
রাজস্ব ফাঁকি
কতিপয় প্রবাসী ও অসাধু আমদানিকারকের মাধ্যমে আনা বিদেশী সিগারেটে সয়লাব চট্টগ্রাম। বিশেষ করে মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রিয়াজউদ্দিন বাজারে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা বিদেশী সিগারেটের পাইকারি বিক্রি চলছে অবাধে। প্রশাসন এবং পুলিশের নাকের ডগায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার অবৈধ বিদেশী সিগারেটের বিকিকিনি চালিয়ে নিচ্ছে বিশাল সিন্ডিকেট। এর ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবে এ বিষয়ে নেই কারো মাথাব্যথা। তদারকি কোনো সংস্থারও অভিযান নেই। ফলে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে এসব সিগারেট পৌঁছে যাচ্ছে কোনো বাধা ছাড়াই। এছাড়া যারা এসব ঠেকানোর ব্যবস্থা নেবেন তারাও অদৃশ্য কারণে দায়সারা। এসব সিগারেট বিমান বন্দর- চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় নিয়ে আসছে অসাধু আমদানিকারকরা।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, মূলত কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে অবৈধভাবে বিদেশী সিগারেটের চালান অবাধে ঢুকছে দেশে। মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেট আনছেন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। এর নেপথ্যে রয়েছে কোটি টাকার মুনাফা। এই মুনাফা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাগবাঁটোয়ারা করেই সিন্ডিকেট আমদানি নীতিকে এড়িয়ে চালান আনছে একের পর এক। মাঝেমধ্যে কাস্টমস কিছু সিগারেটের চালান জব্দ করলেও তা সামান্য। জানা গেছে, এখন চিকন শলাকার কম নিকোটিনের বিভিন্ন সুগন্ধিযুক্ত সিগারেটের কদর বেড়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগচ্ছে চিহ্নিত কিছু আমদানিকারক।
তারা মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেট আনছেন একের পর এক, যা রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও খাতুনগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রামের অলিগলি, পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম হয়ে এসব সিগারেট যাচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণের জেলা শহরগুলোতেও। অবৈধ বিদেশী সিগারেটের সবচেয়ে বড় আড়ৎ বলা হয় রিয়াজ উদ্দিন বাজারকে। দোকানিরাই জানিয়েছেন, পুরাটাই ডিল হয় ডিও ব্যবসার মতো। অর্ডার নিয়ে যায় নির্দিষ্ট কিছু লোক। সেই অনুযায়ী সিগারেট হাতে পায় পাইকারি সিগারেটের দোকানিরা। রিয়াজ উদ্দিন বাজারের অর্ধশতাধিক দোকানে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসা বিদেশী সিগারেট বিক্রি চলছে প্রকাশ্যে।
জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ছাড়াও অন্যান্য জেলায় এসব সিগারেট পাঠানো হচ্ছে ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনীহা জানিয়ে বলেন, বর্তমানে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকে কম নিকোটিনের সিগারেট পছন্দ করে। তাই তাদের চাহিদা বিবেচনায় বিদেশী সিগারেটের কদর বেড়েছে। তবে যেভাবে আসছে এটি অবৈধ। কাস্টমসের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। তাদের হাত গলেই কিন্তু বাজারে আসছে। রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও খাতুনগঞ্জে অবৈধভাবে আসা এসব সিগারেটের বিষয়ে বেশ কয়েকদিন যাবত তথ্য আসছে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, তথ্য পাচ্ছি। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা সিগারেট খোলা বাজারে বিক্রি করা অপরাধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধভাবে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আকাশপথে ও সমুদ্রপথে আসা এসব সিগারেট কেনাবেচার সুনির্দিষ্ট লোক রয়েছে। তারাই নির্দিষ্ট দোকানগুলোতে এসব সিগারেট দিয়ে যায়।
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি সমুদ্র বন্দর দিয়েই বিদেশী সিগারেট আনছেন চট্টগ্রামের বেশ কয়েক প্রসাধনী ও খাদ্যপণ্যের আমদানিকারক। বিশাল সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছে দায়িত্বশীল বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। চালান খালাস থেকে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত এই কারবারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেই সহযোগিতা করেন তারা। তবে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, যারাই রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পণ্য আনা এবং বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা শীঘ্রই দৃশ্যমান হবে।