ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনের পাঁচ বছর নষ্ট করেছি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১২ অক্টোবর ২০১৭

জীবনের পাঁচ বছর নষ্ট করেছি

বাংলাদেশের জনপ্রিয় পপ গায়িকা মিলা ইসলাম। ক্যারিয়ারের শুরুতেই নিজের গানের মাধ্যমে শ্রোতাদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। জাদুকারি কণ্ঠ সঙ্গে ভিন্নরকম পরিবেশনা দিয়ে খুব অল্প সময়ে দর্শক-শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় তারকায় পরিণত হন মিলা। অল্প সময়ে একের পর এক হিট গান উপহার দিয়েছেন। মিলার টানা তিনটি একক এ্যালবাম আকাশ ছোঁয়া সফলতা পায়। টানা ১০ বছর প্রেমের পর চলতি বছরের ১২ মে বৈমানিক পারভেজ সানজারিকে বিয়ে করেন। এক দশক প্রেম করে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হলেও পেল না সম্পর্কের স্থায়িত্ব। স্বামীর নানা নির্যাতনের অভিযোগ মিলার। এখনও মধুচন্দ্রিমার রেশ কাটেনি। এর মধ্যেই ভাঙ্গনের শিরোনাম হতে হচ্ছে এ তারকার। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আনন্দকন্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন মিলা। সাক্ষাতকার নিয়েছেন- রুহুল আমিন ভূঁইয়া আনন্দকণ্ঠ : দীর্ঘ ১০ বছর প্রেমের পর চূড়ান্ত সম্পর্ক গড়লেন। তাহলে পাঁচ মাসের মাথায় এসে ডিভোর্সের এ খবর কেন? মিলা : আমার কোন ডিভোর্স হয়নি। ডিভোর্সের নিউজ কিভাবে প্রকাশ পেল! বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ আপসেট। আসলে কথা না বলে সংবাদ প্রকাশ করলে যা হয় আর কি। ডিভোর্স তো এত সহজ বিষয় না যে বললেই হয়ে গেল। আর আমি তো নিজ থেকে এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলিনি। তাহলে নিউজ কিভাবে হয়! আর কোন কিছু হলে তো আমি লুকাব না। এসব বিষয় লুকানোর কিছু নেই। কোন কিছু হলে নিজেই বলতাম। সুতরাং, অযথা এসব গুঞ্জনের কোন মানে হয় না। আমার ওপর বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনের জন্য আমি মামলা করি। আমি ডিভোর্স কেন দেব? একজন স্ত্রী হিসেবে আমি বঞ্চিত হয়েছি। আমাকে এত নির্যাতন করেছে আমি আসলে খুবই অসুস্থ। এমন অসুস্থ যে, কোন লাইভেও যেতে পারছি না। ওরা বলছে আমি মাদকাসক্ত আবার কখনও বলছে আমি ডিভোর্স নিয়ে ব্যবসা করি। এরকম অনেক অনেক বাজে কথা বলছে। খুব খারাপভাবে আমার বদনাম করার চেষ্টা করছে। রীতিমতো আমাকে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে গত পাঁচ মাস যাবত। আমি কখানই ডিভোর্সে যাচ্ছি না। মিলা অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জানতে পারি আমার স্বামী একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত। আমার স্বামী ক্রমাগত আমার সঙ্গে প্রতারণা করতে থাকে এবং আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলছে বার বার। আমি রাজি হইনি। একজন মানুষ হিসেবে এমন আচরণ আমি মেনে নিতে পারিনি। কোন স্বামী তার স্ত্রীর অথবা কোন স্ত্রী তার স্বামীর পরকীয়া মেনে নিতে পারে না। আমি অনেক চেষ্টা করেছি তাকে ফেরাতে। কিন্তু সেটা হয়নি। সে আমাকে মানসিক নির্যাতনের পর শারীরিক নির্যাতনও শুরু করেছিল। কিন্তু আর সহ্য করা যাচ্ছিল না। দীর্ঘ এত বছরের সম্পর্কে কিসের তালাক? যখনি আমি এটা মানতে রাজি হয়নি ঠিক তখনই আমাকে অত্যাচার করে এবং টাকা পয়সা নিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা করে। খুব অত্যাচার করেছে আমাকে। তবে বিয়ের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জানতে পারি গত পাঁচ বছর যাবত যা জেনেছি সব ভুল। এ নিয়ে বিয়ের আগ থেকে ঝামেলা হচ্ছে। দীর্ঘ সম্পর্কের পর যখন আমাদের বিয়ে হচ্ছে তখন ওর পরকীয়া এসব বিষয় নিয়ে আমি কখানও কিছুই ভাবিনি। ভেবেছিলাম সব কিছু বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে। আনন্দকণ্ঠ : দশ বছরের প্রেমের সম্পর্ক থাকাকালীন কী বিষয়টি একেবারেই চোখে পড়েনি? মিলা : হ্যাঁ গত পাঁচ বছর আগেই আমি জেনেছি। জেনেছি মাফ করেছি। জেনেছি মাফ করেছি। আমার কাছে মাফ চেয়েছে। ঠিক করার চেষ্টা করেছি। মনে করেছি আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এসব বিষয় জানতে জানতে ওর আর আমার মাঝে একটা গ্যাপ হয়ে যায়। আমাদের মাঝে অনেক দিন কথাও হতো না। তিন চার মাস পর কথা হতো। তাই বলে আমার অন্য কারও সঙ্গে প্রেম হয়নি বা, ভালবাসা কমে যায়নি। আমার যেদিন ওর সঙ্গে বিয়ে হয় সেদিন আমার আরেক জনের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে ওর সঙ্গেই আমার বিয়েটা হয়। কিন্তু ১৩ দিনের দিন দেখতে পাই এরকম সব কাজ করছে এবং আমার কাছে ধরা পড়ে। একটা না অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে একই সঙ্গে পরকীয়া করেছে এবং সে আমাকে পুরোপুরি সামাজিক মাধ্যম থেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। তখন থেকেই পারভেজ ডিভোর্স চাচ্ছে কিন্তু আমি ডিভোর্স কখনোই দেব না। কেনই বা ডিভোর্সে যাব। মানুষ জনই বা কি ভাববে, বলবে। সংসার তো আমি শুরুই করলাম না। সংসার যখন শুরু হচ্ছে (কেঁদে কেঁদে) তখনই অত্যাচার চলছে তো চলছেই। আমার প্রতি কোন মায়া দয়া নেই তার। আমার শাশুড়ি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনেকগুলো তাবিজ পরিয়ে রাখছে তার ছেলেকে। কিন্তু দুই তিনমাস যাচ্ছে সে কোন ভাবেই ঠিক হচ্ছে না এবং আমাকে রেখে সে বাইরে থাকে। তিন দিন বাসায় ফিরেনি। আমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় আমাকে মোবাইলে ব্লক করে রাখে। যাতে করে আমি তাকে খুঁজে না পাই। খুব বাজে অবস্থা যায় আমার ওপর দিয়ে যা বলে বুঝানো যাবে না। আমি তখন মিডিয়ার বাইরে ছিলাম। আমার সংসারটি গুছানোর চেষ্টা করেছিলাম। যখন আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ওর মা যখন বুঝতে পারে তার ছেলে আমার সঙ্গে আর থাকতে চাইছে না। তখন তিনি উল্টো আমাকে দোষারোপ করা শুরু করে। শুধু শুধু দোষারোপ করে আমাকে। আনন্দকণ্ঠ : আপনার গান গাওয়ার ব্যাপারে তার কাছ থেকে কোন রকম বাধা নিষেধ ছিল? মিলা : না সে গান গাওয়ার ক্ষেত্রে কোন রকম বাধা দিত না। সে সব সময় চাইতো আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই। আনন্দকণ্ঠ : এটা চাইতো কেন? মিলা : আমি বাসা থেকে বের হলে সে খুশি। তাহলে তার পরকীয়া করতে সুবিধা হতো। আমি তো কখনোই বের হতাম না। আমি ২৪ ঘণ্টা বাসায়ই থাকার চেষ্টা করেছি। হজের আগেও সে ডিভোর্সের জন্য বলছিল। তালাকনামার জন্য কাজী সাহেবকে নিয়ে আসে। আমি কাজী সাহেবকে বলি আমাকে কাবিননামার কোন টাকা দেওয়ার দরকার নেই। সেই টাকা দিয়ে সে আমার সঙ্গে হজে চলুক। আমি চিন্তা করে ছিলাম হজে গেলে হয়তো আমার সংসারটা টিকবে আল্লার রহমতে। প্রয়োজনে গান বাজনা করব না। সেটাও তাকে অফার করি কিন্তু সে মানেনি। ওর মাকেও আমি মেসেজ করেছি যে, ‘আম্মু আমার হাত ভেঙ্গে গেছে’ কিন্তু আমার শাশুড়ি কোন খবর নেয়নি আমার। যখন দেখছে মামলাতে ওরা পারছে না তখন আপোস করার কথা বলছে বার বার। কিন্তু আমি আপোসে যেতে চাচ্ছি না। এতটা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি আমি। অনেক দিনের বিষয় তো। গত সোমবার আমি জানতে পারি ওরা জামিন চেয়েছে কিন্তু জামিন পায়নি। তাই এখন মিডিয়ায় গিয়ে ওর পরিবার আমার সম্পর্কে বানিয়ে আজে বাজে কথা বলে আমাকে সম্মানহানি করার চেষ্টা করছে। আনন্দকণ্ঠ : এসব বিষয় আপনার ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়বে বলে আপনি মনে করেন? মিলা : অবশ্যই প্রভাব পড়বে। যেখানে আসামি গ্রেফতার সেখানে আমার সম্পর্কে এসব বাজে কথা কখনোই রটানোর প্রশ্নই আসে না অথচ এসব করে বেড়াচ্ছে তার পরিবার। এসবের পরও তারা সব জায়গায় কিভাবে মিথ্যা বলছে আমি জানি না। আমি যে টিভিতে যাব আমার সে চেহারাটাও রাখেনি। সিগারেটের আগুন দিয়ে পুড়ে দিয়েছে। আমার কপালে ব্যান্ডেজ করা। আমি যে, প্রেস কনফারেন্স করব সেটাও করতে পারছি না আমি। আমাকে অত্যাচার করে আমার হাত ভেঙ্গে দেয়। হাসাপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। সেখান থেকে রিলিজ নিয়ে আমি বাসায় এসে আমার স্বামীকে জানাই আমার হাত ভেঙ্গে গেছে। দুটা দিন হাসাপাতালে ছিলাম। তুমি তো আমার একটিবার খোঁজও নিলে না ফোন করে। আমি তাকে আসতে বলি আমাকে দেখার জন্য। আমি অপেক্ষা করেছি তার আসার জন্য কিন্তু সে আসিনি। আমি এটাও প্রশ্ন করি তুমি কি তালাক নিয়ে ভাবছো আমি কিন্তু তালাক দেব না। কখনও এসব কিন্তু হবে না। কিসের তালাক? আমাকে মারধর করে হাত ভেঙ্গে দেওয়ার পর আমি পরের দিন মামলা করি। তার আগে মামলা করিনি। পাঁচ বছর নষ্ট করেছি এ ভালবাসার কথা চিন্তা করে। বিয়ের আগেও আমাকে অত্যাচার করত। আমি তখনও কিছু বলিনি। সব মেনে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সে ঠিক হয়নি। আনন্দকণ্ঠ : আপনার ভক্তরা কি আপনাকে আগের মতো পাবে? মিলা : অবশ্যই পাবে। এখন তারা আরও বেশি পাবে। এটা আমার জীবনের চরম শিক্ষা যে, একটা মানুষের ভালবাসার জন্য নানানভাবে নির্যাতনের স্বীকার মুখ বুঝে সহ্য করেছি। আমার জীবনের পাঁচ বছর নষ্ট করেছি। আমার ভক্তদের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কিছুই পেলাম না।
×