ায় শুধুমাত্র নারীদের জন্য তৈরি একটি কারাগারে সম্প্রতি প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিল বিবিসি।
নারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হলেও কারাগারটি খুব দ্রুতই জনাকীর্ণ হয়ে পড়ছে।
বিশেষ করে তিউনিসিয়ার কঠোর মাদকবিরোধী আইনের কারণে, যে আইন অনুযায়ী যে কোন মাদক অপরাধের জন্য নিদেনপক্ষে এক বছর কারাগারের বিধান রয়েছে।
তিউনিসের উপকন্ঠে মেনুবা কারাগারের অভ্যর্থনা কক্ষ।
বিবিসি সংবাদদাতা সেখানে যেয়েই কিছু দূরেই দেখতে পেলেন একজন তরুণী দীর্ঘক্ষণ যাবত কান্নাকাটি করে যাচ্ছেন। সংবাদদাতা এগিয়ে গেলেন তাঁর দিকে।
ওই তরুণী বলছিলেন, গাঁজা সেবনের অপরাধে গত তিন সপ্তাহ যাবত তিনি কারাগারে রয়েছেন। একই অপরাধে তাঁর স্বামীও রয়েছেন কারাগারে।
আইন অনুযায়ী এই অপরাধের স্বয়ংক্রিয় শাস্তি অন্তত এক বছরের কারাদণ্ড।
তিনি কাঁদছেন কারণ তাঁর তিন শিশুসন্তানকে এতিমখানায় পাঠানো হয়েছে।
“আমার বাচ্চাদের কথা খুব মনে পড়ে। আমি তাদের কাছে যেতে চাই। অনেক দেশে এ ধরনের মাদক অপরাধে কোন মামলাই নেই। শুধু আমাদের আছে। এ কারণে অনেক মানুষের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সামান্য কারণে পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে”।
অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে সামান্য দূরেই রয়েছে শিশুদের নার্সারি।
নার্সারির সামনের কক্ষে টিভি রয়েছে, অনেক খেলনা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক শিশু তাদের প্রথম পা ফেলছে এই নার্সারিতেই।
এখানে উন্নয়নের একটি চিহ্ন হচ্ছে এই নার্সারিটি। যেটি সন্তানসহ মা এবং সন্তানসম্ভবা নারীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে।
যেমন আনাল, সই জাল করার অভিযোগে গত ৫ মাস যাবত সে এই কারাগারে বন্দী রয়েছে। তাঁর দাবী, সে নির্দোষ।
“বিচার মন্ত্রণালয়ের উচিত সই জালের মতো মামলা দ্রুত বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সমাধান করা। ধীরগতির বিচারপ্রক্রিয়া আমাদের ওপর প্রভাব ফেলে। আমার সন্তান কেন এখানে জন্ম নেবে? তারা বলছে, এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু তারপরও এটি কারাগার”।
নারীদের কারাগারটিতে প্রায় ৪২০ জন বন্দী রয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
সংবাদদাতাকে বন্দীদের একটি কক্ষে প্রবেশাধিকার দেয়া হলো, যেটিতে বসবাস করছে ৩৫ জন বন্দী।
আর তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্দী, সামিরা।
“এই কক্ষটির অবস্থা তুলনামূলক ভালো, কারণ আমরা এখানে কাজ করি। যে কারণে বাইরে যাবার সুযোগ পাই। কিন্তু অন্যান্য কক্ষগুলোর অবস্থা এটির মতো নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি”।
দু'পাশে সারি বাঁধা বিছানার মাঝ দিয়ে হাটছিলেন সামিরা। বিছানাগুলোর চারপাশে রঙ্গিন পর্দা দিয়ে সাজানো।
কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প করছে, কেউ খাবার খাচ্ছে, আবার কেউ কেউ ধুমপান করছে।
এই কারাগারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীর মিশ্রণ তৈরি হয়েছে।
কেউ হয়তোবা এখানে আছেন চুরির মতো সামান্য অপরাধে, আবার অনেকে গুরুতর অপরাধে।
সামিরা বলছিল, কোন কোন কক্ষে সন্ত্রাসবাদের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীরাও রয়েছে।
কারাগারটির পরিচালক জামিলা স্মিদা বলছেন, নারীদের জন্য নির্মিত এই কারাগারটি কারাব্যবস্থা সংস্কারের একটি বড় উদাহরণ।
তবে একইসাথে বলছেন, তাদের কিছু করার সুযোগও খুব সীমিত।
“সমস্যা শুধু কারা প্রশাসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিচারব্যবস্থা এবং শাস্তির বিধানেও সমস্যা রয়েছে"।
কারাবন্দী করার পরিবর্তে আরো বেশি মানুষকে পুনর্বাসনের জন্য তিউনিসিয়ার সরকারের ওপর চাপ রয়েছে।
কিন্তু অনেকে বলেন, যদি আইনের সংস্কার না হয়, তবে কারাব্যবস্থার সংস্কার খুব বেশি প্রভাব রাখতে পারবে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: