ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তবে আছে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অর্জন

ম্যাচ ড্র- সাগরিকায় পাঁচদিনের পরিশ্রম বিফলে

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২০ মে ২০২২

ম্যাচ ড্র- সাগরিকায় পাঁচদিনের পরিশ্রম বিফলে

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ আগের দিনই বোঝা যাচ্ছিল চট্টগ্রাম টেস্ট ড্রয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ ম্যাচের ৪ দিন শেষ হয়ে গেলেও মাত্র দুটি ইনিংস সম্পূর্ণ খেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম টেস্টের শেষদিন সেটাই সত্য হয়েছে অবশেষে। বাঁহাতি তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে কিছুটা শঙ্কার মধ্যে পড়লেও সফরকারী শ্রীলঙ্কা দিনেশ চান্দিমাল ও নিরোশান ডিকভেলার দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে পঞ্চম দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৬০ রান তুলে ফেলে। এরপর উভয় দলই ড্র মেনে নেয়। চট্টগ্রামে সর্বশেষ ৩ টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। অবশেষে এবার পরাজয় এড়িয়েছে। অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই ভেন্যুতে খেলা সর্বশেষ ৩ টেস্টই ড্র করল বাংলাদেশ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র হওয়াতে এখন মিরপুরে পরের টেস্টটি হবে সিরিজ নির্ধারণী। তবে এই ড্রয়ে চলমান আইসিসি বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে টানা ৩ ম্যাচ হারের পর অবশেষে ৪ পয়েন্ট অর্জন করলেন মুমিনুল হকরা। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ দল। আর তাই চতুর্থ দিন শেষেও যখন ২৯ রানে এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা, তখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পঞ্চম দিনে দারুণ কিছু করার। ২ উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান নিয়ে পঞ্চম দিন চাপের মধ্যেই নামে লঙ্কানরা। তারা প্রত্যয় জানিয়েছিল সারাদিন ব্যাটিং করার। সেই লক্ষ্যে তারা দ্রুতগতিতে রান তুলতে শুরু করে। বাংলাদেশী বোলাররা তাদের কথার সঙ্গে কাজের প্রমাণ রাখতে পারেননি দিনের শুরুতে। অনিয়ন্ত্রিত ও আলগা বোলিং করে বেধড়ক পিটুনি খেতে শুরু করেন তারা। আগের দিন পাওয়া আঘাতে এদিন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ছিলেন অনুপস্থিত। সৈয়দ খালেদ আহমেদ উজাড় হাতে রান বিলিয়েছেন। প্রথম এক ঘণ্টাতেই মাত্র ১৪ ওভারে লঙ্কানরা তাই ৬৭ রান তুলে ফেলে বিনা উইকেটে আর পেয়ে যায় লিড। অফস্পিনার নাঈম হাসান ও তাইজুলও অগোছাল ছিলেন। তবে নিজেকে ফিরে পান তাইজুল এবং তিনিই প্রথম সাফল্য এনে দেন। দিনের ১৫তম ওভারে তিনি সাজঘরে ফেরান ৪৩ বলে ৮ চার, ১ ছয়ে বিধ্বংসী কুশল মেন্ডিসকে বোল্ড করে। কুশল যেভাবে ব্যাট করছিলেন তা স্বাগতিকদের জন্য হয়ে উঠছিল ভয়ের ব্যাপার। কারণ দ্রুত বড় লিড পেয়ে গেলে উল্টো বাংলাদেশের সামনেই একটি ভাল লক্ষ্য ছেড়ে দিতে পারবে লঙ্কানরা। আর সেটা শেষদিনের পরের দুই সেশনে বিপদের কারণ হবে। তবে তাইজুলের আঘাতে নিজেদের ফিরে পায় বাংলাদেশ। ভেঙ্গে যায় দিমুথ করুনারতেœ ও কুশলের মধ্যে ৬৭ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। ৪ ওভার পরেই তাইজুল আবার দলকে সাফল্য পাইয়ে দেন। এবার এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ফেরেন কট এ্যান্ড বোল্ড হয়ে শূন্য রানে। প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন ম্যাথুস। ১৯৯ রান করে টেস্টে ১২ জন আউট হয়েছেন এবং ২ জন নট আউট ছিলেন। তবে এদের মধ্যে প্রথম ব্যাটার হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়ার নজির গড়েন ম্যাথুস। এতে নতুন করে উজ্জীবিত হয় বাংলাদেশ। তবে লাঞ্চের আগে আর বিপদ ঘটতে দেননি করুনারতেœ ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। প্রথম সেশনে ২ উইকেটে ৮৯ রান যোগ করে ৬০ রানের লিড পায় লঙ্কানরা। সেই লিডকে এগিয়ে নিতে থাকেন করুনারতেœ ও ধনঞ্জয়া। তবে অর্ধশতক হাঁকিয়েই বিদায় নেন করুনারতেœ। এবারও তাইজুল শিকারটা করেছেন। ১৩৮ বলে মাত্র ২ চারে করা ৫২ রান করা ধৈর্যশীল করুনারতেœ বিদায় নেন ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে ব্যাট চালাতে গিয়ে। ধনঞ্জয়াও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। তিনি ৬০ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৩৩ রানে সাকিব আল হাসানের শিকার হন। ১৬১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে লঙ্কানরা। তবে এরপর চান্দিমাল ও ডিকভেলা হতাশায় পুড়িয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। ৬ উইকেটেই ২০৫ রানে দলকে নিয়ে চা বিরতিতে যান তারা। ফলে বাংলাদেশের জেগে ওঠা স্বপ্নকে তারা গুঁড়িয়ে দিয়ে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। চা বিরতির পরও অবিচ্ছিন্ন থেকে ৯৯ রান যোগ করেন দুজন সপ্তম উইকেটে। ১৯২ রানের লিড পেয়ে যায় লঙ্কানরা। তখনও প্রায় ঘণ্টাখানেক বাকি ছিল ম্যাচের। শেষদিকে অবশ্য উইকেটরক্ষক লিটন দাস উঠে গেছেন। পরিবর্তে শেষ ৭ ওভার ১ বল কিপিং করেন নুরুল হাসান সোহান। ৬ উইকেটে শ্রীলঙ্কার ২৬০ রান হওয়ার পর উভয় দল ড্র মেনে নেয়। ডিকভেলা ২১তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৯৬ বলে ৬ চারে ৬১ রানে এবং চান্দিমাল ১৩৫ বলে ৪ চার, ১ ছয়ে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ঘরের মাটিতে লঙ্কানদের বিপক্ষে এ নিয়ে বাংলাদেশের খেলা ৯ টেস্টের ৩টি ড্র যার সবই চট্টগ্রামে। বাকি ৬টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। আর লঙ্কানদের বিপক্ষে সবমিলিয়ে ২৩ টেস্ট খেলে বাংলাদেশের এটি পঞ্চম ড্র, ১ জয়ও আছে। বাকি ম্যাচগুলো হেরেছে বাংলাদেশ।
×