
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে উল্লেখ করে এর প্রশংসা করেছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই। বুধবার এক লিখিত প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটি বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। এফবিসিসিআই বলেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি জনমুখী বাজেট প্রণয়নে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। উচ্চ বিলাসী বাজেটের পরিবর্তে বাস্তবমুখী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের জন্য অর্থ উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়েছে সংগঠনটি।
এফবিসিসিআই মনে করে, প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কর কাঠামো ও তদারকিতে উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলেছে, ‘বাজেট বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে হবে। ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সংগঠনটি। বরং সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
সংগঠনটি জানান, শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নির্ভরতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক বলে আখ্যায়িত করেছে এফবিসিসিআই। তবে সুবিধাভোগীদের সঠিকভাবে শনাক্ত ও মনিটরিং নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে তারা। বিশেষ করে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়নে নেওয়া বাজেট প্রস্তাবগুলোর প্রশংসা করেছে সংগঠনটি। তবে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
ব্যক্তিগত আয়কর সীমা ৩.৭৫ লাখ টাকা করায় তার সীমা আরও বাড়িয়ে ৪.৫ লাখ টাকা করার আগের প্রস্তাব পুনরায় বিবেচনার আহ্বান জানায়। মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার হ্রাস, পুঁজিবাজারে উৎসে কর কমানো এবং লভ্যাংশে কর সুবিধাকে বাজারে আস্থা ফেরানোর জন্য সহায়ক বলেও মন্তব্য করে তারা।
খাতভিত্তিক কর-ভ্যাট পরিবর্তন নিয়ে এফবিসিসিআই আরও বলেন, কৃষি, চা পাতা, গম-চালসহ কিছু পণ্যে উৎসে কর হ্রাস একটি ভালো উদ্যোগ। এ বিষয়টিকে আমরা স্বাগত জানাই। একইসঙ্গে, রিসাইক্লিং শিল্প ও ইন্টারনেট সেবার ওপর কর কমানোকে পরিবেশবান্ধব ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
তবে কাগজ, প্লাস্টিক, ইয়ার্ন, কটন সুতা ও এমএস পণ্যে ভ্যাট ও সুনির্দিষ্ট কর বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে সংগঠনটি শঙ্কা প্রকাশ করেছে। এসব খাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়লে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে মত দিয়েছে এফবিসিসিআই। এলডিসি উত্তরণ ও বাণিজ্য প্রতিযোগিতা নিয়ে তারা জানান, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের প্রেক্ষিতে স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি (এসটিএস) বাস্তবায়নে বাজেট প্রস্তাবগুলোকে সময়োপযোগী হয়েছে। তারা বলছে, ‘বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে হবে।’ বাজেটকে সমন্বিত উন্নয়নের একটি পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করে এফবিসিসিআই বলেছে, ‘সতর্কতা, সক্ষমতা ও কার্যকর অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই বাজেট বাস্তবায়নকে সফল করা সম্ভব।