ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮% যাচ্ছে জনগণের পকেট থেকে

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ১৩ মে ২০২২

স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮% যাচ্ছে জনগণের পকেট থেকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আর কিছুদিন পরেই ঘোষণা হতে যাচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। জানা গেছে, চলতি বছর সরকার প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। নতুন এই বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সম্ভাবনা সাপেক্ষে আসন্ন বাজেট কিছুট সঙ্কোচনমুখী হবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে সঙ্কোচনমুখী হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন ধরনের কাটছাঁট করা একেবারেই সমীচীন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বরং এ খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে এর বৃহত্তম অংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘স্বাস্থ্য বাজেটবিষয়ক অনলাইন জাতীয় সংলাপ’ অনুষ্ঠানে আলোচকরা এ দাবি জানান। এ সময় তারা সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ এ্যাকাউন্টসের ষষ্ঠ প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৮ শতাংশ আসছে নাগরিকদের পকেট থেকে, আর সরকারের কাছ থেকে আসছে ২৩ শতাংশ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বাবদ ব্যয় বাড়ানো গেলে নাগরিকদের ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো সম্ভব বলেও মনে করছেন তারা। অনলাইন আলোচনায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে অংশ নেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডাঃ হাবিবে মিল্লাত, কুমিল্লা-৭ আসনের ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত, সাতক্ষীরা-৩ আসনের ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের ডাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ এবং ঢাকা-১৯ আসনের এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের কনভেনর ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী, বিআইডিএসয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। অনুষ্ঠানে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। আলোচনা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের থিমেটিক গ্রুপের সভাপতি ড. রুমানা হক। এ সময় মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে ড. আতিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গতানুগতিকভাবে মোট বাজেটের ৫-৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সচরাচর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মোট স্বাস্থ্য বরাদ্দের ২৫ শতাংশের মতো বরাদ্দ দেয়া হয়। এই অনুপাত আসন্ন অর্থবছরে ৩০ শতাংশ এবং মধ্যমেয়াদে ৩৫-৪০ শতাংশ করার পক্ষে মত দেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমানে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের জন্য যে বরাদ্দ আছে তা তিনগুণ করা গেলে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ে নাগরিকদের নিজস্ব খরচ ৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫৮ শতাংশের নিচে নেয়া সম্ভব। মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা বিশেষত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সর্বজনের জন্য সহজলভ্য করতে একটি জাতীয় কমিশন গঠন করার কথা ভাবা যায় উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী বলেন, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের আয়ের ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা বাবদ ব্যয় করতে বাধ্য হয়। তাই এ জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যবীমা কর্মসূচী চালু করার উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও অল্প সময়ের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের জন্য করোনা টিকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সব স্তরের মানুষের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের সদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। এ দক্ষতা পুরো স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য কার্যক্রমে বজায় রাখা সম্ভব হলে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আমি করি। একই সঙ্গে ডাঃ রুহুল হক ও ডাঃ হাবিবে মিল্লাত তাদের বক্তব্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়াতে এ খাতের বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য মোঃ আব্দুল আজিজ এমপি দেশে ৪৯৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাহিদামতো স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ধাপে ধাপে এগুলোর আধুনিকায়নের পরামর্শ দেন। এ সময় ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত তার আলোচনায় দেশের বাজারে যে ওষুধ পাওয়া যায় তার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জাতীয় বাজেটে সার্বজনীন স্বাস্থ্যবীমার জন্য বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান জানান।
×