জুলাই অভ্যুত্থানের সাক্ষ্যবহ নাটক ‘দেয়াল জানে সব’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সাক্ষ্যবহ জুলাই মাস। সেই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে ১১টি নতুন নাটক মঞ্চে আনছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সেই ¯্রােতধারায়  মনসুন রেভ্যুলেশনের  চেতনাকে উপজীব্য করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নির্মিত নয়া প্রযোজনা ‘দেয়াল জানে সব’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্পন্দন থিয়েটার সার্কেল প্রযোজিত নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় শিল্পকলা একাডেমি জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলানায়তনে। 
নাটকটির কাহিনীর কেন্দ্রে রয়েছে এক নীরব চরিত্র ‘দেয়াল’।  সে  দেখছে সব, জানে সব। তার  চোখের সামনে রিক্সাচালক রহিমুদ্দিনের মৃত্যু হয়। থেমে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্রর প্রাণচাঞ্চল্য। গার্মেন্টসকর্মী আসমার স্বপ্নভঙ্গ হয়। শিশু রাফির নির্মম বিদায় এবং হাসপাতালের করুণ চিত্রÑসবই ফুটে উঠেছে প্রতীকী কফিনের মাধ্যমে।
স্পন্দন থিয়েটার সার্কেলের নতুন প্রযোজনা ‘দেয়াল জানে সব’ সমকালীন বাস্তবতার গর্ভে জন্ম  নেওয়া এক  নাটক। নাটকটির রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন শাকিল আহমেদ সনেট। নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক বলেন,  এই নাটকটি আমার কাছে  কেবল পাঁচটি মৃত্যু, পাঁচটি কফিনের গল্প নয়; এটি একটি ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের, ভাঙা স্বপ্নের, জর্জরিত বিশ্বাসের এবং  শেষ পর্যন্ত  পরাজিত না হওয়ার  স্বপ্নময় প্রতিচ্ছবি।

এ নাটকে আমি চেয়েছি এক অদৃশ্য কালরেখা  টেনে দিতে,  যেখানে বাস্তবতা ও বিমূর্ততা একাকার হয়ে যায়।  যেখানে দর্শক একইসঙ্গে দেখে মৃত্যুর মুখ এবং শুনতে পায় তার উল্টো পিঠে থাকা জীবনের গান।  যেখানে কফিনের  নৈঃশব্দ্য ছাপিয়ে জেগে ওঠে জন্মের স্পন্দন। এই প্রয়াস উৎসর্গ তাদের জন্য, যারা হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসে প্রতিটি বিপ্লবের  ভোরে।
প্রসঙ্গক্রমে সনেট বলেন, মঞ্চসজ্জা, আবহসঙ্গীত ও আলো-ছায়ার খেলায় দর্শক এক অন্তর্গত বাস্তবতার ভেতর প্রবেশ করেÑযেখানে সময়  নেই, স্থান  নেই, শুধু কালের  দেয়ালে লেখা বিস্মৃত মানুষের আর্তনাদ। নাটকটিতে ব্যবহৃত হয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক সংলাপ, জীবনঘনিষ্ঠ দৃশ্য নির্মাণ, আধুনিক আলোক পরিকল্পনা ও বিমূর্ত কোরিওগ্রাফি। নাটকের আবহসঙ্গীতে ব্যবহার করা হয়েছে হারমোনিয়াম, বাঁশি ও হুইসেলের বিমূর্ত শব্দ যা কফিনের স্তব্ধতার সঙ্গে  দেয়ালের নীরবতা মিলিয়ে এক অন্তর্জাগতিক শূন্যতার অনুভূতি সৃষ্টি  করে।
‘দেয়াল জানে সব’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিতাদিত্য বড়–য়া, জয়ন্ত ত্রিপুরা, আকাশ মিয়া, নুসরাত জাহান, কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মণ, নারিন আফরোজ লিনসা প্রমুখ।  সেট ও প্রপস পরিকল্পনা করেছেন উৎপল নীল, সুর ও সংগীতে অর্পা খন্দকার চাঁদনী, পোশাক পরিকল্পনায় শাকিল আহমেদ সনেট ও উৎপল নীল,  কোরিওগ্রাফিতে কৃষ্ণ ও জয়ন্ত এবং আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন অম্লান বিশ্বাস।