ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আহমেদ ফরিদ

৫০ টাকা কেজি বই!

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৪ জুন ২০১৭

৫০ টাকা কেজি বই!

রাজশাহী শহরের একটি লাইব্রেরি থেকে হতাশ হয়ে ফিরছিল উজ্জ্বল হোসেন। পড়াশোনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃৃতীয় বর্ষে। লক্ষ্য বিসিএস ক্যাডার হওয়া। তার জন্য বই কেনা দরকার। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে বই না কিনেই ফিরতে হচ্ছিল তাকে। পথে বন্ধু হৃদয়ের সঙ্গে দেখা। বিমর্ষ চেহারার কারণ জানতে পেরে হৃদয় একটি লাইব্রেরির খোঁজ দিল। সেখানে গিয়ে অনেকটা অবাক হয়ে হয়ে গেল উজ্জ্বল। মাত্র পঞ্চাশ টাকায় এক কেজি বই! তার ওপর আবার তার প্রয়োজনীয় বইগুলোই! এমন হাজারো শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় বইয়ের জোগান দিচ্ছে রাজশাহীর একটি লাইব্রেরি। ব্যতিক্রম লাইব্রেরি। এখানে মাত্র পঞ্চাশ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির বইগুলো। রাজশাহী শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোল ঘেঁষে বিনোদপুর গেট থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে ‘ব্যতিক্রম লাইবেরি’ অবস্থিত। বিনোদপুর গেট থেকে মেন গেট রোডে এগুতে থাকলেই দেখা যাবে ‘ব্যতিক্রম লাইবেরি’ নামের ব্যানার। ব্যানারের নিচ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই দোকনটি। এগিয়ে ভেতরে গিয়ে কথা হয় দোকান মালিকের সঙ্গে। ‘শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এমন ব্যবসা’ বললেন দোকানের মালিক মোঃ বদর উদ্দিন। চার মাস যাবদ তিনি এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। মোঃ বদর উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে এই বইগুলো নিয়ে আসি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে মাত্র ৫০ টাকা কেজি দরে বইগুলো বিক্রি করি। এতে অতি সামান্য লাভ হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা ছাড়াও আরও একটি একই রকম দোকান রয়েছে। সেখানে ১০০ টাকা কেজি দরে বই বিক্রি করি।’ আর প্রতি মাসের শেষে ৫০ টাকা কেজি দরের বইগুলো মাত্র ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয় বলেও জানান তিনি। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি চলে দোকানটিতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নিজের পছন্দের বই খুঁজতে ব্যস্ত। অনেক সময় ধরে বই খুঁজে খুঁজে অবশেষে দোকানের প্রবেশদ্বারে রাখা ডিজিটাল ওজন মেশিনে মেপে কিনে নিচ্ছেন। এমনই একজন রাবির ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউডের (আইবিএ) শিক্ষার্থী মোঃ সাজেদুর রহমান। সাজেদুর বলেন, ‘অল্প কয়েকদিন আগে ব্যতিক্রমী লাইব্রেরি খোঁজ পেয়েছি। দাম সস্তা হওয়ায় সপ্তাহে দুদিন এখানে বই কিনতে আসি।’ কী কী বই এখানে পাওয়া যাচ্ছে বা কিনছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল আলম বলেন, ‘এখানে গল্প, উপন্যাস, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, চাকরি-ভাইবা সংক্রান্ত বইয়ের পাশাপাশি ব্যবসায় অনুষদের বইগুলো অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।’ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মোঃ মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ায় নির্দিষ্ট কোন পাঠ্যবই নেই। এখানে অনেক ধরনের আনুষঙ্গিক বই পড়তে হয়। যা ওই লাইব্রেরি থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে। পুরান বইগুলো সাধারণত ফেলে দেয়া হয় অথবা দোকানে ঠোঙা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওই লাইব্রেরির কারণে পুরান বইগুলো ঠোঙা হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে। ফলে বইয়ের প্রকৃত ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা অল্প মূল্যে বইগুলো পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যদি অল্প মূল্যে বই পায় তাহলে অবশ্যই এটা একটা ভাল উদ্যোগ। ’ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পরিত্যক্ত গুদাম পরিষ্কার করে দোকানটিতে বইয়ের পসরা বসানো হয়। শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে কেজি দরে বই বিক্রি শুরু করেন লাইব্রেরির মালিক। এখন রীতিমতো ভিড় জমে। খুব অল্প টাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো পুরান বই কিনতে পারছে।
×