ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিসেস এশিয়া হলেন ৪০ বছরের রিঙ্কু ভকত

প্রকাশিত: ২১:৫২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

মিসেস এশিয়া হলেন ৪০ বছরের রিঙ্কু ভকত

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতীয় পোশাকে মঞ্চে আসার রাউন্ডে পুরুলিয়ার ছৌয়ের মুখোশটা কেটে ব্যবহার করেছিলেন তিনি। শিকড়কে এ ভাবেই মনে রেখে দিয়েছেন রিঙ্কু ভকত। পুরুলিয়া টাউনের হুচুকপাড়ার অখ্যাত গণ্ডি ছাড়িয়ে সেই মেয়েই এখন ‘মিসেস এশিয়া’-র মুকুটধারী। ৪১ বছর বয়সে জীবনের প্রথম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নামা অবশ্য মোটে কয়েক মাস আগে। সেনাবাহিনীর ডাক্তার, স্বামী নরেন্দ্রকুমার মধুকরের চাকরির সূত্রে হিমাচলের মান্ডিতে গিয়েই মোড় ঘুরল জীবনের। হঠাৎ খেয়ালে, ‘মিসেস হিমাচল প্রদেশ’-প্রতিযোগিতায় ঢুকে ঢের কমবয়সি, ফুটফুটে পাহাড়ি তন্বীদের ছাপিয়ে যান পুরুলিয়ার কন্যে। এর পরে চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের ‘ক্লাসিক মিসেস ইন্ডিয়া’-প্রতিযোগিতায় সামিল হন তিনি। নভেম্বরের শেষেই সাংহাইয়ে ‘মিসেস এশিয়া’র দৌড়। মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার উদ্যোগে গত এক দশকে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত এই প্রতিযোগিতা। সেখানে গিয়ে কিন্তু রিঙ্কু শোনেন, ‘ক্লাসিক মিসেস এশিয়া’ নয়, তাঁকে লড়তে হবে হাঁটুর বয়সি ২৮-৩০-দের সঙ্গে ‘মিসেস এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল পপুলারিটি’-র মুকুটের জন্যই। ‘‘ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্সের অনেক ছোট মেয়েও আমার কোনও কসমেটিক সার্জারি করা নেই শুনে অবাক! ওরা অনেকেই পুরোদস্তুর মডেল! ঘাবড়ে গেলেও ভাবলাম, নিজের ব্যক্তিত্বের জোরে যতটুকু পারি, করব!’’— সদ্য দেশে ফিরে বুধবার দমদমে বন্ধুর বাড়িতে বসে বলছিলেন রিঙ্কু। পুরুলিয়ার নিস্তারিণী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পাশ, হাজরা ল’ কলেজের স্নাতক রিঙ্কুর দাবি, তাঁর চেহারা নয়, শিক্ষা বা কাজকর্মই এশিয়া জয়ের রাস্তা খুলেছে। রাঁচীতে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টের উকিল তথা দক্ষ চিত্রকর রিঙ্কু মধুবনী, সোহরাই চিত্রকলা প্রসারের কাজ করছেন দীর্ঘদিন। রাঁচী, স্বামীর কর্মস্থল, পুরুলিয়ায় মা উৎপলা ভকতের বাড়ি মিলিয়ে-মিশিয়েই তিনি থাকেন। দু’বছর বয়সে তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে মা-ই রাঁচীর এইচইসি-তে চাকরি করে রিঙ্কুদের দু’বোনকে একার চেষ্টায় বড় করে তোলেন। ‘‘মাকে দেখে জানি, কোনও লড়াইই অসম্ভব নয়!’’— দৃঢ় স্বরে বলেন রিঙ্কু। তবে আর এক জনকে পাশে না-পেলে এ যুদ্ধজয় হতো না, সহাস্যে বলছেন ক্লাস এইটের অর্পণের মা নব্য ‘মিসেস এশিয়া’! ‘‘কোন রাউন্ডে কী ভাবে সাজব, গাউনের সঙ্গে কেমন জুতো যাবে— সব কিছুতে আমার বরের ওপরেই চোখ বুজে ভরসা করা যায়।’’ বয়সে তাঁর থেকে চার বছরের ছোট, ছোট্টবেলার প্রেমিক-স্বামী বৌয়ের সঙ্গে সাংহাই যেতে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে লম্বা ছুটি নিয়েছিলেন। সেনা সদস্যের চিনে যাওয়ার ছাড়পত্র পেতে ভালই ঝক্কি পোহাতে হয়। আর সাংহাইয়ের পথে কলকাতা থেকে বিশাল লটবহর নিয়ে রিঙ্কুর উড়ান ধরার সময়ে পাশে ছিলেন ল’ কলেজের সতীর্থ মানস সরকার, বিকাশ মিত্রেরা। এর পরে কি ‘মিসেস ওয়ার্ল্ড’-এর দরজা খুলবে? সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার ময়দানে কিন্তু অতটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই রিঙ্কুর। ‘‘মিসেস ওয়ার্ল্ডে বিকিনি-রাউন্ডটা আমি ঠিক পেরে উঠব না।’’ তবে তিনি প্রত্যয়ী, এই স্বীকৃতিটুকুই দেশের নানা প্রান্তে লোকশিল্প-চর্চায় গরিব মেয়েদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করবে। এ বার ফেলা-ছড়া সরঞ্জাম নিয়ে পুরুলিয়াতেও শিল্পসামগ্রী তৈরির একটি প্রকল্প শুরু করার ইচ্ছে রয়েছে রিঙ্কুর। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×