ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরাইল চলমান উত্তেজনাতেও থেমে নেই গাঁজায় মৃত্যুর মিছিল

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৫ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরাইল চলমান উত্তেজনাতেও থেমে নেই গাঁজায় মৃত্যুর মিছিল

ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় কমপক্ষে ৫৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের অপেক্ষমাণ বেসামরিক নাগরিক। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, শনিবার ভোরে গাজা সিটির তাল আল-হাওয়া এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতদের মধ্যে ১২ শিশু ও ৮ নারী রয়েছেন।

এই হামলাটি ঘটেছে একটি মার্কিন-সমর্থিত খাদ্য ও ওষুধ বিতরণ কেন্দ্রে, যেখানে কয়েকশত উদ্বাস্তু পরিবার রাতভর লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা আবু ওমারের বিবরণ মর্মস্পর্শী: "আমি শুধু আমার পরিবারের জন্য এক বোতল পানি ও কিছু বিস্কুট নিতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণে আমার সামনের সারির মানুষগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেল।" তাঁর ৮ বছর বয়সী মেয়ে লামিসা এখন হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৮,৭০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এই হামলাকে "যুদ্ধাপরাধের সম্ভাব্য ঘটনা" হিসেবে চিহ্নিত করেছে, বিশেষ করে যখন এটি একটি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত মানবিক সাহায্য কেন্দ্রে ঘটেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একটি বিবৃতিতে "সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের" আহ্বান জানালেও, তারা ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা করেনি। এই দ্বিমুখী অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর জাতিসংঘে জিজ্ঞাসা করেছেন, "কত শিশুর রক্তপাত হলে বিশ্ব совесть проснется?"

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা গাজায় হামাসের একটি গোপন কমান্ড সেন্টার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে স্থানীয় স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা আল জাজিরাকে বলেছেন, হামলার স্থান থেকে নিকটতম সামরিক স্থাপনা কমপক্ষে ৩ কিলোমিটার দূরে ছিল।

এই হামলার পর গাজার দক্ষিণে রাফাহ সীমান্ত Crossing বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে থেকে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো সাহায্য পাঠায়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, "এখন গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে ৬টি অপুষ্টিতে ভুগছে।"

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই হামলার ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এ অভিযোগ দায়ের করবে। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক ওমর শাকির বলেছেন, "এটি একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ। মানবিক সাহায্যকর্মী ও বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করা আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।"

এই রক্তপাতের মধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছেন কিছু মানবিক কর্মী। গাজার আল-শিফা হাসপাতালের ডা. মুহাম্মদ আবু সেলমিয়া বলেছেন, "আমরা ২৪ ঘণ্টায় ৩০০-এর বেশি অপারেশন করছি। বিদ্যুৎ ও ওষুধের অভাবে অনেক রোগীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। কিন্তু আমরা হাল ছাড়ছি না।"

শেষ পর্যন্ত, গাজার এই রক্তাক্ত অধ্যায় কবে শেষ হবে তা কারও জানা নেই। কিন্তু প্রতিটি নতুন হামলা যেন বিশ্ব বিবেককে প্রশ্ন করছে: মানবতার জন্য কতটুকু সহ্য করা সম্ভব? তথ্যসূত্র: https://www.aljazeera.com/news/2025/6/14/israel-kills-at-least-58-people-in-gaza-many-at-us-backed-aid-site-medics

সাব্বির

আরো পড়ুন  

×