ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রেতা শূণ্যে আতঙ্ক জেঁকে বসেছে পুঁজিবাজারে

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ১৯ জুলাই ২০২২

ক্রেতা শূণ্যে আতঙ্ক জেঁকে বসেছে পুঁজিবাজারে

পুঁজিবাজার

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের ঘোষণায় পরপর দুই দিন বড় দরপতন হলো দেশের পুঁজিবাজারে। কোম্পানির মৌলভিত্তি, আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা ছাড়া ঢালাও পড়ছে দর।

৩৮২টি কোম্পানির মধ্যে ৩৪৪টির দরপতনের দিন বিপুল পরিমাণ কোম্পানির দর কমেছে এক দিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই। দাম আরও কমে যাবে, এমন আশঙ্কার কারণে সর্বনিম্ন সীমায়ও শেয়ারের ক্রেতা নেই।

এর বিপরীতে বেড়েছে কেবল ১৬টির দর, অপরিবর্তিত ছিল বাকি ২১টির দর।

ফলে লেনদেনও নেমেছে তলানিতে। আগের দিন তাও টেনেটুনে ৫০০ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেছিল। সেটি এবার ৩০০ কোটি টাকা পার করল কোনোমতে।

বুধবারের ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ ২ হাজার টাকার লেনদেন চলতি বছর তো বটেই, গত প্রায় এক বছরেরও সর্বনিম্ন।

গত বছর লকডাউন আতঙ্কে ৫ এপ্রিল ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার টাকার লেনদেনই কেবল গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আগের দিন ৮৭ পয়েন্টের পর মঙ্গলবার আধা ঘণ্টা যেতেই ৮০ পয়েন্ট সূচক কমে যায়। পরে একপর্যায়ে সেখান থেকে আরও ৭ পয়েন্ট কমে আগের দিনের মতোই ৮৭ পয়েন্ট কমে যায় বেলা ১টায়। তবে লেনদেনের একেবারে শেষ বেলায় হারানো সূচক থেকে কিছুটা ফিরে পেলেও শেষ পর্যন্ত পতন হয় ৬৩ পয়েন্ট।


সূচকের এই অবস্থান গত ২২ মের পর সর্বনিম্ন। সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ছিল ৬ হাজার ১৪২ পয়েন্ট। এটি ছিল চলতি বছরের সর্বনিম্ন।

পুঁজিবাজারে পরপর দুই দিন বড় ধসই বলে দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করতে সরকারের পদক্ষেপ এতে আরও ঘি ঢেলেছে।

গতকাল প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বিমা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের সবগুলো কোম্পানি দর হারায়। তবে আজকেও খাতগুলোর দুই-একটি করে কোম্পানির দর বেড়েছে।

ছোট খাতগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, সিরামিকস, টেলিকমিউনিকেশনস, কাগজ ও আনুষঙ্গিক, পাট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে গতকালের মতোই শতভাগ কোম্পানির দরপতন হয়েছে।

মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘বায়ার না থাকার কারণে আতঙ্কে সেল প্রেসার বাড়াচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বায়ার পেলেই শেয়ার বিক্রি করছেন, যার কারণে ২ শতাংশ দাম কমেই বামে হল্ট হয়ে যাচ্ছে।

‘মার্চেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছে না। তাদেরকে শেয়ার কেনায় ফিরিয়ে আনতে পারলে এমনটা হবে না।’

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর শেয়ার না কেনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এক্সপোজার লিমিট কস্ট প্রাইসে গণনা করার দাবি অনেক দিনের। নতুন গবর্নর দায়িত্ব নেয়ার পরে শুনেছি তিনি এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো হয়তো এই মুহূর্তে বাজারে প্রেসার ক্রিয়েট করে তাদের দাবিটা আদায় করে নিতে চাচ্ছে।’


গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় দর বৃদ্ধির তালিকার বেশিরভাগই জাঙ্ক শেয়ারের দখলে। ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসির দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশ ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। আগের দিনও দর বেড়েছিল ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

ধারাবাহিক লোকসানে থাকা কোম্পানিটিকে ২০১৭ সালে শেয়ার প্রতি ৬৯ টাকা ৫৫ পয়সা লোকসান গুনতে হয়েছিল। এর পর আর কোনো তথ্য নেই ডিএসইর ওয়েবসাইটে।

এর পরেই সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মিথুন নিটিংয়ের, দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। রবিবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে, সোমবার তৃতীয় স্থানে ছিল জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিটির। ধারাবাহিকভাবে দর বাড়লেও কোম্পানিটি উৎপাদনে নেই ২০১৭ সাল থেকে। সম্প্রতি নিলামে বিক্রি হয়ে গেছে এটি।

আগের দিন ১৮ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটির বর্তমান দর ১৯ টাকা ৫০ পয়সা।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দর বেড়েছে লোকসানি আরামিট সিমেন্ট। ২০১৬ সালে ১২ শতাংশ নগদ প্রদানের পর বিনিয়োগকারীদের আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি। চার বছর পর গত বছর শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা আয় করলেও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। তবে চলতি অর্থবছরে বড় লোকসানে থাকলেও অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দিয়েছে।

৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ৩৪ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ১০ টাকার শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৭ টাকা ৬২ টাকা।

চতুর্থ স্থানে থাকা এইচ আর টেক্সটাইল লিমিটেডের দর ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১০৬ টাকা ২০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

পঞ্চম স্থানে থাকা কেডিএস অ্যাক্সেসরিজের দর বেড়েছে ৪ দশমিক ০১ শতাংশ।

ষষ্ঠ স্থানে থাকা সাভার রিফ্যাক্টরিজের লভ্যাংশ দেয়ার কোনো ইতিহাস নেই। এই কোম্পানির দর ৯ টাকা ৫০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ২৫৫ টাকা ৭০ পয়সা।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড ও আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।


দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায় দুই শতাধিক কোম্পানি

দর পতনের শীর্ষে রয়েছে জি কিউ বলপেন, বিডি ল্যাম্পস ও রহিমা ফুডের। তিনটি দুটি কোম্পানির দরই কমেছে ২ শতাংশ করে।

শীর্ষ তালিকায় ২ শতাংশ বা কাছাকাছি দর কমেছে কে অ্যান্ড কিউ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, লিবরা ইনফিউশন, সী পার্ল বীচ, রেনউইক যজ্ঞেশর, ইস্টার্ন ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের।

দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারিত থাকায় ১০ টাকার নিচের শেয়ারের দর এক দিনে ১০ পয়সার বেশি কমতে পারে না। ১০ থেকে ১৫ টাকার নিচের শেয়ার কমতে পারে ২০ পয়সা, ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকার নিচের শেয়ার কমতে পারে ৩০ পয়সা, ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকার নিচের শেয়ার কমতে পারে ৪০ পয়সা।

এভাবে দুই শরও বেশি কোম্পানির দর এই দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে।

সূচক কমাল যারা

সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ১০ পয়েন্ট সূচক কমেছে গ্রামীণফোনের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে এক দশমিক ১১ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমিয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড। কোম্পানির দর কমেছে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

ওয়ালটন হাইটেকের দর ১ দশমিক ১৩ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে ৫ দশমিক ১৮ পয়েন্ট।

এ ছাড়া রবি, বেক্সিমকো, আইসিবি, লাফার্জ হোলসিম, রেনাটা, তিতাস গ্যাস ও সামিট পাওয়ার দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৩১ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট।

সূচকে পয়েন্ট যোগ করল যারা

সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বাড়িয়েছে বার্জার পেইন্টস। কোম্পানিটির দর শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ দর বেড়েছে।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ০৩ পয়েন্ট।

ইসলামী ব্যাংক সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ৪৫ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।

এ ছাড়া সিটি ব্যাংক, পদ্মা অয়েল, কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ, স্কয়ার ফার্মা, ট্রাস্ট ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা ও এইচ আর টেক্সটাইল লিমিটেড সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।

সম্পর্কিত বিষয়:

×