ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পীদের কথা বলে নাটক ‘আমি’

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৯ আগস্ট ২০১৭

শিল্পীদের কথা বলে নাটক ‘আমি’

সাজু আহমেদ ॥ আমাদের দেশে একক অভিনয় নির্ভর মঞ্চসফল নাটকের সংখ্যা অনেক কম। কারণ মঞ্চে একক অভিনয় অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জকে উৎরে যাওয়া নাট্যকর্মী ও নাট্যদলের সংখ্যাও নেহায়েত কম। তার উপরে আবার একক অভিনয়ে যদি কোন পুরুষ সাহস দেখায় তাহলে তো কথাই নেই। এই অবস্থায় শিল্পকলা একাডেমির পরিক্ষণ হলে একক অভিনয়ের নাটক মঞ্চস্থ করলো বাংলাদেশ থিয়েটার। তাদের নতুন প্রযোজনার নাম ‘আমি’। নাটকটির কয়েকটি মঞ্চায়নেই মুগ্ধ করল দর্শকদের। নাটকের অভিনয়শিল্পী যেহেতু একজন। সুতরাং ভুল কম, মুগ্ধতা বেশি। যতটুকু ভাললাগা তা ওই শিল্পী মানুষের জন্য। আজকাল সাধারণ দর্শক মঞ্চ নাটক খুব কম দেখে। যা দেখে তা ওই হাতেগোনা কয়েকজন। তার মধ্যে আবার নতুন নাটক মঞ্চায়ন হলে মূলত দেখে নাট্যকর্মীরাই। মানে নতুন কি হলো কি এলো। এভাবে দুই চারটা শোতে বেশ উপস্থিতি দেখা যায়। তবে ‘আমি’ নাটক শিল্পীদের কথা বলে, তাই মন্দের চেয়ে ভালর পরিমাণটা একটু বেশি হবে সেটাই স্বাভাবিক। ‘আমি’ নাটকের অভিনেতা খন্দকার শাহ আলম। রচনাকারী তরুণ নাট্যকার মাহবুব আলম। কাঁচা হাতে অনেকটা পাকা বিষয় নির্বাচন। যে বিষয়ে নাট্যকার গোটা শিল্পী সমাজের গল্প বলার চেষ্টা করেছে একা, নিজে দায়িত্বে। বিশেষ করে যারা সাধারণ মানুষকে আনন্দ দেয়, শিল্পের প্রয়োজনে মঞ্চে হাসে, হাসায়, কাঁদে এবং কাঁদায়, সাধারণ দর্শকদের ভাবনার খোরাক যোগায় সেই শিল্পী সমাজের সদস্যের বাস্তব জীবন কেমন?। সংসার কেমন? তাদের যাপিত জীবন কতটা সুখকর? সেই বিষয়গুলো তুলে ধরায় চেষ্টা করেছেন খন্দকার শাহ আলম। বেশ পাকা অভিনেতা। এর আগে দলের একাধিক নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা এই অভিনেতার বেশ পরিচিতি আছে। এবার সেটাকে নিজের মতো করে মঞ্চে তুলে ধরলেন ‘আমি’ নাটকের মধ্য দিয়ে। এক ঘণ্টা ধরে গোটা শিল্পী সমাজের দুঃখগাথাই যেন বলে গেলেন তিনি। মঞ্চে শাহ আলমের পারফরমেন্স দেখতে দেখতে প্রশ্ন জাগে আচ্ছা শিল্পীরা কি আদৌ সুখি নয়। তারা তাদের সুখ, আনন্দগুলো কি শুধু সাধারণ মানুষের জন্যই তুলে রাখে। নিজের ভোগ করে যন্ত্রণামন্দ্রিত সময়। সংসার, সন্তান, সুখ কি তাদের পাওয়া হয় না। নাটকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেকটা উদভ্রান্ত ‘আমি’র রুশদু। নাটক ও গান করা মানুষ রুশদু এক সময় স্ত্রী লরিনের বিরাগভাজন হয়। সংসার ছেড়ে, রুশদুকে ছেড়ে, সন্তান জান্নাতকে নিয়ে চলে যায়। একা হয়ে যায় রুশদু । নানা নেতিবাচক ভাবনা তাকে গ্রাস করে। গৃহবন্দী একা রুশদুর স্মৃতিতে আসে নানা সময়, মা, স্ত্রী, সন্তান। কষ্টের পাশাপাশি সু সময়ের স্মৃতিও আসে। নিজের শিল্পচর্চাকে দায়ী করে সে এক সময় আত্মাহুতি দিতে যায়। তবে সে ফিরে আসে। সে ফিরে আসে গোটা শিল্পী সমাজকে সান্তনা দিতে। এই ভেবে যে শিল্পের সাধনায় যে সুখ, তাতে বাঁচা যায় শুধু শিল্পে জন্য, শিল্পদীর্ঘ পথকে মসৃণ করতে। সমাজের জন্য শিল্পীকে বাঁচতে হয়। ‘আমি’ নাটকে খন্দকার শাহ আলমের অভিনয় অনেকটাই প্রাণবন্ত। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে একটু আড়ষ্টতা চোখে পড়েছে। বিশেষ করে ইংরেজী সংলাপ প্রক্ষেপনে আরও সাবলীলতা প্রয়োজন। গল্পের প্রয়োজনে গানগুলো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও সজাগ হওয়া উচিত ছিল। সেট কালারফুল হতে পারত। মিউজিক প্রক্ষেপণে সাবধানতা প্রয়োজন। নাটকের বিষয়বস্তু আরও গভীরতার দাবি রাখে। কারণ নাটক যখন শুরু হলো সেই সময়টা যেন যবনিকাপাত ঘটলো। গল্পের ছলে কোরিওগ্রাফি সংযোজন নাটকের জৌলুসতা বাড়তে পারে। পোশাক নিয়েও ভাবতে পারেন নির্দেশক। সবমিলিয়ে যাই হোক নিয়মিত মঞ্চায়নে ঘাটতি পুষিয়ে ঋদ্ধ প্রযোজনায় শামিল হবে বাংলাদেশ থিয়েটারের ‘আমি’। সেই প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থিয়েটারের ১৭তম প্রযোজনা ‘আমি’ নাটকটি গত ১০ আগস্ট উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। এর পর দিন ১১ আগষ্ট দ্বিতীয় এবং গত ১৬ আগস্ট নাটকটির তৃতীয় মঞ্চায়ন হয়। মাহবুব আলমের রচনায় ‘আমি’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ড. আইরিন পারভীন লোপা। নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন ফজলে রাব্বী সূকর্ণ, আলোক পরিকল্পনায় কলকাতার জয়ন্ত মুখার্জী। আবহ সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন শেখ জসিম।
×