ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আলমগীর সাত্তার

দীর্ঘজীবী হোন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২২ মে ২০২২

দীর্ঘজীবী হোন খালেদা জিয়া

বর্তমান সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হওয়া উচিত যাতে বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘায়ু লাভ করেন। এতিমের অর্থ তছরুপের মামলায় আদালত কর্তৃক দেয়া দশ বছরের দণ্ডাদেশ তিনি ভোগ করছেন। ওই সাজার বোধ হয় আড়াই-তিন বছর পেরিয়েছে। তাঁকে আরও সাত বছর সাজা ভোগ করতে হবে। তাঁর কয়েকটি জš§ তারিখ আছে। তবু আমরা ধরে নিতে পারি তাঁর বয়স এখন ৭৫ বা ৭৬ হবে। সাজার মেয়াদ যখন শেষ হবে তখন তাঁর বয়স হবে ৮৩ বা ৮৪ বছর। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা আছে। ওসবের দু’একটায় আরও কিছুদিনের জন্য সাজা হতে পারে। আমি কোন আইনজ্ঞ নই। তাই বলতে পারব না খালেদা জিয়ার আরও সাজা হতে পারে কি-না! সাজা না হলেই ভাল। বেগম খালেদা জিয়া যথেষ্ট অসুস্থ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমান সাজার মেয়াদ যখন শেষ হবে তখন তিনি হুইল চেয়ারে বসেই চলাফেরা করবেন। বর্তমানেও তাই করছেন। তাঁর হাতে কোন জাদুদণ্ড নেই যে, ৮৪-৮৫ বছর বয়সে ঘরে বসে হুইল চেয়ারে থেকে তিনি বুদ্ধি দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করে জয়ী হয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। এমন চিন্তা করা বাতুলতা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমি বিশ্বাস করি, বেগম খালেদা জিয়া আপনি এখনও যথেষ্ট জনপ্রিয়। আপনার নাম ভাঙ্গিয়েই কিন্তু বিএনপি দলটি টিকে আছে। আপনার বিকল্প কি আপনার পুত্রধন? যিনি নিজেও একজন দণ্ডিত আসামি। তিনি এমন ক্ষণজš§া পুরুষ নন যে, এখান থেকে পাঁচ হাজার মাইল দূরে লন্ডনে বসে দলের পক্ষে সব সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। আপনার পুত্রধন সবার কাছে যুবরাজ বলে পরিচিত। তাকে আমার যাত্রাদলের যুবরাজ বলে মনে হয়। এই যুবরাজের কাছে রাজনীতির চেয়ে অর্থ-সম্পদই বড় কথা! বাপ ভাল না ভাইয়া-ভাইয়া ॥ সবচেয়ে ভাল রুপাইয়া। এটাই হলো যুবরাজ তারেক রহমানের জীবনের মূলমন্ত্র। ॥ দুই ॥ প্রত্যেকটা মানুষই চাঁদের মতো। চাঁদের একটা দিকই আমরা দেখতে পাই; অপর দিকটা দেখতে পাই না। ওই দিকটাকে বলা হয়, চাঁদের ‘ডার্ক সাইড’। আমাদের প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা ‘ডার্ক সাইট’ আছে। এই ‘ডার্ক সাইড’ আমরা অন্যদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব গোপন রাখতে চেষ্টা করি। মহিলাদের যে যতটা সুন্দরী, তার ‘ডার্ক সাইড’ না-কি ততটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। একমাত্র চিত্রনায়িকা পরিমণির কোন ‘ডার্ক-সাইড’ নেই বলে তিনি নিজ চরিত্রের সবটাই উš§ুক্ত করে দিয়েছেন। এ জন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। রাজনীতির কথা বলতে গিয়ে চিত্রনায়িকা পরিমণির কথা চলে এসেছে। আমরা আমাদের চরিত্রের ‘ডার্ক সাইড’ গোপন করতে গিয়ে অনেক মিথ্যা কথা বলি। পরিমণি মিথ্যা কথা কম বলেন। ॥ তিন ॥ আমি বলছিলাম, বেগম খালেদা জিয়ার কথা। তিনি চিকিৎসার নামে বিদেশে যেতে পারবেন, তাঁকে এমন আশ্বাসবাণী শুনিয়েছিলেন তাঁর কিছু পরামর্শদাতা। এ জন্য তিনি কষ্ট করে এভারকেয়ার হাসপাতালে অনেকদিন কাটিয়েছেন। বিএনপি দলীয় নেতারা প্রচার করেছেন, খালেদা জিয়া জীবন-মরণ সঙ্কটে। তাঁর পক্ষে বিদেশে গিয়ে যখন চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতি মিলল না, তখন তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে আর না থেকে গুলশানে নিজের বাসভবনে ফিরে এসেছেন। নিজ বাসভবনে ফিরে এসে শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও মানসিকভাবে অনেকটা ভাল আছেন। গুলশান বাসভবনে আপনজনদের মাঝে আছেন। ল্যাপটপ-স্মার্টফোনের বিভিন্ন এ্যাপস ব্যবহার করে লন্ডনে অবস্থানরত পুত্র, পুত্রবধূ, নাতনিদের সঙ্গে যখন খুশি কথা বলতে পারছেন। খালেদা জিয়ার হাঁটুতে ব্যথার রোগটি অনেক পুরনো। সৌদি আরবে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু রোগমুক্তি ঘটেনি। তিনি এক সময় প্রয়াত প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবকে নিয়ে জোটবদ্ধ হয়েছিলেন। তখন বিএনপি, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে এরশাদ সাহেব জোটবদ্ধ হয়েছিলেন পাঁচ দলীয় জোট নামে । ওই জোটবদ্ধ দল সভা-সমাবেশ করতে গেলে, মঞ্চের ওপর সিংহাসনের মতো একটি আসনে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার মতো বেগম খালেদা জিয়া বসতেন। জোটের শরিক দলের অন্য নেতারা চাকর-বাকরের মতো তাঁর পদতলে কার্পেটের ওপর বসতেন। এর অর্থ এরশাদ সাহেব বসতেন খালেদা জিয়ার পদতলে। এরশাদ সাহেব দীর্ঘকাল দেশের প্রেসিডেন্ট পদটি অলঙ্কৃত করেছিলেন। ম্যাডামের পদতলে বসতে গিয়ে তিনি নিজেকে খুব অপমানিত বোধ করলেন। তাই তিনি ওই জোট থেকে বেরিয়ে এলেন। তিনি ওই অপমানের কথা কোনদিন ভুলতে পারেননি। এছাড়া জনগণের বৃহত্তর আন্দোলনের কারণে যখন এরশাদ সাহেব পদত্যাগ করেন, তখন খালেদা জিয়া তাকে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই কারাগারে পাঠান। এরশাদ সাহেব দোষী প্রমাণিত না হয়েও পাঁচ বছরের কিছু বেশি সময় ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে কাটিয়েছিলেন। কারাগারে থাকাকালে এরশাদ সাহেব জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তাররা তাকে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসার সুপারিশ করেছিলেন। জিদ্দি ম্যাডাম তাতে রাজি হননি। এখন ওই জিদ্দি মহিলা দোষী প্রমাণিত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। তাতেও তিনি সন্তুষ্ট নন। সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডন যেতে হবে। খালেদা জিয়া খুব স্বল্প শিক্ষিতা মহিলা। তাই তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে, তিনি রাজসিংহাসনে বসবেন আর তাঁর পদতলে বসতে হবে শরিক দলের নেতাদের। অবশ্য তাঁর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে যারা আছেন, তাদের যে আত্মমর্যাদা বোধ আছে- আমার তা মনে হয় না। প্রয়াত এরশাদ সাহেব বিএনপি দলটি নিয়ে পরবর্তীকালে যে খেলাটি খেলেছেন, তা ছিল এক অর্থে ক্লাসিক্যাল। খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন বলে মনে করা যাক! তখন তিনি কাকে নিয়ে দল করবেন? কাকে বিশ্বাস করবেন? মেজর হাফিজ একজন সাহসী যোদ্ধা ছাড়াও ছিলেন একজন ভাল ফুটবল খেলোয়াড়। তিনি প্রায়ই অফসাইডে থেকে গোল করতেন। অফসাইডে থেকে গোল করার অভ্যাস এখনও তিনি ত্যাগ করেননি। জেনারেল মইন ইউ আহমেদ একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দু’বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তখন মেজর হাফিজ ফুটবলের চেয়েও রাজনীতির খেলাটা ভাল খেলেছিলেন। খালেদা জিয়া যখন কারারুদ্ধ হলেন, তখন মেজর হাফিজ দলীয় কিছু সমর্থককে নিয়ে বিএনপি দলটিই দখল করে বসলেন। কারামুক্ত হয়ে খালেদা জিয়াÑমেজর হাফিজ এবং বিএনপি দলের যে সব নেতা তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করলেন। খালেদা জিয়া যখন বুঝলেন, দলের এত নেতাকে বহিষ্কার করায় তাঁর দলটিই দুর্বল হয়ে পড়েছে, তখন তিনি বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনলেন। অবিশ্বাসের ফাটল তো আর কোন সুপার গ্লু দিয়ে আগের মতো জোড়া লাগানো যায় না। প্রখ্যাত একজন সাহিত্যিক এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একদিন কথা প্রসঙ্গে বললেন- তিনি তাঁরই ছাত্র, একই সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতাকে একদিন প্রশ্ন করলেন, সে কেন ছাত্রদল করেন? ছাত্রটি উত্তর দিল, স্যার, আমি ম্যাডামকে ভালবাসি। তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। ম্যাডাম এত সুন্দরী! সত্যি কথা যে বেগম জিয়া এক সময় সত্যিকারের সুন্দরী ছিলেন। এখন অসুস্থ এবং বৃদ্ধ হওয়ায় সে সৌন্দর্য আর নেই। উল্লিখিত ছাত্রদল নেতার মতো এমন অনুগত সমর্থকও আর নেই। বিখ্যাত নিউরো সার্জন সঞ্জয় গুপ্তসহ অনেক নিউরোলজিস্ট মনে করেন, বৃদ্ধ বয়সে একদম শরীরচর্চা না করলে এ্যামনেশিয়া অর্থাৎ স্মৃতিবিভ্রাট রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান সম্ভবত ৯৪ বছর বেঁচেছিলেন। তাঁর বয়স যখন ৯০ বছর তখন এ্যামনেশিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে তিনি মনে করতে পারতেন না যে, এক সময় তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমাদের যুদ্ধকালীন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকার সাহেব তীব্র না হলেও এ্যামনেশিয়া রোগে ভুগছেন। বেগম খালেদা জিয়া যদি আরও বিশ-পঁচিশ বছর বেঁচে থাকেন কিন্তু তাঁকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় অথবা হুইলচেয়ারে বসে চলাফেরা করতে হয়। অমন বৃদ্ধ বয়সে এ্যামনেশিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হয়ত মনেই করতে পারবেন না যে, তিনিই বেগম খালেদা জিয়া, যিনি তিন-তিনবার আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনটা যেন না হয়, তেমনটাই কামনা করি। ॥ চার ॥ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলব : তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আরও পাবে। এর কারণ, বাংলাদেশের আয়তন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধান-পাট, শাকসবজি সব কিছুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি এর আগেও লিখেছিÑ বঙ্গবন্ধুর কথা উঠলেই কিছু আমলা চোখে গ্লিসারিন লাগিয়ে অশ্রুপাত করেন। ওসব আমলাদের যেন তিনি তাঁর কাছে ঘেঁষতে না দেন। এসব আমলাদের আসল পরিচয় কি? এনারা কি রাজাকার না শান্তি কমিটির পরিবারের লোক? প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, অনেক মেগা প্রজেক্ট করার গতি কমিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়ে ভাল করেছেন। এবার দ্রব্যমূল্য কমানোর দিকে আরও বেশি নজর দিন। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনগণের মাথাপিছু বার্ষিক উপার্জনের প্রবৃদ্ধি ইত্যাদির জটিল সমীকরণ সাধারণ মানুষের বোধগম্যের বাইরে। বাজারদর সম্পর্কে বুঝতে হয় না। বাজারে গেলে আমরা তা হাড়ে হাড়ে টের পাই। লেখক : বীর প্রতীক, বৈমানিক (কিলোফ্লাইট)
×