বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাতিঘরে ‘বাংলার রক মেটাল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়
ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে এদেশের ব্যান্ডসঙ্গীত। গত শতকের ষাটের দশকে এই ভূখন্ড যাত্রা শুরু করেছিল ব্যান্ড মিউজিক। ব্যান্ডসঙ্গীতের সেই সময় থেকে বর্তমান সময়ের ইতিবৃত্ত উঠে এসেছে এবার বইয়ের পাতায়। প্রথমবারের মতো মলাটবন্দী হলো বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস ও ১৮০টি ব্যান্ডদলের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ বায়োগ্রাফি। যাতে ঠাঁই পেয়েছে পূর্ব পাকিস্তান আামলের ষাটের দশক থেকে বর্তমান বাংলাদেশ পর্যন্ত ছয় দশকের ব্যান্ডসঙ্গীতের পথচলার ইতিহাস এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত উল্লেযোগ্য সব দেশী ব্যান্ডদলের বয়োগ্রাফি। আর দেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের এসকল তথ্যের সম্মিলনে
মিলু আমান ও হক ফারুক লিখেছেন বাংলার রক মেটাল শিরোনামের গ্রন্থ। বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার। এদিন বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাতিঘরে এই প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
দেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের খ্যতিমান শিল্পীদের উপস্থিতিতে প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে বর্ণিল। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেনেসাঁর নকীব
খান, গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, ফিডব্যাকের লাবু রহমান, মাকসুদ ও ঢাকার মাকসুদুল হক, মাইলসের হামিন আহমেদ, ওয়ারফেজের শেখ মনিরুল আহমেদ টিপু এবং রকস্ট্রাটার আরশাদ আমীন। এছাড়া দেশের নবীন-প্রবীণ বিভিন্ন ব্যান্ডের মিউজিশিয়ান ও ব্যান্ড সঙ্গীতপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আজব প্রকাশের প্রকাশক সঙ্গীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার।
অতিথিরা বলেন, দেশের সঙ্গীত ভুবনকে সমৃদ্ধ করলেও রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি নেই ব্যান্ডসঙ্গীতের। অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত থাকেন এই ধারার শিল্পীরা। তাই ব্যান্ডসঙ্গীতের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
অনুভূতি প্রকাশে বইয়ের লেখক মিলু আমান বলেন, বাংলার রক মেটাল বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমাদের গর্বের ব্যান্ডসঙ্গীতের ইতিহাস সঠিকভাবে লিখিত হলো। এটি আমাদের ব্যান্ডসঙ্গীতের পূর্ণাঙ্গ এনসাইক্লোপিডিয়া হিসেবে কাজ করবে।
অনুভূতি প্রকাশে বইয়ের আরেক লেখক হক ফারুক আহমেদ বলেন, আমার গত বিশ বছরের সাধনায় ফসল হচ্ছে বাংলার রক মেটাল নামের বইটি। এই গ্রন্থটি দেশের ব্যান্ডসঙ্গীত নিয়ে নানা তথ্যের বিভ্রান্তি দূর করবে। ব্যান্ডসঙ্গীতের অনুরাগীরা এ বইয়ের মাঝে খুঁজে পাবেন তাদের আাগ্রহের অনুষঙ্গ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহমান ব্যান্ডসঙ্গীতের সঠিক ইতিহাস মেলে ধরা হয়েছে গ্রন্থটি।
তিনটি ভাগে সাজানো হয়েছে বইটি। প্রথমাংশে ষাটের দশক থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের পটভূমি, ইতিহাস, পথচলা ও নানা পরিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে ১৮০টি ব্যান্ডের বায়োগ্রাফি ও প্রোফাইল। এই প্রোফাইলগুলো সাজানো হয়েছে ব্যান্ডগুলোর জন্মসাল ক্রমান্বয়ে, পুরনো থেকে নতুন ব্যান্ড হিসেবে। দেশের বিখ্যাত ব্যান্ডদলগুলোর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে সম্ভাবনাময় নতুন ব্যান্ডদলের প্রোফাইল। প্রতিটি ব্যান্ডের এ্যালবাম ও গানের তালিকা ডিস্কোগ্রাফি আকারে সন্নিবেশ করা হয়েছে। আর তৃতীয় অংশে রয়েছে বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস এ্যাসোসিয়েশানের (বামবা) সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যান্ডের তালিকা।
প্রসঙ্গত, বইয়ের লেখকদ্বয়ের গত বিশ বছরের ব্যান্ড সংগীতবিষয়ক লেখালিখি, তথ্য সংগ্রহ, অনুসন্ধান, গবেষণা, রাতের পর রাত জেগে চুলচেরা বিশ্লেষণ, লেখা কাটাকুটি, সংযোজন-বিয়োজন আর সম্পাদনা শেষে বেরিয়েছে বইটি। প্রস্তুতির সম্পন্নের পর দেশের সব ব্যান্ডের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হয়। অভূতপূর্ব সাড়া মেলে ব্যান্ডের সবার কাছ থেকে। যাচাই-বাছাই শেষে তৈরি করা হয় ব্যান্ডগুলোর সঠিক বায়োগ্রাফি। এমনকি বর্তমানে যেসব ব্যান্ডের কোন অস্তিত্ব নেই সেগুলোরও তথ্য নেয়া হয় ব্যান্ডসংশ্লিষ্ট মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
বাংলার রক মেটাল প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা আজব প্রকাশ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ আহমেদ অংশু। ৪৬৪ পৃষ্ঠার এই বইটির মূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা।
বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত আমরা সূর্যমুখীর স্মরণসভা ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু জাতির পিতার হত্যায় দেশী ও বিদেশী আরও ষড়যন্ত্রকারী ছিল। তারা এখনও অন্তরালে। এখন সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যায় যেসব কুশীলব জড়িত ছিল একটা কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করে তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা সূর্যমুখীর আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকীতে স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
স্মরণসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। বিচার হতে কি কি হয়েছে সব আমরা জানি। বারবার বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পিছনে যে ষড়যন্ত্রকারী ছিল তাদের বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগের দিনে বাধা সৃষ্টি করতে ঢাবিতে বোমা হামলা চালানো হয়। এখন সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ট্যাঙ্কের পিছনে যারা ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে। একটি কমিশন গঠন করে তদন্ত করে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, বঙ্গবন্ধু তার ২৭ বছরের রাজনৈতিক একজন পরিপক্ব রাজনৈতিকে পরিণত হয়েছেন। তিনি এ বয়সে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশ স্বাধীন করেছেন। তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে আন্দোলন ত্বরান্বিত করেছেন। তার অভূতপূর্ণ নেতৃত্বের কারণে বিশ্ব নেতৃত্বের রোশানলে পরেন। তাকে হত্যা করতে বিভিন্ন কুশীলব কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু অন্তরালে দেশী-বিদেশী যে ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করেছেন তাদের একটি কমিশন গঠন করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ৭ নবেম্বরের সিপাহী বিপ্লবকে জাসদ এখন বলে এটা তাদের ঐতিহাসিক ভুল। কিন্তু তারা এই ভুল বুঝতে পারলেও আমাদের বঙ্গবন্ধু কই! ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় তাদেরও প্ররোচনা ছিল। জাতির পিতার হত্যায় সকল কুশীলবের বিচারের এখনই সময় এসেছে।