স্বপ্নদল আয়োজিত স্থাপনাশিল্প দেখছেন বাবা ও মেয়ে
হিরোশিমার সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে স্থাপনাশিল্পটি। বোমার আঘাতে ঝলসে যাওয়া শরীর মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাদা কাপড়ে। ক্ষত-বিক্ষত মানুষটির হাতে শোভা পাচ্ছে রঙিন সারস। আর পদযুগলের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সাদা সারসগুলো নৃশংসতার বিপরীতে বলছে শান্তির কথা। এভাবেই স্থাপনাশিল্প, নাট্য প্রদর্শনী এবং পোস্টার ও ভিডিও প্রদর্শনীসহ নানা আনুষ্ঠানিকতায় হিরোশিমা দিবস পালন করেছে নাট্যদল স্বপ্নদল।
‘আর নয় হিরোশিমা, আর নয় নাগাসাকি, আর নয় যুদ্ধ’ স্লোগানে শনিবার শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকার জাপান দূতাবাস স্বপ্নদলের ‘হিরোশিমা দিবস ২০২২’ আয়োজনকে জাপান-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বর্ষপূর্তিতে জাপান-দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আয়োজন হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
হিরোশিমা-নাগাসাকির বিষাদময় ঘটনার ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলের লবিতে হিরোশিমা-নাগাসাকিভিত্তিক যুদ্ধবিরোধী পোস্টার-আলোকচিত্র-ভিডিও-ইন্সটলেশন আর্ট প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
এর বাইরে মিলনায়তনে ছিল যুদ্ধযন্ত্রণার প্রতীক জাপানী শিশু সাদাকো সাসাকি স্মরণে কাগজের সারস বিতরণ, যুদ্ধবিরোধী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য এবং স্বপ্নদলের ত্রিংশ শতাব্দী নামের প্রযোজনার ১১৭তম মঞ্চায়ন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ। সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক নাট্যজন ড. রশীদ হারুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বপ্নদলের প্রধান সম্পাদক জাহিদ রিপন।
বাদল সরকারের রচনা অবলম্বনে হিরোশিমা-নাগাসাকির বিয়োগান্তক ঘটনানির্ভর স্বপ্নদলের দর্শকনন্দিত যুদ্ধবিরোধী গবেষণাগার প্রযোজনা ত্রিংশ শতাব্দীর রূপান্তরসহ নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। শান্তির স্বপক্ষে উদ্বুদ্ধকরণ ও যুদ্ধবিরোধী প্রচারসহ ২১ বছর ধরে নিয়মিতভাবে নানা আনুষ্ঠানিকতায় পৃথিবীর একমাত্র নাট্যদল হিসেবে ‘হিরোশিমা দিবস’ পালন করে আসছে স্বপ্নদল।
যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ ‘ত্রিংশ শতাব্দী’। প্রযোজনাটিতে উঠে এসেছ পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা বিস্ফোরণের অপ্রত্যাশিত পরিণতি। এর সমান্তরালে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বসনিয়া-ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান-ভারত, ইরাকে আগ্রাসন, কুয়েত-তিউনিশিয়া-ইয়েমেন-সিরিয়া-তুরস্ক-মিয়ানমার-গুলশানে বর্বর হামলা, সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা সংখ্যালঘু নির্যাতন বা শিক্ষক লাঞ্ছনা প্রভৃতি প্রসঙ্গ।
নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবাজ-যুদ্ধাপরাধী-অশান্তিকামীদের স্বরূপ এবং তাদের কাজের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী বীভৎসতার চিত্র উদ্ঘাটিত হয়েছে নাটকটিতে। সভ্যতা ধ্বংসকারী মানবসৃষ্ট যুদ্ধ-গণহত্যা-অনাচারের বিপরীতে মানুষ হিসেবে বর্তমান কর্তব্য অনুধাবন এবং এক্ষেত্রে দর্শককে সম্পৃক্ত করা প্রযোজনাটির মূল উদ্দেশ্য।
প্রসঙ্গত, ত্রিংশ শতাব্দী প্রযোজনাটি ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে জাপানের প্রধান নাট্যোৎসব পৃথিবীখ্যাত ‘ফেস্টিভ্যাল/টোকিও ২০১৮’, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইউরোপের স্বনামখ্যাত নাট্যোৎসব ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা ২০১৫’, নয়াদিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি)-তে এশিয়ার বৃহত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ ভারতের রাষ্ট্রীয় নাট্যোৎসব ‘ভারত রঙ মহোৎসব ২০১৫’, ভারতের নানাস্থানে আমন্ত্রিত মঞ্চায়নসহ মোট ১১৬টি মঞ্চ প্রদর্শনীর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের মর্যাদাকে উজ্জ্বল করেছে।
নরসিংদীতে ৭ দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী ॥ স্টাফ রিপোর্টার নরসিংদী থেকে জানান, বাংলাদেশের আলোকিত জেলা নরসিংদীতে ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালী জাতির সকল অর্জন শিল্পসংস্কৃতির চর্চার হাল হকিকত সবার চোখের সামনে তুলে ধরতে জেলার কৃতী শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘মনরা পশিবে’ শীর্ষক ৭ দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে।
নরসিংদীর চারু শিল্প পর্ষদ আয়োজিত পৌর টাউন হলে শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চিত্রশিল্পী রোকেয়া সুলতানা প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন নরসিংদী সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা মিয়া, নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির শাহ প্রমুখ।
এ সময় নরসিংদীর চারু শিল্প পর্ষদের শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রদর্শনীতে মোট ৪০টি ছবি স্থান পায়। আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে বলে আয়োজকরা জানান।