ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম

উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং মনোজাগতিক জাগরণ

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২১ মে ২০২২

উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং মনোজাগতিক জাগরণ

জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে উন্নীত হয়েছে। টেনেটুনে পাস নয়, ‘এ গ্রেড’ পেয়েই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক- এই তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে হলে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে এক হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ৮২৪ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২.৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ শতাংশ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪.৮ শতাংশ। বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমায় নিঃসন্দেহে এটি একটি মাইলফলক। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তরণকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল আছে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সফল অর্থনীতি হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয়েছে ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশের রফতানি আয় মার্কিন ডলারের নিরিখে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে আজকের অবস্থানে পৌঁছতে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছে। পাকিস্তানী শাসকদের নির্মম শোষণ-বঞ্চনায় স্বাধীনতার পর মাইনাস ১৪ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল। দেশটির টিকে থাকা নিয়েই শঙ্কা ছিল অনেকের। সে সময় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও বড় পরাশক্তিগুলোর ধারণা হয়েছিল যে, সদ্যস্বাধীনতা পাওয়া বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না। হেনরি কিসিঞ্জারের নেতৃত্বাধীন এক কমিটি মনে করেছিল, এটি হবে আন্তর্জাতিক এক তলাবিহীন ঝুড়ি। এখানে যতই সাহায্য ঢালা হোক না কেন তা কোন কাজেই লাগবে না। দেশটিতে দ্রুতই দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেবে। ওই সময়ে সিআইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এত অল্প জায়গায় এত মানুষের বাস এবং এত দারিদ্র্যের কারণে দেশটি তার প্রতিবেশী এবং বিশ্বের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। মাত্র কয়েক কোটি টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল যে ছোট্ট দেশটি সেই দেশের বাজেট আজ পাঁচ লাখ কোটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আগামী বাজেট হয়ত ছয় লাখ কোটির বেশি হবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগেই উন্নয়ন আর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ এক বিস্ময়ের নাম। বাংলাদেশকে এখন অন্যদের জন্য রোল মডেলের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এক সময় যেসব দেশ বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ দিত তারাই এখন প্রশংসাবানে ভাসিয়ে ফেলছে। বলছে, এই বাংলাদেশ আর সেই আগের বাংলাদেশ নয়। গত এক যুগে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বদলে গেছে এর সব কিছুই। বিশ্বব্যাংক বলছে, অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক বেশিরভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়াকে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়েছে তো অনেক আগেই। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ এখন বাংলাদেশ। স্বপ্ন দেখছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে জায়গা করে নেয়ার। ধান, সবজি, মাছ, ফল উৎপাদনে বাংলাদেশে রীতিমতো বিপ্লব হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, স্যাটেলাইট, পরমাণু ও সাবমেরিন ক্লাবে যোগদান, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর তলদেশে টানেল ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, বিদ্যুত উৎপাদনে বিপ্লব, এলএনজি টার্মিনাল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের মতো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য এখন বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর কাছে রীতিমতো রহস্য। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সরল স্বীকারোক্তি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বখ্যাত জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট বলেছে, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য রহস্যের মতো। কারণ স্বাস্থ্যসেবায় কম বরাদ্দ, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও ব্যাপক দারিদ্র্য সত্ত্বেও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যতিক্রমীও। অতিসম্প্রতি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল-২০২১’ নামের রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। যেসব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ২৫তম অর্থনীতি হবে তার মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরাইল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নাইজিরিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন, ইরান এবং তাইওয়ান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সমুদ্র সম্পদের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। ব্লু ইকোনমির অপার সম্ভাবনা অব্যবহৃতই রয়ে গেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে সমুদ্র সম্পদ তথা সুনীল অর্থনীতি এক বিরাট ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বুকে ধারণ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, একটি জনবহুল ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূর এবং বৈষম্য কমানোকে সংযুক্ত করেছে তা প্রশংসনীয়। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন উদাহরণ দেয়ার মতো একটি দেশ বলেও মন্তব্য করেছে আইএমএফ। সরকারও পিছিয়ে পড়া ও অতিদরিদ্রদের জন্য সামাজিক কর্মসূচী খাতে অব্যাহতভাবে বাজেট বাড়িয়ে চলেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম- ডাব্লিউইএফের ‘ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স’-আইডিআই ২০১৮ র‌্যাংকিংয়ে দেখা যায়, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে (আইডিআই) ভারতের চেয়ে ২৮ ধাপ এবং পাকিস্তানের চেয়ে ১৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১০৩ দেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিচার করে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ডব্লিউইএফ। অর্থনীতির তিনটি মানদন্ড- ‘প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন’, ‘অন্তর্ভুক্তকরণ এবং আন্তঃপ্রজন্ম সমতা’, ‘প্রাকৃতিক ও আর্থিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা’র ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। অর্থনীতির অনেক সূচকেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ভাল করেছে। কোভিড পুরো পৃথিবীর হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। শুধু আদম সন্তানের শ্বাসতন্ত্রই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির হৃৎপি-কেও তছনছ করে দিয়েছে কোভিড নামের ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টানো অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস। কোভিডের ভয়াবহ আক্রমণের মধ্যেও উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ভাল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ২০২০ সালে কোভিডের মধ্যে ব্যাংক আমানত বেড়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক আমানত ১৩.৫ শতাংশ বেড়েছে। উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ একটি অনন্য অর্জন। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার যে উন্নয়ন দেখে আমরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই তার পেছনে রয়েছে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর শাসন, সীমাহীন শোষণ ও নির্দয়ভাবে সম্পদ লুণ্ঠনের অন্ধকার অধ্যায়। লাখ লাখ আদিবাসীকে জোর করে তাদের ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ করে, হত্যা-নির্যাতন করে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সম্পদশালী রাষ্টগুলোকে উপনিবেশ বানিয়ে, তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে, মানুষকে দাস বানিয়ে, দাস ব্যবসা করে, অন্যায্য-শোষণমূলক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্নীতিবাজ-চোরদের অবৈধ অর্থ নিজ দেশে জমা করার সুযোগ দিয়ে বিত্তশালী হয়েছে। বাংলাদেশ এর কোনটিই করেনি। বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে তা সততার সঙ্গে, ন্যায়ের পথে থেকে কষ্ট করে অর্জন করেছে। অর্জনের সূচনাটা ছিল ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের। চারদিকে প্রতিকূলতা। অর্থনীতির ভগ্নদশার পাশাপাশি ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশবিরোধী শক্তির অহর্নিশি ষড়যন্ত্র। শ্বাপদসঙ্কুল পরিবেশে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বিচক্ষণতার সঙ্গে এগোতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তৎকালীন শাসকদের আশকারা ও মদদে পাকিস্তান অক্টোপাসের মতো তার সব কয়টি কর্শিকা দিয়ে বাংলাদেশকে চেপে ধরেছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা ঝুঁকি নিয়ে, সাহস করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের রাহুমুক্ত না করলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়া দূরের কথা, জঙ্গীবাদে জর্জরিত আর ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে পাকিস্তানের মতো প্রায় অকার্যকর, ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। একটি প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তব সত্য হলো, কোন কিছু অর্জনের চেয়ে অর্জনকে রক্ষা ও সুসংহত করা কঠিন। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকালীন প্রস্তুতির জন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর সময় পাবে। এই সময়টুকু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণের মাধ্যমে উত্তরণকালীন কর্মপন্থা নির্ধারণ, সুসমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ও সংস্কার কর্মসূচী প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী যথাযথ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া, সহজে ব্যবসা সূচক অবস্থান উন্নতকরণ তথা ব্যবসাবান্ধব স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিস্থিতি তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, জনশক্তির উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে যথাযথ সক্ষমতাসহ নানা ক্ষেত্রে কার্যকর কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরী। সবার ওপরে জরুরী আমাদের নিজেদের জাগরণ। বাঙালী জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। অতি কষ্টার্জিত অর্জন কেউ যেন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নস্যাৎ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া। শারীরিক গঠন, ভাষা, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে মিল সত্ত্বেও বাঙালীর ধমনীতে রয়েছে অস্ট্রিক, মোঙ্গলীয়, দ্রাবিড়, আর্য, পাঠান, মোগল, ইরানী তথা বিচিত্র রক্তের স্রোতধারা। বাঙালী সমাজে ধর্মীয় দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সামাজিক কুসংস্কার, সঙ্কট, লোভ, দাসত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা বারবার আঘাত করেছে। বাঙালীর প্রতি অতল ভালবাসায় ও বাঙালীর সবটুকু কল্যাণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে একবারের জন্য পাওয়া জীবনের সব ব্যক্তিগত সাধ-আহ্লাদকে দুই পায়ে দলে কারাগারকে ঠিকানা করেছেন বঙ্গবন্ধু। পরিবারের সুখ-স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়েছেন অবলীলায়। জেল-জুলুম-অত্যাচার-নিপীড়ন সবই হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালীর একটি স্থায়ী নিবাস গড়তে। ফাঁসির রজ্জু মাথার ওপর ঝুলেছে, বুলেট তাড়া করেছে, কোন কিছুই বাংলা ও বাঙালীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর অদম্য ভালবাসার পথে বাধা হতে পারেনি। বাঙালীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ঠিকানা ও পরম আত্মীয় বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারা বিশ্বাসঘাতক বাঙালী। লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোঃ লিঃ
×