ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কার্যক্রমে নেই ইবির যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল

আজাহারুল ইসলাম, ইবি

প্রকাশিত: ১০:২৮, ৬ এপ্রিল ২০২৪; আপডেট: ১২:২৭, ৬ এপ্রিল ২০২৪

কার্যক্রমে নেই ইবির যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবিতে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে আস্থা নেই শিক্ষার্থীদের
অভিযোগ পাওয়ার পর আহ্বায়কের পদত্যাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল থাকলেও দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেই সেলকে পুনর্গঠন করা হয়। গঠিত ওই কমিটির কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সভা করতে পারেনি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে সেলটির কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা না থাকা ও আস্থাহীনতার কারণে গত তিন বছরে কোনো অভিযোগ পড়েনি।

তবে সেলটিতে সম্প্রতি একটি অভিযোগ গিয়েছে। এর পরপরই ব্যক্তিগত অপারগতা দেখিয়ে কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা সিদ্দীকা পদত্যাগ করেন। ফলে এ বছরের পহেলা এপ্রিল বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা সাথীকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেন উপাচার্য।

প্রক্টর অফিস জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র অন্য ছাত্রের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ জমা দেন প্রক্টর অফিসে। প্রক্টর অফিস প্রাথমিক তদন্ত করে সেই অভিযোগ পাঠায় যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলকে। সেই অভিযোগ যাওয়ার পর সেলের আহ্বায়ক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেন। ফলে সেই অভিযোগ পড়ে আছে সেভাবেই।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায়সই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটলেও নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে কোন অভিযোগ করা হচ্ছে না। বিগত সাড়ে তিন বছরেও সেলে যৌন নিপীড়নের কোন অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে প্রক্টর অফিসে এ সময়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ে; যা যৌন নিপীড়ন পর্যায়ের।

শিক্ষার্থীদের জানায়, তাদের মাঝে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। পাশাপাশি দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম না থাকায় সেল নিয়ে আস্থাহীনতাও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যে কোন ধরণের ঘটনার জন্য প্রক্টর অফিসে অভিযোগ জমা দেন। প্রক্টর অফিস তাদের মতো করে অভিযোগ নিয়ে কাজ করে। কোনটির নিষ্পত্তি হয় কোনটি পড়ে থাকে দপ্তরেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকদের দাবি, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল তাদের কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছতে ও আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এজন্য শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হলেও অভিযোগ করছে না। শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারলে সেল গঠনের উদ্দেশ্য সফল হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও উচিৎ তদারকি করা।

পদত্যাগ করা কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা সিদ্দীকা বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর কোন অভিযোগ আসেনি। পূর্বের কমিটিও কোন অভিযোগ দিয়ে যায়নি। এজন্য কোন সভা বা কাজ হয়নি। আমি ব্যক্তিগত অপারগতার কারণে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। তবে যতটুকু জানি সম্প্রতি একটি অভিযোগ এসেছে। কিন্তু আমি যেহেতু দায়িত্বপালন করবো না এজন্য এটি নিয়ে কাজ করা হয়নি।

সেলের গত কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, আমি তিন বছর সেলের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলাম। এর মাঝে যৌন নিপীড়নের কোন অভিযোগ আসেনি। একটি অভিযোগ এসেছিল সেটিও সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত। আমার সময়ে বেশ কয়েকটি সেমিনারসহ কিছু কাজ করেছিলাম যেন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, কিন্তু অভিযোগ পাইনি। শিক্ষার্থীদের লজ্জা ও ভয় থেকে বেরিয়ে এসে অভিযোগ করা উচিত।

নতুন দায়িত্ব পাওয়া আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন আরা সাথী বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। ঈদের পরে কমিটির সকল সদস্যকে নিয়ে একটি সভা করবো, সেখানে সেলের কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য কি কি উদ্যোগ নেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করবো। 

আশা করি, আমাদের কার্যক্রমগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছবে ও সেল সম্পর্কে অবগত হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অধ্যাপককে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন তার উচিত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। সকল বিষয় তো আমরা তদারকি করতে পারি না। তাদের কোন সমস্যা হলে আমাদের কাছে এলে তখন সেটি সমাধান করা যাবে।
 

এসআর

×