ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় পুণ্যাহ নাটকের ২৮তম মঞ্চায়ন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পকলায় পুণ্যাহ নাটকের ২৮তম মঞ্চায়ন

‘পুণ্যাহ’ নাটকের দৃশ্যে সংগীতা চৌধুরী

প্রবল ঝড় আছড়ে পড়েছে কাকরগাছি গ্রামে। সেই ঝড়ের দাপটে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো গ্রাম। সংস্কারাচ্ছন্ন জনপদের লোকজন এই পরিণতির জন্য নিজেরাই নিজেদের মুখোমুখি দাঁড়ায়। অতঃপর নিজেদের পাপ খুঁজে  বের করতে চায়। পাপী কে? এই অনুসন্ধান তৎপরতায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে সকলে। তখন মনে হয়, কাকরগাছি  কোনো বিচ্ছিন্ন  গ্রামের পরিবর্তে সারাদেশ  যেন একেকটি কাকরগাছি গ্রাম হয়ে ওঠে।

একটি বিধ্বস্ত জনবসতি যেন নাটকে একটি প্রেক্ষাপট মাত্র, যার প্রতিটি চরিত্র রূপক অর্থে সমাজের একেকজন প্রতিনিধি। বলা হয়েছে গল্পটি সত্য ঘটনা নয়, তবে সত্যমূলক। আর এমন ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে নাট্যকেন্দ্র প্রযোজিত ‘পুণ্যাহ’ নাটকে। নাটকটি রচনা করেছেন বদরুজ্জামান আলমগীর। নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। দলের ১৫তম প্রযোজনাটির ২৮তম মঞ্চায়ন হয় বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে।
নাটকটি প্রসঙ্গে নির্দেশক ইউসুফ হাসান অর্ক বলেন, বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা মানবসৃষ্ট সংকটকালে মানুষ নতুন করে ভাবতে চায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অথবা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মহামারি করোনার সময়েও আমরা থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। সাম্প্রতিক পৃথিবীর  যে বিপর্যস্তকাল, তা আমাদের এমন কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করেছিল।  সেই দায় থেকেই পুণ্যাহ নিয়ে কাজ করার তাগিদ অনুভব করেছি।

একটি বিধ্বস্ত জনপদ এখানে প্রেক্ষাপট মাত্র। তাই বিবৃতিমূলক কাহিনী বয়ানে নাট্যকার যেমন চরিত্র-চিত্রন, দ্বান্দ্বিকতা ইত্যাদির নানা উদ্ভাস রচনা করেছেন, তেমনি আমরাও একটি সহজ প্রতিভঙ্গিতে নিরাভরণ ক্যানভাসে পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-ভুল ইত্যাদি ধারণা সম্পর্কে দরদিয়া অভিব্যক্তি প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। 

নাটকের কাহিনীতে নারী ও পুরুষের ভালোবাসা ভিন্নমাত্রায় প্রতিভাত হয় এবং সমাজ নারীকে সব পাপের জন্য অঙ্গুলি নির্দেশ করে। নারী চরিত্র আম্বিয়াকে স্কুলে যেতে নিষেধ করা হয় অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পরই। দুই দিন সময় বেঁধে  দেওয়া হয় অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য। আম্বিয়ার কাছে মনে হয় বেঁধে দেওয়া দুই দিন যেন এক ঘণ্টায়  শেষ হয়ে যাবে। নারী যেন সমাজের সব ধ্বংসের অন্যতম চিহ্নিত কারণ হয়ে ওঠে।

মৌলভী নিজের মনের কথা মানুষের কাছে বলতে গিয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন। জনপদের মানুষগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কোনো উপায় খুঁজে পায় না। নৈসর্গিক  শোভার কাকরগাছির শান্ত-সৌম্য নিভৃত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে কেউ কেউ শহরের হাতছানিতে প্রবেশ করে। সেই চাকচিক্যে পুরুষ প্রেমিকের অর্থ আর অনেক মানুষের সম্ভাবনা আম্বিয়াকে অসহায় নারীতে সীমাবদ্ধ করে দেয়। সে বরণ করে নেয় নিভৃত  বেদনায় তার একাকিত্ব।

সমাজের পুরুষালি দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থের টান আম্বিয়ার প্রেমিক নিঃশর্ত ভ্রƒণ হত্যার জন্য চাপ তৈরি করে। সমাজের প্রতিটি মানুষ পাপ আর পাপীকে অনুসন্ধান করে করে একতরফা সিদ্ধান্ত আরোপ করে। আম্বিয়ার ভালোবাসা পাপ হয়ে যায়, টিকে যায় তার প্রেমিকের সম্মানবোধ। 
প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন ঝুনা চৌধুরী, সংগীতা চৌধুরী, ইকবাল বাবু, ইউসুফ হাসান অর্ক, শেখ মাহবুবুর রহমান, খন্দকার সাজিয়া আফরিন, রামকৃষ্ণ মিত্র হিমেল, সাইফুল ইসলাম সরকার, হাবিব মাসুদ, নূর এ আলম নয়ন, ইবতেশাম মাহমুদ শ্যামা, মনামী ইসলাম, শহিদুল্লাহ সবুজ, কৌশিক বিশ্বাস, সাজিদ উচ্ছ্বাস, তন্ময় আশরাফ, এস আই রাজ, ইফাত আরা, নারিন আফরোজ লিনসা, ঐন্দ্রিলা মজুমদার, ফারহগান রুমি, রাজীব আহমেদ, প্রশান্ত স্বর্ণকার ও নির্ঝর অধিকারী। আলোক  পরিকল্পনা করেছেন অম্লান বিশ্বাস।  পোশাক পরিকল্পনা করেছেন সাজিয়া আফরিন।  
কথা ও গান-কবিতায় মুজিবনগর দিবস উদ্যাপন ॥ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বুধবার আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। 
নাট্যশালার  সেমিনার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশ  নেন সাবেক অধ্যক্ষ এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ শফিকুর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠনের পর মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় ঐতিহাসিক মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন লেখক ও গবেষক মামুন সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ।
আলোচনায় মুহম্মদ শফিকুর রহমান ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ২৬ মার্চ থেকেই দেশব্যাপী যুদ্ধের আলোড়ন তৈরি হয়। এর মধ্যেই আমরা জানলাম যে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছে ১০ তারিখ এবং শপথ গ্রহণ হবে ১৭ এপ্রিল। তখন আমরা আমাদের ছাত্র ভাইদের সহকারে মুজিবনগরের আ¤্রকাননে সমবেত হই।

সেখানে এক কোণ থেকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও প্যারেডসহ সবকিছু প্রত্যক্ষ করি। তখন এমন একটা উত্তেজনা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা কাজ করেছে  যেন  আমরা প্রকৃতপক্ষেই যুদ্ধরত অবস্থায় আছি। 
মামুন সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে তাঁর নেতৃত্বে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সময়ে এসেও অনেকে জাতীয় চার নেতা এবং বঙ্গবন্ধুর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেন যা সঠিক নয়। 
আলোচনা পর্বের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি করেন মীর বরকত। মুক্তির গান পরিবেশন করে ঢাকার সাংস্কৃতিক দল।

×